আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অংশে এখন আর যুদ্ধের তর্জন-গর্জন শোনা যায় না। পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারকে হটিয়ে তালেবান ক্ষমতা দখলের এক বছরে দেশটিতে সহিংসতা কমেছে ব্যাপকভাবে। তবে এর সঙ্গে শান্তির বিষয়টি মিলিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। আফগানিস্তানে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য আরও বেড়েছে। সবচেয়ে খারাপ আছেন নারীরা। তাদের কাজ ও শিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়েছে।
তালেবানের হাতে সংঘটিত সহিংস কর্মকাণ্ডের তথ্য বলছে, দেশটিতে আত্মঘাতী বোমাহামলা ও বিমান হামলার জায়গায় এখন অত্যাচার ও মৃত্যুদণ্ডের মতো নিশানাকৃত হামলা বেশি হচ্ছে। এই নতুন তালেবানের আচরণ অনেকটাই ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অব্দি আফগানিস্তান শাসন করা পুরোনো তালেবানের মতো।
দেশব্যাপী সশস্ত্র অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে তালেবান। এর পরের এক বছরে আফগানিস্তানে বেসামরিক লোকদের ওপর হামলার হার কমে গেছে ৫০ শতাংশের বেশি। রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি) এই হিসাব তুলে ধরেছে। তারা বলছে, গত এক বছরে আফগানিস্তানে ড্রোন ও বিমান হামলা কমেছে প্রায় ৯৬ শতাংশ। ল্যান্ডমাইন ও আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণ কমেছে ৭৩ শতাংশ। গোলা ও ভারী সমরাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা কমেছে ৯৭ শতাংশ। আফগানিস্তানে আজকাল যেসব অপরাধের খবর পাওয়া যায়, সেগুলো বরং অত্যাচারী শাসন ধরনের। দেশটিতে নৈতিক পুলিশিং ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দাঁড়ি ছাঁটা পুরুষ অথবা মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরকায় শরীর না ঢাকা নারীদের হয়রানি করছে। আফগানিস্তানে এখন বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে হওয়া বেশিরভাগ সহিংস ঘটনার সঙ্গেই তালেবানের নাম পাওয়া যায়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে চলতি মাসে নির্যাতন-মারধরের মতো নৃশংসতার খবর গত বছর একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম পাওয়া গেছে। তবে এর সঙ্গে তালেবানের সংশ্লিষ্টতার হার বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ক্ষমতায় ফেরার আগে গোষ্ঠীটি এ ধরনের ২৪ শতাংশ সহিংসতায় জড়িত থাকার খবর পাওয়া যেতো, এখন তার হার বেড়ে ৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গত এক বছরে আফগানিস্তানজুড়ে ৭৯ শতাংশ অপহরণ ও জোরপূর্বক নিখোঁজের পেছনেও রয়েছে তালেবানের নাম। কাবুলে নতুন শাসকগোষ্ঠী আসার পর থেকে দেশটিতে প্রায় ৪০০ বেসামরিক লোক হত্যার শিকার হয়েছেন। ক্ষমার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আফগান সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্য, ভিন্ন মতাদর্শী ও সাংবাদিকদের ওপর নিশানাকৃত সহিংসতা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত এক বছরে তালেবানের হাতে এ ধরনের সহিংসতা ঘটেছে প্রায় ৮৯ শতাংশ।
এসিএলইডির এসব তথ্য রক্ষণশীল। অর্থাৎ, এর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বহু ঘটনাই হয়তো গোপন রয়েছে। ফলে আফগানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে তালেবানের প্রতিশ্রুতি যে ফাঁকা আওয়াজ হয়ে উঠেছে, তা মোটেও আশ্চর্যজনক নয়। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট