শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা
ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও সক্রিয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা দলের নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার (১৬ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, বন্যা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জালানির দাম বৃদ্ধির কথা তুলে বলেন, খুব খারাপ সময়, খুব ঝুঁকিপূর্ণ সময়, এই সময়ে ঐক্যের বিকল্প নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ কিছু করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের কর্মীদের হুঁশিয়ার থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আজকে কত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন, সারা বিশ্বে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া, সেই প্রতিক্রিয়ায় আজকে জ্বালানির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। শ্রীলংকার কথা বাদ দিলাম, আজকে অবাক লাগে ইংল্যান্ড-আমেরিকাতে মূল্যস্ফীতির হার ৯১.১। সর্বত্রই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশকে এই কঠিন জমিনে অগ্রসর হতে হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা এখন সারা রাত জেগে থাকে বাংলাদেশের মানুষ যাতে ঘুমুতে পারে। এই পর্যন্ত পরিস্থিতি তিনি সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। এই পর্যন্ত বন্যা, করোনাভাইরাস, যুদ্ধের প্রভাব সেটাও তিনি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। শক্ত করে ধরে আছেন। তাকে শক্তি দিতে হবে, শক্তি দিতে হবে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থেকে। কথায় কথায় নিজেরা আন্তঃকলহে জড়াবেন না। খুব খারাপ সময়, খুব ঝুঁকিপূর্ণ সময়, এই সময়ে ঐক্যের বিকল্প নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ কিছু করতে পারবে না।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকের এই দিন শুধু শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস নয়, এই দিন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বন্দি দিবস। এই দিন শেখ হাসিনাকে বন্দি করে আমাদের বিকাশমান গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল। রাজনীতির অনেকেই জেলে গেছে, আমাদের নেত্রী বন্দি হয়েছে, ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। কিন্তু প্রথম বন্দি হয় শেখ হাসিনা। তারা এসে বিরোধী দলকেই প্রথম বন্দি করে। বিরোধী দলের নেতা প্রথম বন্দি হয়, সরকারি দলের নেতা তখনও বন্দি হয়নি। কী দুর্ব্যবহার ড. ওয়াজেদের সঙ্গে, কী দুর্ব্যবহার ঢাকা কোর্টের সামনে। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে সামান্যতম শ্রদ্ধা তারা দেখায়নি। সেদিন যদি এই দেশের রাজনীতিকদের একটা অংশ ওই জরুরি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা না করতোÍ তাহলে বাংলাদেশের ওয়ান-ইলাভেন টিকতে পারতো না। এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হতো। অনেক রাজনীতিক সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে যোগসাজশ করে রাজনীতিকে মাইনাস ফর্মুলায় নিয়ে গেছে। আজকে আমি বলবো, আমাদের শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। চলার পথে শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। একবার যে বিশ্বাসঘাতক, বারে বারে সে বিশ্বাসঘাতক।
এ সময় বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি বলে আমাদের পতনের নাকি সাইরেন বাজে। কোথা থেকে শুনলেন সাইরেনটা? কোথায় শুনলেন? রাস্তায় যখন গাড়ি চলে ওই সাইরেন শুনেছেন? কী সাইরেন শুনেছেন? শুনবেন, শুনতে পাবেন আপনাদের বিদায়ের ঘণ্টার সাইরেন। নেতিবাচক রাজনীতি আপনাদেরকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে, আপনাদেরই বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে। খেলা হবে, খেলা হবে, রাজনীতির মাঠে খেলা হবে। নির্বাচনের মাঠে খেলা হবে। আসুন, খেলায় আসুন, নির্বাচন আর রাজনীতির মাঠে খেলায় আসুন। আগুন নিয়ে খেলবেন না, আমরা প্রতিহত করবো। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে সেই আগুনের খেলা প্রতিরোধ করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। ১/১১ এর ষড়যন্ত্রকারীরা এখন সক্রিয়। বিদেশিদের সঙ্গে আঁতাত করছে। বিএনপি জানে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই তারা সেই ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে। কোনো অবস্থাতেই এটা হতে দেওয়া হবে না। আর কোনও অনির্বাচিত সরকারকে আসতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনও আছে। তারা আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা মানতে চায় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হবে, এদেশ এগিয়ে যাবে। এই জন্য তাদের আওয়ামী লীগের প্রতি ভীতি আছে। আজ আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে কোনও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার। তাদের ষড়যন্ত্রকে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে প্রতিহত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।