স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার আজমতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে। তার অপসারণ চেয়ে শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আজমতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। শুরু থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্র-ছাত্রীতে পরিপূর্ণ থাকলেও এখন সেখানে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। এছাড়াও কলেজের অধ্যক্ষ মো. এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের বোর্ড নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত আদায়, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর, গণশুনানীসহ চলছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আন্দোলনের নানা কর্মসূচী। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছে, যে কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ। অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কোন কোন শিক্ষক চলে যাচ্ছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। তিন মাস ধরে নেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। আজমতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী মিনহাজ বলেন, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নবীন বরণ, এছাড়া রাষ্ট্রীয় যে সকল অনুষ্ঠান, এগুলোর জন্য আমাদের কাছ থেকে ঠিকই টাকা নিচ্ছে। কিন্তু করোনার পর আজও পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন অনুষ্ঠানই হয়নি। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, যারা গরীব শিক্ষার্থী তারা সময় মত পরীক্ষার ফি না দিতে পারলে ওনি তাদের পরীক্ষার হল থেকে বের করে দিতেন। প্রতিষ্ঠানের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী সিফাত খান বলেন, অধ্যক্ষের কোন অনিয়মের ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে তিনি ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দিতেন। এছাড়া তাকে বিভিন্নভাবে পুলিশি হয়রানী করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। শিক্ষার্থী কনিকা বলেন, কলেজে ঠিক মতো ক্লাস হয় না। আমরা পরীক্ষা দিবো কিভাবে? আজমতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবক স্থানীয় মো. আফজাল হোসেন বলেন, এ অজপাড়া গায়ে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য অধ্যক্ষ এনায়েত হোসেনকে অপসারন করা অবশ্যই জরুরী। স্থানীয় আরেক অভিভাবক যোবায়ের হোসেন বলেন, ওনার মতো শিক্ষককে শিক্ষক বলে আমি সমগ্র শিক্ষক জাতিকে অপমান করতে চাই না। কলঙ্কিত করতে চাই না। ওনার বিরুদ্ধে এতো বেশি অভিযোগ যা বলে শেষ করা যাবে না। তাই তিনি স্থানীয়ভাবে এই অধ্যক্ষের বহিষ্কার চান। আজমতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবক সদস্য আবু তৈয়ব আকন্দ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির একজন অভিভাবক সদস্য হওয়ার কারণে হিসাব কমিটির প্রধান ছিলাম আমি। আমাকে ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছে। আমি তাতে সহযোগীতা না করায়, আমাকে অভিভাবক সদস্য পদ থেকে সরানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছে। আজমতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক আমিনুল ইসলাম শেখ বলেন, ফরম ফিলাপ বাবদ বোর্ড ফি এখানে ১৭৭০ টাকা হলেও অধ্যক্ষ আদায় করেছেন ২৫০০-৩০০০ টাকা। এ ব্যাপারে আমরা কোন কথা বললে আমাদের শিক্ষকদের তিনি কোন পাত্তাই দেন না। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জহিরুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষের মনের মত না হলেই তিনি শিক্ষকদের দমক দেন। করেন অকথ্য ভাষায় গালাগাল। সিনিয়র শিক্ষক পৌরনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা যখন সকালে আসি এবং ছুটি শেষে বাড়ি যাই তখন অধ্যক্ষকে না দেখলেও পরদিন সকালে এসে ঠিকই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর পাই। তিনি আরো বলেন, কলেজের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে কমিটি নিয়ে। যে কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। নিজের পদোন্নতির জন্যও এই অধ্যক্ষকে টাকা দিতে হয়েছে। তাছাড়া গত তিন মাস ধরে বন্ধ শিক্ষকদের বেতন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তিনি এই অধ্যক্ষের সঠিক বিচার দাবি করেন। তবে জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের করা লিখিত অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো. এনায়েত হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা শুনেছেন সবই মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর-ই-জান্নাত বলেন, অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি। তারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করেছেন। সেগুলো যাচাই-বাচাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে জানান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, স্বেচ্ছাচারিতার সত্যতা পেয়েছে জেলা শিক্ষা বিভাগ। আরও অধিকতর তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।