বিশ্বজুড়ে কৃষিপণ্যের দাম ও উৎপাদন ব্যয়ে ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে। ব্যয় সামাল দিতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবহারকারীদের। আগামী বছরও কৃষিপণ্যের বৈশ্বিক বাজার অস্থিতিশীল থাকবে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে প্রকট হতে পারে অস্থিতিশীলতা। সম্প্রতি এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কো-ব্যাংকের নলেজ এক্সচেঞ্জ ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ স্কট জাকারবার্গ। ভুট্টা, সয়াবিন ও গমের মতো প্রধান শস্যগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব, লজিস্টিকস সংকট শস্যের সরবরাহ চেইনকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। অপ্রতুল সরবরাহের কারণে বাজারদর লাগামহীন হয়ে উঠছে।
এসঅ্যন্ডপি গ্লোবাল প্লাটসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ বলেন, খাদ্যশস্য ও তেলবীজ সরবরাহ খাতে আগামী তিন বছরেও কাটবে না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। আগামী বছরের জন্য আমাদের বেশকিছু বিষয় চিহ্নিত করতে হবে। পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসবে, আর এ পরিবর্তন নেতিবাচক দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় আগে থেকেই আমাদের সচেতন থাকতে হবে। ভুট্টা, গম ও সূর্যমুখী তেল সরবরাহের দিক থেকে ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ। কিন্তু ছয় মাস ধরে চলমান যুদ্ধের কারণে দেশটি থেকে এসব পণ্যের সরবরাহ কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য রফতানিবিষয়ক একটি চুক্তি হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে। কিন্তু রফতানি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। এছাড়া শিগগিরই যুদ্ধের অবসান হওয়ারও কোনো সম্ভাবনাও চোখে পড়ছে না। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম। এর প্রধান কারণ সরবরাহ সংকট। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবেই ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে সার উৎপাদন। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি সারের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে জ্বালানিটির দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চে উঠবে। ফলে সারের দাম আরো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনাও বাজারের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন জাকারবার্গ। তিনি বলেন, আমি মনে করি, চীন-তাইওয়ান পরিস্থিতিকে আমরা কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না। কারণ চীন খাদ্য ও পশুখাদ্য আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ। জ্বালানি তেল ও সারের ঊর্ধ্বমুখী দামের চাপ মাথায় নিয়েই চলতি বছরের প্রথমার্ধ পার করেছেন কৃষকরা। এ সময় শস্য বীজের দামও বেড়েছে। তবে কয়েক সপ্তাহে বীজের দাম কিছুটা নি¤œমুখী ছিল বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতির কারণে কৃষকদের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি রেকর্ড সুদহার ও দুর্বল চাহিদা আয় কমাতে ভূমিকা রাখছে। তবে জাকারবার্গ বলছেন, শস্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে কৃষকরা এখনো কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বছর লজিস্টিকস ব্যয়ও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। মহামারীর কারণে সরবরাহ চেইন অত্যন্ত বাজেভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তার ওপর চীনে করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। জাকারবার্গ জানান, লজিস্টিকস সংকটের পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়াও কৃষিপণ্য বাণিজ্যের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। আগামী তিন মাস লা নিনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এ সময় শীর্ষ রফতানিকারক অঞ্চলগুলোয় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কাও রয়েছে।