শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন

ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

মোবাইল নম্বরে বিকাশ, নগদ কিংবা রকেট অ্যাকাউন্ট সচল রয়েছে; পাশাপাশি ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড রয়েছে— এমন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের টার্গেট করতো একটি প্রতারক চক্র। বিকাশ আ্যকাউন্ট থাকা ব্যক্তির পর পর তিনবার ভুল পাসওয়ার্ড দিলে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। এ সুযোগে প্রতারক চক্র ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সিভিএন জেনে নিয়ে ভুক্তভোগীকে পাঠানো ওটিপি ব্যবহার করে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে থাকা সর্বোচ্চ টাকা প্রতারক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়। এভাবে গত ৫ থেকে ৬ ধরে ধরে প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক ভুক্তভোগীর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রায় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের মূলহোতা মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি প্রতারক চক্র বিকাশ, নগদ কিংবা রকেটের অফিসের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এমন একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি অভিযান পরিচালনা করে গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার খোকনের নেতৃত্বে ৩ থেকে ৪ সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের বিকাশ, নগদ বা রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রের সকল সদস্যের সম্মিলিত প্রয়াসে বিকাশ, নগদ বা রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার কাজটি তারা বিভিন্ন ধাপে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে করতো।
সিআইডি বলছে, প্রতারক চক্রটি কয়েকটি ধাপে প্রতারণার কাজটি সম্পন্ন করতো। প্রথম ধাপে প্রতারক বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভিকটিমকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করার জন্য বলে। আর আপডেট না করলে একাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানায়। দ্বিতীয় ধাপে প্রতারক ভিকটিমের ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্টটিতে তিন বারের বেশি ভুল পাসওয়ার্ড দেয়। এতে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। তৃতীয় ধাপে প্রতারক ভিকটিমকে আবারও জানায়, তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং একাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়েছে। তবে এই ব্লককৃত টাকা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব বলেও প্রলোভন দেখায়। এর জন্য প্রতারক ভিকটিমের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর এবং সিভিএন জানতে চায়।
ভিকটিম এসব তথ্য সরবরাহ করলে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল নম্বরে একটা ঙঞচ কোড সম্বলিত একটি ম্যাসেজ যায়। ভিকটিম ম্যাসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারক জানতে চায়। কোডটি প্রতারক ভিকটিমের কাছ থেকে পাওয়ার পর ভিকটিমের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা প্রতারক তার নিজের বিকাশ আ্যকাউন্টে ট্রান্সফার করে। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পর পরই তারা তাদের ব্যবহৃত সকল আইডেন্টিটি গোপন করে রাখে। গ্রেফতার ব্যক্তি এ পর্যন্ত সে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে প্রায় ১ কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর আরও বলেন, গ্রেফতার খোকন ‘ইটস খোকন ব্রো’ এবং ‘ইটস খোকন ব্রো ০২‘ নামের দু’টি ফেসবুক আইডি ছিল। এসব আইডি থেকে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতো সে। তারপর তাদের কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। পরে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে সে তার প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করে। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যক্তিদের সে মূলত তার শিকারে পরিণত করে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com