বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করলেন বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এয়ার ফোর্স ওয়ানযোগে শনিবার সৌদি আরব ত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি প্রথম এ অঞ্চলে চার দিনের সফর শেষ করলেন। খবর এএফপির। সৌদি রাষ্ট্র পরিচালিত চ্যানেল আল-একবারিয়া জানায়, জেদ্দাহ বিমান বন্দরে তাকে বিদায় জানান মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সাল।
যে লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন বাইডেন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বহুল আলোচিত মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু হয়েছে গত বুধবার। চার দিনের এ সফরে তিনি এখন সৌদি আরবে আছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে সৃষ্ট জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠতে জ্বালানির খোঁজ ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যেই তাঁর এ সফর। তিনি ইসরায়েল থেকে এ সফর শুরু করেছেন। এরপর গেছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে। সর্বশেষ সৌদি আরবে। বাইডেনের এ সফর সামনে রেখে হোয়াইট হাউসের তোড়জোড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ তোড়জোড় ছিল মূলত ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যেই। বাইডেন তাঁর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সফল হয়েছেন। ইসরায়েলের সব ধরনের উড়োজাহাজের জন্য নিজেদের আকাশসীমা উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। দৃশ্যত ইসরায়েলের প্রতি উদার মনোভাবের অংশ হিসেবে শুক্রবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উড়োজাহাজ চলাচলে সৌদির এ সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ মন্তব্য করে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের সঙ্গে অনেক মাস ধরে প্রেসিডেন্টের অবিচল ও নীতিগত কূটনীতির ফল, যা তাঁর সফরে চূড়ান্ত পরিণতি পেল। এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ইসরায়েল সফরে এসে পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন বাইডেন। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেন দুই দেশের নেতারা। বিবৃতিতে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে নিজেদের অভিন্ন অবস্থানের কথা তুলে ধরেন তাঁরা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকাতে জাতীয় শক্তির সম্ভাব্য সব বিষয় ব্যবহার করবে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে চুক্তির শর্ত মেনে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন। সৌদি সফরের আগে শুক্রবার বাইডেন ফিলিস্তিন সফর করেছেন। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করলেও কোনো বড় কূটনৈতিক অগ্রগতি হয়নি। বাইডেন সেখানে একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। বাইডেনের জেরুজালেম সফরের সময় বেথলেহেম ও রামাল্লায় বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনিরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বাইডেনের ফিলিস্তিনি নীতির সমালোচনা করেন। বাইডেন-লাপিদের যৌথ বিবৃতিতে অঞ্চলটিতে শান্তি ফেরাতে দুই রাষ্ট্র গঠনকে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে ওয়াশিংটন। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিন নীতি থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেননি বাইডেন।
মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওএস বলছে, প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে থেকে অনেকটা চুপিসারেই বাইডেন প্রশাসন লোহিত সাগরের দুটি কৌশলগত দ্বীপ মিসরের কাছ থেকে সৌদিকে হস্তান্তরের জন্য মধ্যস্থতা করেছে। সৌদি আরব, ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তিতেও নীরবে মধ্যস্থতা করে যাচ্ছে দেশটি। সফল হলে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এটি প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের একাধিক সূত্র এক্সিওএসকে জানিয়েছে, বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে তাঁরা সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার রোডম্যাপ নিয়ে কাজ করেন। এটাই ছিল তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? এর উত্তর হতে পারে, বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্ব ও উৎসাহ বোঝানো। বাইডেনের এ সফরের মাধ্যমে হোয়াইট হাউস বোঝাতে চায়, ইসরায়েল ও আরব বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি, তাতে তারা সহায়তা করে চলেছে। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আব্রাহাম অ্যাকর্ড বা আব্রাহাম চুক্তি করেছিলেন। এ চুক্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে চারটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। সে চুক্তির ধারাবাহিকতা রক্ষা করছেন বাইডেন, সেটাই তুলে ধরতে চান তিনি। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, বাইডেনের সৌদি সফরের পেছনে দুটি নতুন কারণ রয়েছে। প্রথমটি হলো, ইউক্রেনে যুদ্ধ ও এর কারণে তেলের বাজারে সৃষ্ট অস্থিরতা এড়াতে বাইডেনের সৌদি সাহায্যের প্রয়োজন। দ্বিতীয় কারণটি হলো, বাইডেনের প্রতি ইসরায়েলের চাওয়া, তিনি যেন আব্রাহাম চুক্তির (যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি) স্বার্থে মোহম্মদ বিন সালমান এবং সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেন। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে হোয়াইট হাউসের এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের এবারের থিম হচ্ছে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার রোডম্যাপ। তবে এ বিষয়ে খুব বেশি বিস্তারিত তথ্য হোয়াইট হাউস দেয়নি। হোয়াইট হাউস জানায়, বাইডেনের সফরের আগে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে তারা এ ধরনের কিছু করার চেষ্টা করছে। চুক্তির বিষয়ে বাইডেন ইসরায়েল ও সৌদি নেতাদের সঙ্গে সফরে আলোচনা করবেন। হোয়াইট হাউস বলছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যেকোনো রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সময় লাগবে। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অন্য আরেকটি সূত্র এ বিষয়ে বলেছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তির প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন হতে পারে। হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক প্রসারিত ও গভীর করার জন্য সহায়তা করছেন।
ইসরায়েলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি বাইডেনের সফরের সময় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে বড় ধরনের অগ্রগতির আশা করেন না। তবে সৌদি আকাশসীমা ব্যবহার করে ভারত ও চীনে যাতায়াতের অনুমতিসংক্রান্ত চুক্তির খুব কাছাকাছি তাঁরা।
সৌদি প্রেস এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের শুরুর দিকে সৌদি যুবরাজ মোহম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন, তাঁরা ইসরায়েলকে শত্রু হিসেবে দেখেন না; বরং অভিন্ন বিভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় সম্ভাব্য মিত্র হিসেবে দেখেন।
স¤প্রতি ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা কমিটির এক শুনানিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ বলেছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ‘দ্য মিডল ইস্ট এয়ার ডিফেন্স’ নামের একটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। বাইডেনের সফর এ উদ্যোগ আরেকটু এগিয়ে নেবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও তার ছায়া রাষ্ট্রগুলো থেকে ড্রোন, রকেট ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিরোধ করা যাবে। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে রাডার, সেন্সর ও প্রতিরক্ষা অস্ত্রের বিশেষ নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যাতে আক্রমণ হলে আগাম সতর্কতা পাওয়া যায়। গান্টজ বলেন, ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে ইরানের বেশ কিছু আক্রমণ ঠেকানো হয়েছে। বাইডেনের সৌদি আরব সফর নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাসোগির হত্যাকা-ের পেছনে যুবরাজ সালমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করেন মার্কিন গোয়েন্দারা। খাসোগির হত্যাকা- নিয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল, সেই সম্পর্ক ঠিক করতে সৌদি আরব সফর করছেন বাইডেন।
জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় জামাল খাসোগি হত্যাকা-সহ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই অভিযোগে তিনি সৌদিকে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় থেকে একঘরে করতে উদ্যোগ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শান্তিতে নোবেল জয়ী ইয়েমেনের অধিকারকর্মী তাওয়াক্কোল কারমান এখন বাইডেনের সৌদি সফরের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি ত্যাগ করেছেন বাইডেন।’ ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউয়ের নির্বাহী পরিচালক রাহ লিয়া হুইটসন বাইডেনের এ সফরের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা বাইডেনের নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ। এর আগে বাইডেন প্রশাসনও সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল। তবে এখন গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ বিবেচনায় দেশটির ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। কারণ, বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজার এখন অস্থির।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com