পাবনার চাটমোহরের খন্দকার আবদুল বারী নিজে ফুটবল খেলেছেন। খেলোয়াড় কোটায় তার চাকরি হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে। বড় মাপের কোনো ফুটবলার না হতে পারলেও সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট খন্দকার আবদুস সোয়াদকে নিয়ে। তিনি ছেলেকে বড় ফুটবলার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তার বড় ছেলে ছিলেন ব্যাডমিন্টনের পাগল। যে কারণে ছোট ছেলে সোয়াদও ঝুঁকে পড়লো ব্যাডমিন্টনে। সে ছেলেই এখন দেশসেরা শাটলার। ৩৭ তম জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে যখন সোয়াদ ও আল আমিন ঝুমার যখন ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন তখনই নিশ্চিত হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় এই প্রতিযোগিতা পাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন। দেখার ছিল সেই নতুন চ্যাম্পিয়ন কে। ফাইনালের ভাগ্য ঝুঁকলো সোয়াদের দিকে, তিনি এক প্রকার সহজেই প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে নাম লেখালেন নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে।
ছেলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া ম্যাচটি কোর্টের পাশে থেকেই দেখলেন খন্দকার আবদুল বারী। ম্যাচের পর দলের এক অফিসিয়াল তার হাত ধরে মিডিয়ার সামনে এনে পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘এই হলেন সোয়াদের বাবা।’ স্বাভাবিকভাবেই মিডিয়ার ফোকাস পড়লো তার দিকেও। বাবা-ছেলেকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে ছবিও তুললেন তারা। ‘আমি সৈয়দপুর রেলওয়ে ফুটবল দলে খেলতাম। বিভাগীয় পর্যায়ে খেলেছি, রাজশাহী ও পাবনাতে। তখন খেলোয়াড় কোটায় আমার চাকরি হলো রেলওয়েতে। আমি নিজে যেহেতু খেলোয়াড়, সেহেতু তাকে ফুটবল খেলোয়াড় বানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ীর সামনে শীতকালীন ব্যাডমিন্টন খেলা হতো, সেখানে আমার বড় ছেলে খেলতো। ছোট ছেলেও তার সঙ্গে ব্যাডমন্টিন খেলতো। সোয়াদ জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দুইবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায়। তারপর পাবনা জেলা দলে অনূর্ধ্ব-১৫ তে দিলাম’-বলছিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সোয়াদের বাবা আবদুল বারী।
ড্যাফোডিলস ইউনিভার্সিটির স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র সোয়াদ চুক্তিতে খেলেছেন বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম অংশগ্রহণে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সোয়াদ বলছিলেন, ‘আমি হারতে হারতে শিখেছি। অনেক হেরেছি। বাংলাদেশ গেমসে খেলেছিলাম, তৃতীয় হয়েছিলাম।’
এই যে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হলেন অনেক সিনিয়র ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা থাকার পরও, সেটা কিভাবে সম্ভব হলো? ‘অনেকদিন (তিন বছর) জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হয়নি। তো আমার তিন বছরের প্রস্তুতি ছিল, ভাল প্রস্তুতিই বলতে হবে। কোর্টে নিজের সেরাটা দিয়েছি, সফল হয়েছি। আমার খুব ভাল লাগছে। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলবো। অনেক লম্বা পথ ছিল। পথ অতিক্রম করতে পেরেছি’ – বলছিলেন খন্দকার আবদুস সোয়াদ।
কিভাবে ব্যাডমিন্টন খেলায় আসলেন সেই গল্পও শোনালেন খন্দকার আবদুস সোয়াদ, ‘বাসার পাশেই খেলতাম। খেলতে খেলতে স্কুল পর্যায়ে যাওয়া। স্কুলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তারপর সপ্তম শ্রেণী থেকে ইনডোরে অনুশীলন শুরু করি।’ এখন তো আপনি জাতীয় দল গঠন হলে প্রথমবারের মতো দেশের জার্সিতে খেলবেন। জাতীয় দল নিয়ে যদি কিছু বলতেন। ‘আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। মানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো রেজাল্ট করতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই অনুশীলন করছি’-বলছিলেন সোয়াদ। আপনি অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছেন। বলছিলেন অনেক ম্যাচ হেরেছেনও। সেই হারার ঘটনাগুলো যদি একটু বলতেন যে কিভাবে নিজেকে হারের ট্র্যাক থেকে নিজেকে বিজয়ের মঞ্চে আনলেন? সোয়াদ বলছিলেন ‘আমি সামার চ্যাম্পিয়নশিপে অনেক হেরেছি। তৃতীয় রাউন্ডেও যেতে পারিনি। আমাদের অনেক ভালো খেলোয়াড় আছেন। যে কারণে ফাইট দিতে পারতাম না। আমার মনে মধ্যে জিদ কাজ করতো যে, আমিও একটি এভাবে অন্যদের হারাবো।’
এখন আপনার লক্ষ্য কি? ‘আমি আগেই বলেছি, এখন আমরা লক্ষ্য হলো জাতীয় দলে সুযোগ পেলে দেশের জন্য ভালো খেলা। দেশের জন্য ভালো ফলাফল করা। নিজের সর্বোচ্চটা দেবো’ – বলছিলেন নতুন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সোয়াদ।