বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট ভবনের কাছে ট্যাংক মোতায়েন করেছে সামরিক বাহিনী। কলম্বোতে কারফিউ জারির পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিও বেড়ে গেছে। তবে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে। তারা এখনো প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও প্রধানমন্ত্রীর অফিস তাদের দখলে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এখনো তার পদত্যাগপত্র জমা না দেয়া দেশটি সাংবিধানিক সঙ্কটের মুখে রয়েছে। তিনি মালদ্বীপ থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে সিঙ্গাপুর রওনা হয়ে গেছেন।
পার্লামেন্টের নিরাপত্তা জোরদার করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এসব স্তরে।
সৌদি এয়ারলাইন্স যোগে সিঙ্গাপুর গেলেন গোতাবায়া: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানযোগে সিঙ্গাপুর গেছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মালদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুর যান। আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, তিনি সিঙ্গাপুর থেকে সৌদি আরব যাবেন।
খবরে বলা হয়, বুধবার ভোর রাতে তিনি শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে মালদ্বীপ যান। মালদ্বীপের স্পিকার ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ আলোচনা করে তাকে দেশ থেকে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এদিকে শ্রীলঙ্কার জনসাধারণ তার পদত্যাগপত্রের জন্য অপেক্ষা করছেন। কারো কারো মতে, সিঙ্গাপুর পৌঁছে তিনি তার পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করবেন।
কলম্বোতে কারফিউ জারি: কলম্বোতে কারফিউ জারি করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। আগামীকাল শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে। শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে এই কারফিউ জারি করা হলো। এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এখনো তার পদত্যাগপত্র দাখিল করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব: পদত্যাগ করতে সম্মত হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত পদত্যাগ না করায় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দল।
শত শত বিক্ষোভকারী এখনো তার পদত্যাগের দাবিতে তার অফিস দখল করে রেখেছে। গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র বৃহস্পতিবার সকালেও পাওয়া যায়নি। এ প্রেক্ষাপটে বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরো বেড়েছে। বিক্ষোভ তীব্র হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিক্রমাসিংহে স্থানীয় সময় দুপুর (৬.৩০ জিএমটি) থেকে আগামীকাল সকাল ৫.০০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছেন বলে তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গত বুধবার জারি করা কারফিউ আজ ভোরে শেষ হয়। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত একজন নিহত এবং ৮৪ জন আহত হয়েছে।
গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র পাওয়া যায়নি: গত বুধবারই তার স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দাখিল করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি পদত্যাগপত্র দাখিল না করলে শ্রীলঙ্কা নতুন সাংবিধানিক সঙ্কটে পড়ে যাবে।
কথা ছিল, গোতাবায়া দেশ ছাড়ার আগেই তার পদত্যাগপত্র দাখিল করবেন। কিন্তু সেটা না করে তিনি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে যান। এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা রনিল বিক্রামাসিংহেকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছে। তারা তার পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে তার অফিস দখল করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা এর আগে প্রেসিডেন্টের বাসভবন দখল করেছে। তারা বিক্রমাসিংহের বাসভবনে অগ্নিসংযোগও করেছে।
প্রাইভেট বিমানের জন্য অপেক্ষা, মালদ্বীপেই আছেন গোতাবায়া! শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সম্ভবত এখনো মালদ্বীপেই অবস্থান করছেন। তিনি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে মালদ্বীপ রওনা হননি। তিনি কোনো প্রাইভেট বিমান চাচ্ছেন। ওই প্রাইভেট বিমানেই তিনি মালদ্বীপ ছেড়ে সিঙ্গাপুর যেতে চাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
মালদ্বীপের সূত্র জানিয়েছে, রাজাপাকসে ও তার স্ত্রী লোমা রাজাপাকসে এবং তাদের সাথে থাকা দুই দেহরক্ষী বুধবার রাতে এসকিউ৪৩৭ বিমানযোগে সিঙ্গাপুর রওনা হবেন বলে কথা ছিল। কিন্তু তারা নিরাপত্তাগত কারণে বিমানে চড়েননি। একটি সূত্র জানায়, মালদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য এখন একটি প্রাইভেট বিমান নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এদিকে শ্রীলঙ্কার জন্য নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার জন্য পার্লামেন্টের স্পিকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের জন্য স্পিকার মহিন্দা যাপা আবেবর্ধনেকে অনুরোধ করেছেন।
মালদ্বীপে বিক্ষোভ: এদিকে মালদ্বীপে রাজাপাকসের উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ওঠেছে। দেশটির বিরোধী দলের নেতা দুনিয়া মামুন (সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমের মেয়ে) গোতাবায়কে নিরাপদে পালিয়ে আসার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা রাজাপাকসের এখানে উপস্থিতি নিয়ে অবশ্যই উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, গোতাবায়ার উচিত ছিল দেশে থেকেই তার কাজের পরিণাম ভোগ করা। আমি বলছি না যে তিনি তার সব কাজের জন্য দায়ী। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটে তার ভূমিকা ছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য আইনের আওতায় দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি কাউকে দোষী বলতেও নারাজ। অবশ্য মালদ্বীপের কেউ কেউ গোতাবায়াকে আশ্রয় দেয়ার পক্ষেও কথা বলেছেন। তারা বলছেন, সাবেক সরকারের আমলে তাদেরও শ্রীলঙ্কায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সূত্র : ডেইলি মিরর শ্রীলঙ্কা, কলম্বো গ্যাজেট আলজাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য