বিএনপি না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিএনপি ও সমমনা কিছু দল নির্বাচনে আসবে না জানতে পেয়েছেন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমরাও মনে করি, বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে আমাদের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশ্য সফল হবে না। নির্বাচন হয়তো আমরা করবো।’ গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) বিকালে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে সিইসি এ কথা বলেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য অনেক ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। অনেক সমঝোতার প্রয়োজন পড়ে। আমাদের পক্ষ থেকে আইন ও বিধির আলোকে প্রস্তুতিগুলো নিচ্ছি।’ নির্বাচন নিয়ে চলমান সংকটের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে সংশয় দেখা দিয়েছে যে একটি বড় অংশ নির্বাচনে আসতে চাচ্ছে না বা আসবে না বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছি। আপনারাও দাবি করেছিলেনÍ সব দলের অংশগ্রহণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বড় কথা হচ্ছেÍদেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলো বড় আকারে অংশগ্রহণ করবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে জানতে পেরেছিÍজাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাদের নিজস্ব কিছু কর্মসূচি আছেÍনির্বাচনকালীন সরকার থাকতে হবে। এ রকম কিছু পরিবর্তন না হলে তারা নির্বাচনে আসবে না। এটাও কিন্তু একটি অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। একটি সংশয় সৃষ্টি করেছে।’
নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরাও মনে করি, বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে আমাদের যে উদ্দেশ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা সেটা হয়তো সফল হবে না। নির্বাচন হয়তো আমরা করবো। আবার বিএনপি যেভাবে নির্বাচন করতে চাচ্ছে, সেটা যদি অন্যান্য দল বিশেষ করে শাসক দলের সঙ্গে বসে সুরাহা করতে পারে, একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে সেই ঐকমত্যের ভিত্তিকে নির্বাচন করতে কোনও বাধা নেই। সেই প্রতিশ্রুতিটি আমরা এখনও পাচ্ছি না। ওই অবস্থাটি এখনও আসেনি। এখনও একটি সংশয়, দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছি যেÍআল্টিমেটলি বিএনপি কি নির্বাচনে আসছে? না ওই অবস্থাটি সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে হয়তো একটি অবস্থান সৃষ্টি করবে। তারপর একটি নির্বাচন হবে। সেটা যাই হোক, তা এখনও অনিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে যেটা করছি, আহ্বান করছি। আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছিÍতারা যেন নির্বাচনে আসে। যেকোনও উপায়ে আমাদের এই নির্বাচনে আসে। তাদের রাজনৈতিক কৌশল যদি ভিন্ন হয় সেক্ষেত্রে আমাদের কোনও মন্তব্য নেই। তার পক্ষে-বিপক্ষে আমাদের কোনও অবস্থান নেই। রাজনৈতিক দলের নিজস্ব স্বাধীনতা আছে। তারা তাদের প্রজ্ঞা অনুযায়ী যেকোনও কৌশল বা কর্মসূচি হাতে নিতে পারে।’
খেলাফত মজলিসের নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ নির্বাচন করা, যেসব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাদের সঙ্গে আমরা সংলাপ করতে চাই। আপনারাও সংলাপে সাড়া দিয়েছেন। আশা করি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আপনাদের মাধ্যমে সব দলকে বলবোÍ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্বমূলক করতে। গণতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তিতে বাস্তবার্থে সংসদ হয়, যা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠিত হবে।’ এর আগে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আনতে সংবিধানে সংশোধন লাগবে। সেটা বড় কথা নয়, সবই সম্ভব, যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়। মেজর পলিটিক্যাল প্লেয়ার্স বা পলিটিক্যাল পার্টিস যেকোনও ইস্যুতে সংবিধান কোনও বাধা না। জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে। বিরোধী দল যেটা চাইছে, সরকারি দল যা বলছে, তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য বসা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। বিএনপি ও তার সঙ্গে সমমনা দু’চারটি দল আছে। আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করা। আমি যেটা মনে করি, সরকারি দল ও বিরোধী দল বসতো এবং ৫-৭টা মিটিং করতো, তাহলে সমস্যাটা সমাধান করতে পারতো।’