ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাত্র ২৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত নিরীক্ষা ফার্মের মাধ্যমে সম্পাদিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন কমিশনে পাঠিয়েছে। ওই বছর ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আয়-ব্যয় হিসাব দিতে আগ্রহী নয়, অথচ জবাবদিহিতা ও আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য এটা অপরিহার্য।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আর্থিক শৃঙ্খলা থাকা জরুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনে বেশকিছু নির্দেশনা রয়েছে। এক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ ও নিরীক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যদিও বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, এখনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এ আইনি নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করছে না। বিষয়গুলো চিহ্নিত করে কমিশনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময়ে সময়ে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে আলোকে কাজ করবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইন অমান্যকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইউজিসির ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট আয় ছিল ৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। আর ওই বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট ব্যয় ছিল প্রায় ৩ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিতে হয়। তবে এখন থেকে নিরীক্ষার আগেই প্রতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ববর্তী অর্থবছরের আয়-ব্যয়, সংরক্ষিত তহবিল ও সাধারণ তহবিলের হিসাব তথ্য মন্ত্রণালয় ও কমিশনে পাঠাতে হবে। সম্প্রতি ইউজিসি থেকে এমন একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দেশের সব বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।
ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়ার এ নির্দেশনা নতুন নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এ স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল এ বিষয়ে। তবে এতদিন তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সম্প্রতি আইনের বিষয়টি আমলে নিয়ে এর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বলেন, আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব ও এর নিরীক্ষা প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার ও কমিশনের কাছে পাঠানোর কথা। যদিও এতদিন ধরে শুধু নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাঠানোর বিষয়টি অনুসরণ করা হতো। আয়-ব্যয়ের হিসাব পাঠানোর নিয়ম থাকলেও বিভিন্ন কারণে সেটি এতদিন পালন করা হয়নি। সম্প্রতি কমিশন থেকে এ বিষয়ে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আইনের একটি ধারা উল্লেখ করে ইউজিসির চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৪৫(১) অনুযায়ী ‘প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেক অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফর্মে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করবে’ এবং ধারা ৪৪(৪) অনুযায়ী ‘প্রত্যেক অর্থবছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আগের অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং সংরক্ষিত তহবিল ও সাধারণ তহবিলের হিসাব কমিশন ও সরকারের কাছে পাঠাবে।’ আইনের উল্লিখিত ধারা অনুসরণ করে ২০২১-২২ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফর্মে প্রস্তুত করে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কমিশনে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। একইভাবে পরবর্তী সব অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং সংরক্ষিত তহবিল ও সাধারণ তহবিলের হিসাব সংশ্লিষ্ট অর্থবছর শেষ হওয়ার পরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কমিশনে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হলো।
চিঠি জারির ৩০ দিনের মধ্যে গত পাঁচ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব কমিশনে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এ বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গত পাঁচ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট (পিইউএফআর) ফরম্যাট অনুযায়ী পত্র জারির তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে কমিশনে পাঠানোর জন্যও অনুরোধ করা হলো।
এছাড়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি অর্থবছরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফর্মে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করবে। উল্লিখিত হিসাব প্রতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোর (সিএ ফার্ম) মধ্য থেকে সরকার মনোনীত একটি ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষা করাতে হবে। এরপর ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কমিশনে পাঠাতে হবে। সে হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, দফায় দফায় নির্দেশনা দেয়ার পরও নিয়মিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।