শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন

প্রসঙ্গ: কবি শরীফ আবদুল গোফরানের

আল মাহমুদ স্মারক পুরস্কার লাভ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২

এ বছর শিশুসাহিত্যিক শরীফ আবদুল গোফরান কবি আল মাহমুদ স্মারক পুরস্কার লাভ কেেরছন। বিকেলে সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নাবিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের আয়োজনে গত ৫ আগস্ট শুক্রবার আল মাহমুদ পদক প্রদান ও স্মারকের মোড়ক উন্মোচন নজরুল একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর পদক পেয়েছেন কবি শরীফ আব্দুল গোফরান ছাড়াও যারা পদক পেযেছেন তারা হলেন, কবি নাসির হেলাল, কবি জাকির আবু জাফর ও ড. ফজলুল হক তুহিন। তুমুল তরঙ্গ ভেঙে নাবিক ছোটে প্রতিদিন, লক্ষ তার স্বাপ্নিক বন্দর, সাহসে শঙ্কাহীন এই সেøাগানকে সামনে নিয়ে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কবিতা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি, নতুন এক মাত্রার সম্পাদক, একুশে পদক প্রাপ্ত কবি আল মুজাহিদী।
সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সহসভাপতি যাকিউল হক জাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কর্নেল (অব:) আশরাফ আল দ্বীন, কবি আসাদ বিন হাফিজ, কবি মোশাররফ হোসেন খান, ড. মাহফুজুর রহমান আকন্দ। কবি তাসনীম মাহমুদের উপস্থাপনায় আরো বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক কেন্দ্রের সহসভাপতি যাকিউল হক জাকী, বিসিএর সেক্রেটারি ইবরাহীম বাহারী, কেন্দ্রের সেক্রেটারি মাহবুব মুকুল, সহকারী সেক্রেটারি নাসির আহমেদ ফয়সাল, জাহিন ইকবাল ও নজরুল গবেষক ইমদাদুল হক চৌধুরী, স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাবিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের পরিচালক আবু শাকের মুহাম্মদ ইউনুচ। অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্ত কবিগণ তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, যোগ্য লেখক তার স্থান করে নেবেই, কবি সাহিত্যিকরা সাদা মনের মানুষ তাদের সাহিত্য ভা-ারকে উজ্জীবিত করতে বেশি বেশি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন, সাহিত্য সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, কবি সাহিত্যিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারলে দেশ, জাতি ও সমাজ উপকৃত হবে। সাহিত্যের উদ্দেশ্য সত্য-সুন্দর ও মানুষের কল্যাণের প্রত্যাশা। আমরা যারা লেখালেখি করি নিজস্ব তাগিদেই লিখব, জাতীয় সঙ্কটকালে কবি সাহিত্যিকদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে, আজকের অনুষ্ঠান শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিজ্ঞপ্তি। আব্দুল্লাহ জোবায়ের শিশুসাহিত্যিক শরীফ আবদুল গোফরান সম্পর্কে একটি নিবন্ধে লিখেছেন,‘আশির দশক থেকে সাহিত্য অঙ্গনে যারা নিরলসভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে কবি শরীফ আবদুল গোফরান অন্যতম। সময়ের কঠিন স্রোতে সাহসি নাবিকের ন্যায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তিনি তার অবস্থান তৈরী করে নেন। ফলে একজন শিশু সাহিত্যিক হিসাবে তার খ্যাতি অনন্য। শিশু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পদচারণায় মুখর এই লেখকের লেখায় যেমনি দেশ, মাটি ও মানুষের কথা ফুটে উঠেছে, তেমনি বিষয় বৈচিত্রকে তিনি স্বতন্ত্রভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। কবি শরীফ আবদুল গোফরান ১৯৫৫ সালের ৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোর্টের মুরগাঁও গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী কেরামত আলী, মাতা বেগম মরিয়ম। ছোট বেলা থেকেই কবি শরীফ আবদুল গোফরান সাহিত্য চর্চা শুরু করেন।
দৈনিক আজাদ পত্রিকার মাধ্যমে তার সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার “মুকুলের মাহফিলে” তাঁর প্রথম লেখা ছড়া “সত্য ন্যায়ের ঝান্ডা তোলো” শিরোনামে ছাপা হয়। কবি শরীফ আবদুল গোফরান-এর গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, পুরোপুরি শিশুদের জন্যই। তার লেখা সাবলীল ও গতিময়। তার কবিতায় ছন্দ, গল্পের রস, বৈশিষ্ট্য স্পষ্টত: জলে উঠা দ্যুতি। যে কাউকে সহজেই মুগ্ধ করার ঢঙও তার লেখায় স্পষ্ট। তিনি যা লিখেন তা ছোটদের উপযোগী হয়েও সকলের। কবি শরীফ আবদুল গোফরান শৈশব থেকে শুরু করে অদ্যবধি প্রবহমান। সেই প্রবহমানতার অনবদ্য সৃষ্টি তার সাহিত্যকর্ম। অনেকের মতো ছড়ার হাত ধরেই তার লেখালেখির জগতে প্রবেশ। তাঁর প্রথম ছড়া গ্রন্থ, ছড়ায় ছড়ায় বৃষ্টি ঝরে, প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। তবে তিনি ছড়া নিয়ে থেমে থাকেননি। ছড়ার পাশাপাশি সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে ছিল তার পদচারণা। কবিতা, গল্প নাটক, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনী, জীবনী গ্রন্থ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার পাতায়। তার লেখা প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে নাওনদী নীল আকাশ, ছড়ায় ছড়ায় বৃষ্টি ঝরে, ফুলে ফুলে প্রজাপতি, সুবাসিত ভোর, বড় মানুষের গল্প, ছোটদের ফররুখ, ষড়ঋতুর বাংলাদেশ, সবার প্রিয় সানাউল্লাহ নূরী, ভাষা আন্দোলন, বাংলাভাষা সংরক্ষণের ইতিহাস ও কেঁপে ওঠে মায়াবি চাঁদের মুখ।
সাংবাদিকতা দিয়েই কবি শরীফ আবদুল গোফরানের কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত সাপ্তাহিক অগ্রপথিক, পাক্ষিক ইসলামিক সলিডারিটি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা ও শিশু কিশোর পত্রিকা সবুজ পাতায় বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত শরীফ আবদুল গোফরান মাসিক ফুলকুড়ি পত্রিকায় বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে দীর্ঘ ২১ বছর দৈনিক সংগ্রামের সহসম্পাদক এবং এক যুগেরও অধিক নীল সবুজের হাট বিভাগের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কবি শরীফ আবদুল গোফরান বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতি ও সামাজিক সংস্থার সাথে যুক্ত আছেন। এর মধ্যে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য, বাংলা একাডেমীর সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সদস্য, বাংলা সাহিত্য পরিষদের সদস্য । তিনি তিন সেশন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিস সম্পাদক সহ কার্যনির্বাহী পরিষদের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। দুই সেশন ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন ।
তাছাড়া তিনি কিশোর থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মতিঝিল আইডিয়াল বিজ্ঞান চক্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, অভিনয় নাট্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মুক্তাঙ্গন সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নাবিক সাহিত্য সংসদের সভাপতি, ঢাকা সাহিত্য সমাজের সভাপতি, নাঙ্গলকোর্ট ফোরাম ঢাকার সভাপতিসহ অসংখ্য সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠনের সাথে কাজ করেন। তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন। কবি শরীফ আবদুল গোফরান তার কাজের স্বীকৃতি হিসাবে অনেক পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-শব্দশীলন একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, নাঙ্গলকোর্ট নজরুল সংসদ সাহিত্য পুরস্কার, নবাবজাদা সৈয়দ হাসান আলী সিএনসি পদক, ঢাকাস্থ নাঙ্গলকোর্ট ফোরাম সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকাস্থ নাঙ্গলকোর্ট ছাত্র ফোরাম সংবর্ধনা ২০১৪ লাভ করেন।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com