সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০২:১৫ পূর্বাহ্ন

অপরিহার্য নামাজ

সানজিদা কুররাতাইন:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২

ইসলামের রুকন পাঁচটি। নামাজ তার মধ্যে অন্যতম। একজন মুসলিমের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। কুরআন পাকে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি ৮২ বার সালাত শব্দ উল্লেখ করে নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তাই প্রিয়নবী সা: নামাজকে ঈমানের পর স্থান দিয়েছেন। রাসূল সা:-কে যখন কাউসার দানের সুসংবাদ দেয়া হলো তখন তাকে ওই একই সূরায় বলা হলো, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি করুন।’ (সূরা কাউসার-০২) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, ‘আর নামাজ কায়েম করো, জাকাত দান করো ও নামাজে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।’ (সূরা বাকারা-৪৩)
‘তোমরা সালাত কায়েম করো ও জাকাত দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য অগ্রে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে।’ (সূরা বাকারা-১১০) আবার, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে ও আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সূরা ফাতির-২৯)
মনোযোগ যেকোনো কাজে পরিতৃপ্তি অর্জন করার সবচেয়ে বড় নিয়ামক। আর মনোযোগসহকারে নামাজ আদায় করা সফলতা লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ওই সব ঈমানদার সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে খুশু-খুজুর সাথে আদায় করে।’ (সূরা মুমিনুন : ১-২)
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে, নামাজের সব কিছু ঠিকঠাকভাবে আদায় করলে মর্যাদাসহকারে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে। ‘যারা নিজেদের সালাতের হিফাজত করে, এরাই আল্লাহর জান্নাতে মর্যাদাসহকারে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মা’আরিজ : ৩৪-৩৫) ‘যারা তাদের সালাতসমূহের হিফাজতকারী, মূলত এরাই হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী ও সেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে।’ (সূরা মুমিনুন : ৯-১১)
কিন্তু বর্তমানে দেখা যায়, আমরা সালাতের ক্ষেত্রেই সব চেয়ে বেশি উদাসীন। সব কিছু করার সময় থাকলেও নামাজ আদায় করার জন্য আমাদের যেন মোটেও সময় মেলে না। একটি দিনে একদম বেশি হলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে নামাজ আদায় করতে, মাঝে মধ্যে তো আরো কম লাগে কিন্তু এই সামান্য সময়ও আমরা আল্লাহ তায়ালাকে দিতে চাই না। কিন্তু মুসলিম হিসেবে আমাদের ওপর নামাজ ফরজ।
আবার আরেকটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে, কোনো লোক দেখানো নয়- নামাজ আদায় করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও তাঁর স্মরণের জন্য। এটি আল্লাহ তায়ালারই নির্দেশ। তিনি বলেছেন, ‘নামাজ আদায় করো আমার স্মরণে’। (সূরা ত্ব-হা-১৪)
তিনি আরো বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো সন্ধ্যায় ও প্রভাতে এবং অপরাহ্নে ও জোহরের সময়। আকাশম-লী ও পৃথিবীতে সব প্রশংসা তো তারই।’ (সূরা রুম : ১৭-১৮)
উপরের আয়াতে দেখা যায়, নামাজের সঠিক সময়ও আল্লাহ তায়ালা আমাদের নির্দেশ করে দিয়েছেন। আর তাঁর নির্দেশ মাত্রই কল্যাণময়!
এবার ফেরা যাক হাদিসের দিকে। যেখানে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। তাদের বয়স ১০ বছর হওয়ার পর নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-৪৯৫)
আমাদের একটি বিষয়ে ধারণা পরিষ্কার রাখতে হবে তা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সা: চন্দ্র বছর অনুযায়ী একজন মানুষের ওপর নামাজের নির্দেশ দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। আর চন্দ্র বছরের সাথে যদি সৌর বছরের তুলনা করি তাহলে দেখা যায়, সৌর বছরে একজন মানুষের যখন সাত বছর হয় ঠিক তখন একজন ব্যক্তি চন্দ্র বছরের হিসাবে প্রায় ৯-এর খাতায় পড়ে গেছে। তাহলে দেখা গেল সাত বছর বয়সে একজন ব্যক্তির ওপর নামাজের আদেশ কখনো চাপ নয় বরং এটিই উপযুক্ত সময়। আর সে হিসাবে এখানেই পরিষ্কার যে, রাসূল সা:-এর নির্ধারিত বয়স কখনো সৌর নয় বরং চন্দ্র মাস অনুযায়ী হবে।
আমরা ছোট থেকেই শিশুদের এই পার্থিব জীবনের উন্নতির জন্য শিক্ষা দেই। কিন্তু কখনো কি ওদের বলেছি যে, তোমাকে নামাজ পড়তে হবে! তোমাকে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হতে হবে! তোমাকে বিচার দিবসে বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে হবে! কখনো বলেছি এগুলো? কিন্তু দেখুন হাদিসে কী এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস-৫০৯৪)
আবার আমারা দেখে থাকি একটি শিশু যখন বুঝতে শেখে তার আশেপাশের ভালো-খারাপ জিনিসকে তখন আমরা তাকে ভালো-খারাপের তফাৎ না শিখিয়ে, ভালোর মধ্যে সর্বোত্তম ভালো কী তা না শিখিয়েই পার্থিব শিক্ষার পেছনে ঠেলে দেই। দুনিয়াবি লেখাপড়ার কারণে তার পক্ষে আর নামাজ বা কুরআন কিছুই শেখা হয় না। কিন্তু সাহাবিরা কি বলেছেন দেখেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: বলেন, ‘সন্তান যখন ডান ও বাঁ পার্থক্য করতে শেখে, তখন তাকে নামাজ শেখাও’। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস-৩৫০৪) কিন্তু বর্তমান সমাজে করা হচ্ছেন ঠিক এর বিপরীত কিছু কাজ। যা মুসলিম উম্মাহকে ধীরে ধীরে অধঃপতন ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সময় মতো নামাজ পড়া এং তার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত জীবনের রুটিন কি আমরা তৈরি করি? নাকি মিথ্যা এই দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতেই আমাদের সময় শেষ! যেখানে মুসলিম উম্মাহর উচিত ছিল নামাজ পড়ে তারপর সময় করে কাজ করা কিন্তু সেখানে আমরা করছি এর ঠিক উল্টোটা। আমরা আগে কাজ করছি। এরপর সময় পেলে নামাজ পড়ছি, সময় না পেলে ওই ওয়াক্তের নামাজ বাদ! আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমুয়া-১০)
আল্লাহ তায়ালার এই আদেশ না মানার ফলে দিন দিন আমাদের নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন এত দ্রুত হচ্ছে যা আমরা অনুভবও করতে পারছি না। বিচার দিবসে যেখানে সবার আগে নামাজের জন্য আগে প্রশ্ন করা হবে, সেখানে নামাজ নিয়েই আমাদের যত অবহেলা। যদি নামাজের হিসাবে ত্রুটিবিচ্যুতি না পাওয়া যায় তাহলে অন্যগুলোকেও সঠিক বলে ধরা হবে। আবদুুল্লাহ ইবনে কুরত রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেয়া হবে। যদি নামাজ ঠিক থাকে তবে অন্যান্য আমলও সঠিক বলে প্রমাণ হবে। আর যদি নামাজের হিসাবে গরমিল হয়, অন্যান্য আমলও ত্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে।’ (তিরমিজি-১:২৪৫ পৃষ্ঠা) আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন ও হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে খুশু-খুজুর সাথে আদায় করার তাওফিক দান করুন, আমিন। লেখক : শিক্ষার্থী , ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com