শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি রাসূল (সা.)-এর সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় শপথবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে—ড. রেজাউল করিম চৌদ্দগ্রামে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ১৫ চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান: ফরাসউদ্দিন নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক হামাসের অভিযানে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় গাজানীতির প্রতিবাদে বাইডেন প্রশাসনের ইহুদি কর্মকর্তার লিলির পদত্যাগ

বাঘ বাড়াতে নেওয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। যদিও ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বয়সের কারণে মারা গেছে কয়েকটি। একই সঙ্গে শিকারি ও পাচারকারী চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বাঘের চামড়াসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। তবে গত দু-তিন বছরে কয়েক দফায় সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বাঘের দেখা পেয়েছেন। আবার সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়েও এসেছে বাঘ। একই সঙ্গে বনবিভাগের সদস্যরা বনের বিভিন্ন অংশে বাঘের উপস্থিতি টের পেয়েছেন। এ থেকে অনুমান করা হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকালয়ে বাঘ আসার অর্থ বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি নয়। সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পরিবেশবাদীদের দাবি, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরাসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে হুমকির মুখে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তারা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। বনবিভাগ বাঘের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে পারেনি। নিরাপদ করা গেলেই বাঘের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে।
বনবিভাগ বলছে, সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণে সরকারিভাবে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাঘ বাড়বে। বাঘ দিবস উপলক্ষে নেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে রবার্ট হনড্রেকিসের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। ১৯৮২ সালে মার্গারেট স্যালটার জরিপে ৪২৫টি, ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপে ৪৩০-৪৫০টি, ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি রয়েছে বলে জানায় বনবিভাগ। ১৯৯৩ সালে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপে ধনবাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান। ২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টিতে। হঠাৎ সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০ থেকে ১০৬ হওয়ায় বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ শুরু হয়। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৪টিতে।
বনবিভাগ সূত্র আরও জানায়, ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে ১০টি, স্থানীয়রা পিটিয়ে মেরেছে ১৪টি। ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে একটি মারা যায় এবং বাকি ২৫টি বাঘ শিকারিরা হত্যা করে।
সুন্দরবন করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জাগো নিউজকে বলেন, বাঘ একটি নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে চলাচল করে। যখন বাঘের বয়স হয়ে যায় তখন অন্য বাঘ তাকে তাড়িয়ে দেয়। তখন সে আরেক এলাকায় চলে যায়। সেখান থেকেও তাকে তাড়িয়ে দিলে একপর্যায়ে লোকালয়ে আসে। তবে বর্তমানে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে বাঘের উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বাগেরহাট জেলা কমিটির আহ্বায়ক নুর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ২০ বছর আগে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। এখন আছে মাত্র ১১৪টি। সেখান থেকেও কয়েকটি মারা গেছে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, বাঘের আবাসস্থল নিরাপদ না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বাঘ কমেছে। সুন্দরবনের পাশে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্পকারখানাসহ সুন্দরবন বিধ্বংসী সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. শিউলী রাণী সূত্রধর জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য শিকারি দমন ও বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত করা দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মধু সংগ্রহকারী, গোলপাতা সংগ্রহকারী, মাছশিকারিরা অবাধে সুন্দরবনের গহীনে প্রবেশ করছে। ফলে বাঘের সঙ্গে মানুষের শত্রুতাও বাড়ছে। একই সঙ্গে বাঘের শান্তিময় পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। এসব মানুষের জন্য বিকল্প পেশার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাঘ লোকালয়ে আসে না। খাদ্য সংকট, সুন্দরবনে অনেক বেশি ঘন গাছ, বনের কোনো কোনো অংশ ফাঁকা হয়ে যাওয়া, বয়স বৃদ্ধির কারণে খাদ্য শিকারে সমস্যা ও প্রজননকালে বাঘ লোকালয়ে চলে আসতে পারে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা, বয়স ও লিঙ্গ অনুপাতে সুন্দরবনের কম বাঘসম্পন্ন এলাকায় স্থানান্তর, বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন ও মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্য ব্যাধি নির্ণয় ও সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় নাইলনের রশির বেষ্টনী তৈরি করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাঘ এবং তার শিকার প্রাণী যাতে নিরাপদে থাকতে পারে এজন্য সুন্দরবনের ৫২ ভাগ এখন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। লোকালয়ে আসা বাঘ নিরাপদে বনে ফেরাতেও ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে এর সুফলও পাওয়া গেছে। এখন বাঘসহ বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এলে স্থানীয়রা বনবিভাগকে জানায়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com