আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত উত্তর বঙ্গের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এবার জেলায় আমের ফলন কম হলেও নায্য দাম পেয়ে খুশি আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) কানসাটের আম বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আম্রপালি আর কম দামে বিক্রি হচ্ছে আশ্বিনা। বাজারে আম্রপালি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত। আশ্বিনা আম বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ফজলি আম বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা মণ হিসেবে। তবে এই বাজারে ল্যাংড়া, ক্ষিরশাপাতসহ গুটি জাতের আমের তেমন একটা দেখা মেলেনি।
আব্দুর রাজ্জাক নামের এক আম চাষি বলেন, ‘মৌসুমের প্রথম দিকে তীব্র দাবদাহের কারণে অনেক গাছ থেকে আমের গুটি ঝড়ে গেছে। এছাড়াও বড় গাছগুলোতে মুকুল ঝড়ে পড়ে। ফলে আমের ফলন কম হয়েছে। তবে যতটুকু আম বাজারে আনতে পেরেছি তাতে আমি আমের ন্যায্য দাম পেয়েছি। আমি খুশি।’
সেতাউর রহমান নামের আরেক আম চাষি বলেন; ‘পাঁচ বছর পর এবার আমের বাজার চাঙ্গা। বিগত বছরগুলো সর্বোচ্চ ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত ফজলি আম বিক্রি করেছি। এবার ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মণ দরে ফজলি আম বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ফ্রুড ব্যাগের আমগুলো অন্য আমের তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
মাইনুল ইসলাম এক আম বাগানি বলেন, ‘৪০ কেজিতে মণ হলেও কানসাটের আম বাজারে ৫০ কেজিতে মণ নিচ্ছেন আড়তদাররা। এমনও হয়েছে ৫২ কেজিতে মণ নেওয়ার পরেও হয়রানি করে আড়তদাররা। এমন করে চলতে থাকলে সামনের বছরগুলোতে ৬০ কেজিতে মণ নিবে আড়তদারেরা। তারা একটি সংগঠন করে ভীত শক্ত করে আমাদের ঠকাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে একাধিকবার গিয়েও এ বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি।’
কানসাট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, ‘আমরা চাষিদের কাছ থেকে ৫০ কিংবা ৫২ কেজিতে আম কিনি না। বাইরের জেলার ব্যাপারিরা এসব ওজনে আম কেনেন। আমরাও চাই স্থানীয় প্রশাসন একটি ওজন নির্ধারণ করে দিক, সে অনুযায়ী আমরা আম কিনবো।’
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। চাঁপাইনববাগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হচ্ছে। এবার মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ১৫ মেট্রিক টন।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘গাছের যে উৎপাদনের শক্তি ক্ষয় হয়ে গেছে। ফলে পুরনো আমের গাছগুলোতে মুকুল কম হওয়ায় আমের ফলনও কম হয়েছে। কিন্তু ১০ থেকে ১২ বছরের আম গাছগুলোতে আম বেশি হয়েছে। এবার যেসব আম উৎপাদন হয়েছে, তা ছোট গাছের বাগান থেকে হয়েছে।’