এই সময়ের আলোচিত এক দেশ তুরস্ক। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মূলত তার কৌশলগত অবস্থান, সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি, অটোমান সময়ের ঐতিহাসিক ভূমিকা আর এর প্রায় সোয়া আট কোটি অগ্রসর জনসংখ্যার কারণে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) শাসনে নতুন এক দর্শনের মধ্য দিয়ে দেশটি অগ্রসর হচ্ছে। ২০০২ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা তুরস্কের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রজব তৈয়ব এরদোগান মুসলিম বিশ্বে নতুন এক প্রেরণা তৈরি করেছেন। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তুরস্ক নিজেকে পশ্চিম থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়ে সব বিশ্বশক্তির সাথে একধরনের সমান্তরাল সম্পর্ক তৈরি করেছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ার পর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয় পুরো তুর্কি সাম্রাজ্য। অপমানকর ‘সেভরেস চুক্তি’ চাপিয়ে দেয়া হয় দেশটির ওপর। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তুর্কি জাতীয়তাবাদীরা। অবশেষে লুজান চুক্তি নামে অপেক্ষাকৃত কম মন্দ আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর হলো। এর মধ্য দিয়ে আধুনিক তুরস্কের সীমানা নির্ধারিত হয়। তবে তুর্কি রাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী অনেক শহর ও ভূখ- যুক্ত করে দেয়া হয় অন্য দেশের সাথে। নানা বিধিনিষেধ প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে চেপে বসে তুর্কি জাতির ওপর। সাম্প্রতিক ইতিহাসে তুরস্কের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা আবার দেখা যাচ্ছে। নানা ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই সুইজারল্যান্ডের লুজানে যে চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়েছিল, এক বছর পর সেটি শতবর্ষ পার হচ্ছে। এরপর কী হতে যাচ্ছে দেশটিতে? তুরস্ক কি খোলস থেকে বেরিয়ে আবার আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পরিণত হবে? বিশ্বশক্তিগুলো কিভাবে দেখছে তুরস্ক এবং দেশটির এরদোগানের নেতৃত্বাধীন একে পার্টির সরকারকে? এসব প্রশ্নের অনেক কিছুর জবাব এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নতুন বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে সম্ভবত আবির্ভূত হতে যাচ্ছে তুর্কিরা।
লুজান চুক্তি:লুজান চুক্তি স্বাক্ষরের সময় এতে চুক্তির কোনো মেয়াদের উল্লেখ ছিল না। তবে যেকোনো আন্তর্জাতিক চুক্তির কার্যকারিতার মেয়াদ ধরা হয় ১০০ বছর। এই হিসাবে অনেকের মতে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত এর কার্যকারিতা রয়েছে। তার মানে অবশ্য এ নয় যে, চুক্তির শত বছর পর তুরস্কের অবস্থা ঠিক ১০০ বছর আগে ফিরে যাবে। লুজান চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তদানীন্তন মিত্রশক্তি- ব্রিটেন, ফ্রান্স, গ্রিস, ইতালি, জাপান, রোমানিয়া ও যুগোশ্লোভিয়া এবং তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসমেত ইনোনু। এই চুক্তির ফলে তুরস্কের নতুন প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়। লুজানের চুক্তির মাধ্যমে এর আগে স্বাক্ষরিত সেভরেস চুক্তি বাতিল হয়। তুরস্কের নতুন সীমানা চিহ্নিত ও স্বীকৃত হয়। তবে একই সাথে এর মাধ্যমে খিলাফত বিলুপ্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে মোস্তফা কামালের অধীনে তুর্কি প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
চুক্তিটিতে তুরস্কের প্রতিপক্ষের সব দাবি মেনে নেয়া হয়। তবে এর মাধ্যমে সেভরেস চুক্তির একটি অংশ হিসেবে পৃথক কুর্দি অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যে দাবি ছিল সেটি পরিত্যক্ত হয়। এর মাধ্যমে তুরস্ককে সাইপ্রাস, লিবিয়া, মিসর এবং সিরিয়ায় অবস্থিত আদানা ও গাজিয়ানতেপসহ কয়েকটি লেভান্ট শহরের ওপর তার সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করতে হয়। এ চুক্তির পর সিরিয়া ও লেবানন ফরাসিদের দখলে চলে যায়। মিসর, সুদান এবং ইরাক আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ দখলের অংশ হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের অধীনে আসে; পরে এটিকে ব্রিটিশরা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তার কাছে হস্তান্তর করে। তুরস্ককে দুর্বল করতে, ইজিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণসাগরের মধ্যবর্তী তুর্কি প্রণালীকে সব ধরনের শিপিং ও বেসামরিক যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। তুরস্কের ওপর অলিখিত আরো কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যার আওতায় তেল ও গ্যাসের জন্য দেশটিকে খনন করা থেকে বিরত থাকতে হয়।
লুজান চুক্তির পটভূমিটি কী ছিল তা নতুন পরিস্থিতি বোঝার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যকে পরাজিত করার পর, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি এবং অন্যান্য মিত্র বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশের অটোমান সাম্রাজ্যকে সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ইসলামী পরাশক্তি ৬০০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার বিশাল এলাকা শাসন করে। ১৯১৪ সালে তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্য জার্মানির সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর অংশ হিসেবে, অটোমান সাম্রাজ্য জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরির পক্ষে যুদ্ধ করে। কিন্তু এই যুদ্ধে অটোমানরা সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হওয়ার মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এই বিপর্যয়কর পরাজয়ের সমাপ্তি ঘটে ১৯২০ সালে ফ্রান্সের সেভরেসে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে। সেভরেস চুক্তিতে অটোমান সাম্রাজ্যের বেশির ভাগ অঞ্চল মিত্রশক্তি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, গ্রিস ও ইতালির কাছে হস্তান্তরের শর্ত ছিল। এই চুক্তিতে ইস্তাম্বুল এবং বসফরাসকে আন্তর্জাতিকীকরণ করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী গ্রিস, ইতালি ও ফ্রান্স তাদের নির্ধারিত অঞ্চলগুলো দখল করলে অটোমান সাম্রাজ্যের একটি ছোট অংশ বাকি থাকে। তবে এটি মাত্র এক বছর স্থায়ী হয়। এ ধরনের অপমানকর শর্ত প্রত্যাখ্যান করে, তুর্কি জাতীয়তাবাদী বাহিনী একটি প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে এবং ১৯২১ সালের সেপ্টেম্বরে সাকারিয়ার যুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্ব আনতালিয়া থেকে ফরাসি সৈন্যদের বিতাড়িত করে। তুর্কি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাথে ইজমির এবং তুর্কি ভূখ-ের অন্যান্য অঞ্চলে মিত্রশক্তির লড়াই হয়। তুর্কিরা গ্রিসের সেনাবাহিনীকেও পরাজিত করে। তুরস্ক পূর্ব থ্রেস, বেশ কয়েকটি ইজিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, সিরিয়ার সীমান্ত বরাবর একটি স্ট্রিপ, স্মার্না জেলা এবং বসফরাস ও দারদানেলেস প্রণালীর আন্তর্জাতিক অঞ্চল উদ্ধার করে। এই উন্নয়নগুলো মিত্রশক্তিকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করে, যার ফলে লুসান চুক্তি এবং বর্তমান তুরস্কের সূচনা হয়।
কৌশলগত সমীকরণ: তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে, প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের পরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান সবচেয়ে ক্যারিসম্যাটিক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। ক্ষমতায় আতাতুর্কের ১৮ বছরের রেকর্ড (১৯২০-১৯৩৮) ভেঙেছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে, আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি চর্চার বিপরীতে, এরদোগান নব্য-অটোমান ও ইসলামী মূল্যবোধের দ্বারা চালিত সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চান। তুর্কি বৈদেশিক নীতিও এরদোগানের আদর্শবাদে কিছুটা প্রভাবিত। তুরস্কে এরদোগানের প্রতিপক্ষকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের খোলামেলা আহ্বান সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ তুরস্কের সাথে সতর্ক সম্পর্ক বজায় রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়ায় কুর্দি পিওয়াইডি-ওয়াইপিজিকে সমর্থন এবং এরদোগানকে উৎখাতের ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচিত ফতেউল্লাহ গুলেনকে আশ্রয় দেয়া আর সে সাথে তুরস্ক ও তুর্কি সাইপ্রিয়টদের বিরুদ্ধে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্রিস ও সাইপ্রাসকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিঃশর্ত সমর্থন দেয়ার প্রভাব একেপি সরকারের নীতিতে দৃশ্যমান হয়। তুর্কি জনসাধারণের বৃহৎ অংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ-উভয়কেই সন্দেহের চোখে দেখে।
লুজানের চুক্তির অনেক সীমাবদ্ধতার পরও এটিকে একটি কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখেছিলেন তুর্কি সেকুলাররা। কারণ এটি অপমানকর সেভরেস চুক্তি বাতিল করেছিল, যা তুরস্ককে ইউরোপ থেকে সরিয়ে এবং মধ্য ও উত্তর আনাতালিয়ায় তুরস্কের ভূখ-কে একটি ছোট অংশে সঙ্কুচিত করেছিল। তবে এরদোগানের নেতৃত্বে তুর্কি নেতৃত্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লুজান চুক্তির গুরুত্বকে প্রত্যাখ্যান করে এর সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করার প্রতি মনোনিবেশ করেছে।
নিও-অটোমানিজমের উত্থান প্রাথমিকভাবে তুরস্কের সাবেক রাষ্ট্রপতি তুরগুত ওজালের (১৯৮৯-৯৩) সময় হয়। এ সময় লুজান চুক্তি প্রত্যাখ্যানের পক্ষে বিবৃতি দেয়া হয়। উসমানীয় গৌরবের আকর্ষণীয় প্রকাশ, বলকান থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত তুর্কি সার্বভৌমত্ব বিস্তারকারী অটোমান সাম্রাজ্যের মানচিত্র লুজান মানচিত্রকে ছাপিয়ে যায়। নভেম্বর ২০১৫ সালে এরদোগানের একেপি ও জাতীয়তাবাদী এমএইচপির মধ্যে রাজনৈতিক জোট গঠনের পর থেকে, এরদোগানের তুর্কি পুনর্জাগরণ প্রবণতা তুর্কি জাতীয়তাবাদের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে জুলাই ২০১৬-এ ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পরে, এই সংশ্লেষণ জনসাধারণকে সংগঠিত করতে এরদোগানকে সাহায্য করে। ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো, এরদোগান লুজান চুক্তিকে পরাজয় বলে অভিহিত করে বলেন যে, এটি তুর্কি উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত কাস্তেলোরিজোর মতো দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এরদোগান লুজান চুক্তিকে ঘৃণ্য সেভরেস চুক্তির একটি সামান্য আপগ্রেড সংস্করণ হিসেবে চিত্রিত করেন। এরদোগান ডিসেম্বর ২০১৭ সালে এথেন্স সফরের সময় তার গ্রিক প্রতিপক্ষ প্রোকোপিস পাভলোপোলোসকে লুসান চুক্তি সংশোধন করতে বলেছিলেন। তুর্কি রাষ্ট্রপতি তার গ্রিক প্রতিপক্ষকে ইজিয়ান সাগর মহাদেশীয় শেলফ সমস্যার একটি ‘ন্যায্য’ সমাধান খুঁজে বের করতে বলেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল তুর্কি এবং গ্রিক মূল ভূখ-ের মধ্যে একটি মধ্যম রেখা আঁকা। কিন্তু এরদোগানের সব অনুরোধ এথেন্স প্রত্যাখ্যান করে।
তুরস্ক তার সামরিক শক্তিকে সংহত করার চেষ্টাও করে। গত এক দশকে, তুরস্কের সামরিক ব্যয় ৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপির অনুপাতে প্রতিরক্ষা ব্যয় ২.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২.৮ শতাংশ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুর্কি প্রতিরক্ষা নীতিকে প্রভাবিত করে। ২০১৬ সালে আইসিস দুই তুর্কি সৈন্যকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে এবং ২০২১ সালে, পিকেকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ১৩ জন তুর্কি সৈন্যকে মৃত্যুদ- দেয়। তুর্কি সৈন্যদের মৃত্যুদ- কার্যকর করার পরে, তুরস্ক এ ব্যাপারে কৌশলগত প্রতিশোধের ওপর জোর দেয়।
এরদোগান উত্তর সিরিয়ায় পিকেকে-পিওয়াইডি’র বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য একটি জাতীয় ঐক্যমত অর্জন করেন, যদিও তিনি সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে তুরস্কের হস্তক্ষেপের জন্য অনুরূপ সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন বালিউনে সিরিয়ার বিমান হামলায় ৩৪ জন তুর্কি সৈন্য নিহত হয়, তখন একটি জনবিক্ষোভ সরকারের পাবলিক অ্যাপ্রুভাল রেটিংকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে ঠিক পরেই একেপি সরকার রাশিয়ান হুমকিকে উপেক্ষা করে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন স্প্রিং শিল্ড শুরু করে। সরকার আবারও তুর্কি জাতীয়তাবাদী মনোভাবকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়।
সক্রিয় খেলোয়াড়: এরদোগানের অধীনে গত এক দশকে তুরস্ক বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ক্রমবর্ধমান সক্রিয় খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। এই সময়ের শুরুতে, তুরস্কের নীতিগুলো মূলত ‘নরম শক্তিতে’ ছিল। তবে, ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পরে, এই ভঙ্গিটি হস্তক্ষেপবাদী, অপ্রতিরোধ্য বৈদেশিক নীতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, যা ‘কঠিন শক্তি’ এর ওপর জোর দেয়। তুরস্কের একটি নরম শক্তিভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি থেকে হার্ড পাওয়ারভিত্তিক পদ্ধতিতে স্থানান্তর এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
বিশ্বশক্তি হিসেবে রুশ স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে এমন কর্মকা- নিয়ে অবশ্য তুরস্ক সতর্ক থাকে। দেশটি জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করে। এর বিপরীতে ইরাক ও সিরিয়া দুর্বল। শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে ইরান ভিন্নভাবে আচরণ করে। যখন তুর্কি সৈন্যরা ইরান-অধিভুক্ত হাশদ আল-শাবিকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন ইরান তুরস্কের জন্য ‘লাল রেখা’ আঁকে, আঙ্কারাকে কেন্দ্রীয় ইরাক এবং সিনজার পর্বতমালায় আর অগ্রসর না হওয়ার জন্য সতর্ক করে দেয়। আঙ্কারা সাইপ্রাস ও গ্রিসের একতরফা সামুদ্রিক সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এথেন্স এবং নিকোসিয়া তুরস্কের অবস্থানকে একটি গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এবং ইইউকে তুরস্কের ওপর চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে, ইইউ-এর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকির মুখে আঙ্কারা কিছুটা নিরুৎসাহিত হয় এবং সাময়িকভাবে ইজিয়ান এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় সাগরে স্কেল-ব্যাক উত্তেজনার দিকে চলে যায়। সাবেক অটোমান প্রদেশ লিবিয়াতেও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিসির ‘লাল রেখা’ ঘোষণার পর, তুর্কি-সমর্থিত জিএনএ সৈন্যরা অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত থাকে এবং পরে যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করে।
আগের সব তুর্কি সরকার ফিলিস্তিন ইস্যুতে নরম অবস্থান প্রদর্শন করেছে। এরদোগানের তুরস্ক ইসরাইলি নীতির সমালোচনা বাড়িয়েছে। ২০১০ সালে ইসরাইল যখন ফ্লোটিলার ওপর গুলিবর্ষণ করে, তখন ইসরাইলের সাথে এরদোগান তুরস্কের সম্পর্ক কমিয়ে দেন। তুর্কি প্রেসের মতে, অপারেশন কাস্ট লিড এবং ফ্লোটিলার পর, ২০১০ সালের তুর্কি জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নথিতে প্রথমবারের মতো, তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ইসরাইলকে ‘একটি অস্থিতিশীল সত্তা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। কাদির হ্যাস ইউনিভার্সিটির বার্ষিক জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি উপলব্ধি সমীক্ষা অনুসারে, ৪১.৮% জনসাধারণ তুরস্কের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (৫৪%) পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে ইসরাইলকে দেখেছে। তুরস্ক তার অবস্থান এবং আকারের কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অভিনেতা। তবে, এর জনসংখ্যার মুসলিম পরিচয় সম্ভবত ইইউতে তুরস্কের একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাধা ছিল। প্রত্যাখ্যানটি তুরস্কের পাশ্চাত্যবিরোধী প্রবণতাকে শক্তিশালী করে এবং শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির সন্ধানে উদ্বুদ্ধ করে। পশ্চিমা শক্তিগুলো অবশ্য উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে, তারা একটি নতুন তুরস্কের মুখোমুখি হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরো প্রভাব বিস্তারকামী স্বপ্ন দ্বারা চালিত। তা ছাড়া, তুরস্কের অভ্যন্তরীণ ঘরোয়া গতিশীলতাও পরিবর্তিত হয়েছে। পশ্চিমা শক্তিগুলোর আর তুরস্ককে এমনভাবে দেখা উচিত নয় যে, দেশটির ওপর যা কিছু চাপিয়ে দেয়া হোক না কেন, তা প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নেবে। এ কারণে দীর্ঘমেয়াদি পশ্চিমা স্বার্থের জন্য এরদোগান-পরবর্তী যুগে ফোকাস করা উচিত বলেও কোনো কোনো দেশ মনে করে। তার মানে হলো, তুরস্কের ক্ষমতা থেকে এরদোগানকে বিদায়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাইডেন তার এ ধরনের অভিপ্রায়ের কথা প্রকাশ্যে বলেছেন।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরের গ্যাস ইস্যু: ইতালি, সাইপ্রাস এবং ইসরাইলের সাথে গ্রিস পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে ইউরোপে জ্বালানি স্থানান্তর করার জন্য একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা তুরস্কের ইউরোপে জ্বালানি সেতু হওয়ার পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করতে চায়। তুরস্ক তখন ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ নামে একটি নতুন নৌ মতবাদের ওপর ভিত্তি করে একটি ব্রিঙ্কম্যানশিপ নীতি গ্রহণ করেন। নভেম্বর ২০১৯ সালে, ব্লু হোমল্যান্ড মতবাদটি লিবিয়ার জিএনএ সরকারের সাথে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন নিয়ে একটি সামুদ্রিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এই সাহসী পদক্ষেপটি এথেন্স এবং নিকোসিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক সংলগ্নতাকে বিচ্ছিন্ন করে এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে ইউরোপে পরিকল্পিত গ্যাস পাইপলাইন ব্লক করার তুর্কি ক্ষমতা সৃষ্টি করে। এরদোগান এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, তার দেশ একটি ‘নতুন নৌ সেভরেস’ এর কাছে মাথা নত করবে না?
পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরাইল ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা আংশিকভাবে ইসরাইল, সাইপ্রাস এবং মিসরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কারের ফলাফল। ইসরাইল ও গ্রিসের অর্থনৈতিক স্বার্থ ইউরোপে গ্যাস রফতানি করতে আগ্রহী দেশগুলোর একটি রাজনৈতিক ব্লক গঠনের বিষয় নিয়ে আসে। তুরস্কের পাইপলাইন ব্যবহার না করে ইউরোপে জ্বালানি রফতানির প্রচেষ্টা পশ্চিমের কাছে একটি শক্তি সেতু হিসেবে দেশটির ভূমিকা পালনকে চ্যালেঞ্জ করে।
মাভি মারমারা ফ্লোটিলার ঘটনা ব্যতীত ইসরাইল ও তুরস্কের মধ্যে কোনো সামরিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯-এ, তুর্কি নৌ জাহাজগুলি গ্রিক সাইপ্রিয়ট বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইইজেড) বাইরে ইসরাইলি গবেষণা জাহাজ ‘ব্যাট গালিম’কে বাধা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। ইসরাইলি জাহাজের প্রতি তুর্কি প্রতিক্রিয়া তার নীল হোমল্যান্ড মতবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, যার দ্বারা তুরস্ক গ্রিস ও সাইপ্রাসের দখল থেকে তার ন্যায্য ইইজেড মুক্ত করতে চায়। এটি করে, আঙ্কারা এথেন্স এবং নিকোসিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে।
এরপর কী হবে? পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত বিষয় হলো, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই লুজান চুক্তির শতবর্ষ পরে কী হবে। সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে, লুজান চুক্তির শত বছর পরে তুরস্ক তেলের জন্য অনুসন্ধান শুরু করবে। কৃষ্ণসাগর এবং মারমারা সমুদ্রের সাথে সংযোগকারী একটি নতুন চ্যানেল স্থাপন করবে, যেখান দিয়ে জাহাজের পারাপার থেকে ফি সংগ্রহ করবে আঙ্কারা। এর মধ্যেই তুরস্ক তেল গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে। ইস্তাম্বুল খাল নামে নতুন চ্যানেল প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।
২০২৩ সাল তুরস্কের জন্য এমনিতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই বছরের মাঝামাঝি দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন হবে। গত দুই দশকে তুরস্ককে এক নতুন অবস্থান ও গন্তব্যে নিয়ে এসেছেন রজব তৈয়ব এরদোগান। তিনি ও তার দল একেপি এই যুগসন্ধিক্ষণের নির্বাচনে পুনর্র্নিবাচিত হলে তুরস্ক সম্ভবত নতুন এক পর্বে পা রাখবে। আর এর ব্যতিক্রম হলে গন্তব্যের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়তে পারে। তবে নতুন নেতৃত্বে কারা কিভাবে আসবে এবং দেশটির ডিপ স্টেটের ভূমিকা কী হবে তার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। ২০২৩ সালের মধ্যে তুরস্ক অর্জনের জন্য অনেক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে তুরস্কের বিদেশ-নীতির লক্ষ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ; যার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, তুরস্ক ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার সব শর্ত অর্জন করবে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে ইইউর প্রভাবশালী একটি সদস্য দেশ হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক সংহতকরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। তৃতীয়ত, এটি আঞ্চলিক সঙ্ঘাত নিরসনে কার্যকর ভূমিকা নিতে চাইবে। চতুর্থত, এটি বৈশ্বিক অঙ্গনে সব ক্ষেত্রে জোরালোভাবে অংশ নেবে। পঞ্চমত, এটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে এবং বিশ্বের শীর্ষ দশ বৃহত্তম অর্থনীতির একটিতে পরিণত হবে। এর মধ্যে প্রথম লক্ষ্য অর্জনে দেশটি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। বাকি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এক বছর পরই আসবে ২০২৩ সাল। এর মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের পথে তুরস্ক অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। একসময় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার একটি ব্যাধি ছিল তুরস্কের। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এ ধরনের প্রবণতা অনেকখানি কমে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। তুরস্ক এমন এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পেরেছে যেখানে প্রকৃতই জনসমর্থনের প্রতিফলন ঘটে। ক্ষমতাসীন একেপির অধীনে হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেশটির সবচেয়ে বড় তিন সিটির নির্বাচনে শাসক দল পরাজিত হয়েছে। দেশটির গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে নানা ধরনের সমলোচনা সত্ত্বেও সেখানে ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সাথে ধর্মনিরপেক্ষতার একধরনের সমন্বয় ঘটেছে। অনেকে তুর্কি শাসনব্যবস্থাকে ইসলামী মূল্যবোধ ও ধ্যানধারণা আর পাশ্চাত্যের উদার গণতন্ত্রের একটি সমন্বিত মডেল হিসেবে বিবেচনা করেন। মধ্যপ্রাচ্যের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের এ অঞ্চলে তুরস্ককে গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।
অনেক সমালোচক মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক উসমানীয় খেলাফতের পুরনো সাম্রাজ্যকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। এই অভিযোগ এনে মধ্যপ্রাচ্যে মিসর, সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমন্বয়ে একটি অক্ষও তৈরি করা হয়েছে; যার সাথে ইসরাইলের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র। তুরস্ক সেই সমীকরণ পাল্টে দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলের সাথে বৈরী সম্পর্ক অনেকখানি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তুরস্কের। আর্মেনিয়ার সাথেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা নিয়েছে আঙ্কারা। এ কথা সত্যি যে, লুজান চুক্তির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে তুরস্ককে সঙ্কুচিত এক দেশে পরিণত করা হয়েছে। এমনকি মসুল ইদলিব আফরিন রাক্কার মতো তুর্কি ঐতিহ্যের শহরকে তুরস্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। লুজান চুক্তির অবসানের পর এসব এলাকাকে তুরস্ক তার মানচিত্রভুক্ত করতে পারে বলেও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেন। ইজিয়ান সাগরের তুর্কি দ্বীপ যেগুলো গ্রিসকে স্থানান্তর করা হয়েছে সেগুলো আবার তুরস্ক নিজ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে বলে মনে করা হয়। সাইপ্রাসের ব্যাপারে তুরস্ক আবার আগ্রাসী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও মনে করা হয়।
এসব জল্পনা অনেকখানি তুরস্ক এবং এর প্রভাবকে তার সংকীর্ণ ভূখ-ে আটকে রাখতে করা হয় বলে মনে হয়। এরদোগান সব সময় একজন স্বপ্নচারী রাষ্ট্রনায়ক হলেও তাকে অবাস্তব উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তিনি এমন কোনো অপরিণামদর্শী নীতি বা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে মনে হয় না যাতে পুরো পাশ্চাত্যের মুখোমুখি হয়ে পড়ে তুরস্ক। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের পর নেয়া তুর্কি নীতি পশ্চিমারা পুরোপুরি গ্রহণ করেনি, তবে এর বাস্তবতাকে অস্বীকারও করতে পারেনি। আজ পাশ্চাত্য এবং ইসরাইলি ডিপ স্টেটের অনেকে তুরস্কে শাসন পরিবর্তনের যে ভাবনা ভাবেন সে সম্পর্কে এরদোগান ওয়াকিবহাল রয়েছেন। এরদোগানকে পরবর্তী নির্বাচনে জিততে হলে সিরীয় শরণার্থী সঙ্কটের একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে। এ জন্য বাফার জোন প্রতিষ্ঠা আর আগামীতে একেপি শাসনকে তুরস্কে বজায় রাখা সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি এই বিষয়টি এরদোগানের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহের বিকল্প রোড সৃষ্টিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন তুরস্কের জন্য সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটোই নিয়ে আসবে। ইউরোপের এ ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রতি একধরনের নির্ভরতা তৈরি হবে। তবে মস্কো এটিকে ইতিবাচকভাবে নিবে না। অন্য কোনো স্বার্থ দিয়ে ক্রেমলিনকে সমঝোতায় আনতে পারলে এটি হবে এরদোগানের কৌশলগত জয়। সে সাথে তুর্কি রাষ্ট্রের অখ-তা অগ্রগতি এবং বিদ্যমান রূপকল্পকে সামনে রেখে এগোতে পারলে অদূরভবিষ্যতে তুরস্ক আবার পরিণত হতে পারে একটি অন্যতম বিশ্বশক্তিতে। ২০২৩ সাল নিঃসন্দেহে এই ক্ষেত্রে একটি বিরাট মাইলফলক। mrkmmb@gmail.com