প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। নিরব হয়ে যাওয়া পার্কটি হঠাৎ পাখ-পাখালির কিচির-মিচির শব্দে মুখর করে রেখেছে প্রতিটি মুহুর্তকে। প্রাকৃতিক প্রাণ ফিরে পাওয়া ছাড়াও নানান প্রজাতির পাখ-পাখালির অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়া পার্কটি মনোরম পরিবেশে আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের। পৌরসদর থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে ফকির হাট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্ধ কি.মি পূর্বেই বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের অবস্থান। ১৯৯৬ একর আয়তনের বিশাল ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনটি দুইটি অংশে বিভক্ত। এক হাজার একর আয়তনের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ৯৯৬ একর জুড়ে রয়েছে ইকোপার্ক এলাকা। কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত পরিশ্রমে নবরুপে ফিরে এসেছে পার্ক এলাকার পরিবেশ। পাহাড় আর সমুদ্র বরাবরই আকৃষ্ট করে ভ্রমণকারীদের। প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়া আর উজার করা সৌন্দর্যে প্রতিটি মুহুর্তেই ভুলিয়ে দেয় মানব জীবনের যাবতীয় হতাশা। এ কথা সত্য যে, পাহাড়ে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য আর উচ্ছল ঝর্ণার শীতল স্পর্শ পেতে হলে সীতাকুন্ড ইকোপার্কই চমৎকার স্পট। শত ফুট উপর থেকে অবিরাম গড়িয়ে পড়া ঝর্ণাতে ভেজার আনন্দ আলাদা। ১৯২৯ সালে পার্কে এসে ঝর্ণার পরশ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেন নি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও। গাছ-গাছালির ছায়ায় ঘেঁরা আঁকা-বাঁকা পথ বেয়ে ইকোপার্কে রয়েছে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় পার্ক ও বিভিন্ন রাউন্ড, অর্কিড গার্ডেন, ফুল ও ফলের বাগান,সুপ্তধারা জলপ্রপাত, শীতল ঝর্ণার ¯িœগ্ধতা, পিকনিক কর্ণার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আকর্ষণীয় ম্যূরাল, দর্শনার্থীদের বিশ্রাগার ও ছাউনি, পদ্ম পুকুর, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক গ্রীণ হাউজ স্থাপন করা ছাড়াও কৃত্রিম বাঁধ তৈরির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে লেক। ইকোপার্কে রয়েছে মেছোবাঘ, ভালুক, মায়াহরিণ, বানর, হনুমান, শুকর, বনরুই, বনমোরগ, সজারুপ্রভৃতি। গতকাল পার্কটি ভ্রমণে আসেন চট্টগ্রাম জজ আদালতের আইনজীবী এডভোকেট তৌফিক উদ্দিন, এডভোকেট মোহাম্মদ মিজান এবং এডভোকেট মোঃ নুুর নবী। আইনজীবীরা জানান এক সময় বিশাল এ পাকের্র কিছু এলাকা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও বিকল্প পথে স্থানীয় মানুষের নানা আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মত, যা পার্কের পরিবেশ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় নৈতিবাচক প্রভাব ফেলত। সম্প্রতি পুরো এলাকাটি নজরদারীতে আনায় পর্যটকদের নিরাপত্তা ও পার্কের পরিবেশ রক্ষায় তা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। পার্কের গেইটম্যান গিয়াস উদ্দিন জানান, করোনার কারণে দর্শনার্থীদের প্রবেশ কিছু দিন বন্ধ থাকালেও সম্প্রতি পার্কটিতে পর্যটকের আগমন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইজারাদার মোঃ সাহাব উদ্দিন জানান, নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ ইকোপার্ক পর্যটকদের জন্য চমৎকার পিকনিক স্পট। পার্কটি করোনাকালিন দুঃসময় অতিক্রম করে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে পার্কটি দর্শনার্থীদের জন্য চমৎকার পিকনিক স্পট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করবে বলে তিনি আশাবাদী। সম্প্রতি পার্কটি ঘুরে এসেছেন সাদেক মস্তান (র:) উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক জাফর ছাদেক। স্ত্রী ফাতেমা বেগম, দু’পুত্র ইফতেখার হাসান, মাইনুল হোসেন এবং একমাত্র কন্যা ফারিহা মাঈশাসহ স্বল্প পরিসরের পারিবারিক ভ্রমণে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হন।