শ্রাবণের তৃতীয় দিনেও দেখা নেই বর্ষার। বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির পানি পড়ছে জমিতে। প্রখর রোদে চৌচির হয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত। বর্ষার পানির অপেক্ষায় চাতই পাখির মতো অধির আগ্রহে পথ চেয়ে আছে দিনাজপুর জেলার আমন চাষিরা। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সকালে জেলার হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার বিভিন্ন ধানের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ধুধু মাঠ, তীব্র গরমে মাঠের মাটি হাড্ডির মতো শক্ত হয়ে গেছে। মাটিতে কোন রস নেই, প্রায় ধানা জমি রৌদ্রতেজে ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। অথচ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে দিনাজপুরে বর্ষার ভরা মৌসুম থাকে। মাঠে বর্ষার পানিতে থৈথৈ করে, আর তাতে ভাসতে থাকে আমন চাষিদের স্বপ্ন। কৃষকেরা ব্যস্ত হয়ে উঠে জমি চাষ করতে। দোগাছি চারা তুলে জমিতে চারা লাগানো প্রায় শেষের দিকে হতো। কিন্তু এবারের আমন মৌসুমের চিত্র আলাদা। গত দুই সপ্তাহ ধরে দিনাজপুর জেলায় বয়ছে মৃদু খরতা। তাপের তীব্রতা জনজীবন অতিষ্ঠ, মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে হাঁসফাঁস। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মাঠে ইরি ধান চাষের মতো সেলো মেশিন দ্বারা পানি সেচের ব্যবস্থা করছেন আমন চাষিরা। হিলি জালালপুর গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, জীবনে এমন ওয়েদার কখনও মুই দেখুনি? এ্যাঙ্কা সময় মাঠত হামার পানিতে থৈথৈ করে। এবার ক্যাম্বা বর্ষার দেখা নাই, পানি না হলে ক্যাঙ্কা করে মানুষ আবাদ করবি। খুবি চিন্তায় আছি মুই, কতবেনে পানি হবে আর জমি চাষ করমু? হিলির বোয়ালদাড় গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, আমন ধান চাষ করতে পানি কিনতে হয় না। তাই প্রতিবছর আমন মৌসুমে আমি পুরো জমিতে ধান চাষ করি। ইরি ধান ১০ বিঘা লাগাই আর আমন ধান ১৪ বিঘাতে লাগাই। কিন্তু এবার যে কি করবো বলতে পারছি না। এখনও বর্ষার কোন ভাব ভাল দেখছি না। পানি সেচ দিয়ে আবাদ করলে পড়তা করতে পারবো না। হিলির সাতনি গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা বলেন, এই সময় প্রতি বছর আমার জমিতে বর্ষার পানি জমে থাকতো। পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি তৈরি করতাম। এবার তো বর্ষা নাই, সব জমি শুকে আছে, কবে বৃষ্টি হবে আর কখন আমন ধান লাগাবো? এবিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমন ধান মুলত প্রায় কৃষকেরা দোগাছি চারা লাগিয়ে চাষ করে থাকে। আমরা মাঠ ঘুরে দেখছি প্রায় মাঠের দোগাছি চারাগুলো এখনও ভাল আছে। আগামী আরও এক সপ্তাহ ভাল থাকবে এসব চারা। আশা করছি এর মধ্যে যদি বৃষ্টির পানি হয়ে থাকে তাহলে চারার কোন ক্ষতি হবে না। যেহেতু বৃষ্টি নেই সেহেতু আমরা কৃষকদের পানি সেচের ব্যবস্থা করে জমি চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি।