ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, সাবেক এমপি ডা:দ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, অপশাসন ও অব্যবস্থাপনায় হতাশাগ্রস্ত জাতি সৎ, যোগ্য ও আদর্শিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে অনুভব করছে। একটি কল্যাণকর কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছে সবাই। তাই প্রত্যাশিত নেতৃত্ব গঠনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের লক্ষ্যে সংগ্রামী অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের ২০২২ সেশনের দ্বিতীয় সাধারণ অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমানের পরিচালনায় অধিবেশনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও আবদুল জব্বার। কার্যকরী পরিষদের উদ্বোধনী ঘোষণা করেন ২২৪তম শহীদ হাবিবুল্লাহ’র পিতা নিয়ামত আলী। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ইসলামী আন্দোলন গড়ে ওঠে ও বিজয় লাভ করে ত্যাগের ওপর। এটি একটি চলমান ধারা। তবে অবশ্যই সে ত্যাগ হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। যদিও ত্যাগ নিয়ে আত্মতুষ্টি আল্লাহ পছন্দ করেন না। বহু বাতিল মত, পথ ও আদর্শের জন্য অনেকেই ত্যাগ স্বীকার করেন। কিন্তু আদর্শহীন ও সুমহান আদর্শের ধারকদের ত্যাগের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট। শুধু একটি ক্ষেত্রে নয় বরং আমাদের পথচলা, চালচলন, বুদ্ধিমত্তা, নেতৃত্ব, কর্মকা- ও আদর্শের বহিঃপ্রকাশে অবশ্যই অন্যদের থেকে পার্থক্য থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের মধ্যে বড়ত্ব জাহির থাকবে না এবং প্রতিটি শ্রেণি পেশার মানুষই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য সুস্পষ্ট এবং সফলতার জন্য সেই লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে জাতি শঙ্কিত ও হতাশাগ্রস্ত। কিন্তু ছাত্রশিবির সেই যুবকদের কাফেলা যারা আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখে যেকোনো চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করার সাহস রাখে। সুতরাং হতাশাগ্রস্ত জাতিকে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা উপহার দিতে ছাত্রশিবিরকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সমাজ পরিবর্তনের মূল দায়িত্ব ছাত্রশিবিরকেই গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্য রাসূল সা.-এর আদর্শকে পূর্ণাঙ্গভাবে গ্রহণ করতে হবে। সমাজ বা রাষ্ট্র পরিবর্তনের আগে মানুষকে পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য ছাত্রশিবিরের প্রতিটি জনশক্তিকে দাঈ’র ভূমিকা পালন করতে হবে। পড়াশুনা ও আকর্ষণীয় চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
গতানুগতিক নয় বরং কৌশলী ও হৃদয়গ্রাহী পন্থায় দাওয়াতি কাজ করতে হবে যাতে মানুষের কলিজায় স্পর্শ করে। সামগ্রিক বিজয়ের জন্য সাংগঠনিক মজবুতি অর্জন করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে সেক্টরভিত্তিক জনশক্তি তৈরির টার্গেট নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, দেশ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে ছাত্রশিবির তার অগ্রযাত্রা যেকোনো মূল্যে অব্যাহত রাখবে ইনশাআল্লাহ।
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিন বলেন, জাতি স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করলেও নানামুখি সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়নি। এত বছর পরেও জাতির মধ্যে আজ আদর্শ ও নেতৃত্বের সংকট প্রকট। এ অবস্থা পরিবর্তনে ব্যাপক দাওয়াতি কর্মকা- চালাতে হবে। সাহস, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা ও হৃদয়ের প্রশস্ততা দিয়ে এমন নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করতে হবে যেন সমাজের মানুষ আমাদের গ্রহণ করার জন্য মুখিয়ে থাকে। আশা করি ছাত্রশিবির সেই নেতৃত্ব তৈরিতে আরো বেশি তৎপর হবে।
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার বলেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে অযথা সময় নষ্টের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে পরচর্চা বেড়ে গেছে। কিন্তু ছাত্রশিবিরের জনশক্তিদের গিবতের দরজা বন্ধ করে এহতেসাবের দরজা প্রসারিত করতে হবে। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সাহসিকতার সাথে পথ চলতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সম্প্রতি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আমাদের বহু জনশক্তিকে হারাতে হয়েছে। সুতরাং যাতায়াত ও চলাফেরায় বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালনায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শহীদ হাবিবুল্লাহ’র পিতা বলেন, হাবিবুল্লাহকে খাবার গ্রহণ করা অবস্থায় নির্যাতন করে শহীদ করা হয়েছে। অথচ সে ছিলো পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার প্রিয় মানুষ। তার অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখনো মানুষ স্মৃতিকাতর হয়। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর আমি নামাজ শেষে মুনাজাতে শহীদের পিতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই ছেলের শাহাদাতের খবর পাই।
একদিকে কলিজার টুকরা সন্তান হারানোর ব্যথা অন্যদিকে শহীদের পিতা হওয়ার সৌভাগ্য নিয়ে বেঁচে আছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি ছাত্রশিবিরের জনশক্তিদের আহ্বান রেখে বলতে চাই, দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। শহীদের সাথী হিসেবে জনশক্তিদের উচিৎ শাহাদাতের তামান্না নিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে হলেও দ্বীনের বিজয়ের জন্য কাজ করা। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, নব্য জাহেলিয়াতের এ যুগে সঠিক পথের দিশা পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। তবে শয়তান ও মানুষের প্ররোচনায় পথ হারানোর ভয়ও আছে। যারা এ পথের সন্ধান পেয়েছে তাদের শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং সতর্কও থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা ইনসাফ কায়েমের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছি। এজন্য নিজেদের আদর্শের প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যকে দেয়া উপদেশ আগে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। ইনসাফের সাক্ষ্যদাতা হতে হবে। কোনো কাজকেই হালকাভাবে না নিয়ে প্রতিটি কাজ বুদ্ধিমত্তার সাথে গুছিয়ে করতে হবে। দেশ, ইসলাম ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত রেখে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রশিবির জাতির প্রত্যাশার প্রতীক। সুতরাং দেশ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।