শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

মেজর (অব:) সিনহাকে মনে পড়ে

ড. এ কে এম মাকসুদুল হক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২
মেজর (অব:) সিনহাকে মনে পড়ে - ছবি : সংগৃহীত

গত ৩১ জুলাই ২০২২ তারিখে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে নির্মমভাবে হত্যা করার দুই বছর পূর্ণ হলো। এই হত্যাকা-ে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মূল আসামি তৎকালীন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ এবং ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে মৃত্যুদ- এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়ে ৩১ জানুয়ারি ২০২২ কক্সবাজার আদালত রায় ঘোষণা করেন। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রায়ের নথির যাচাই-বাছাই কাজ চলছে। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকা- পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছিল। অনেক অজানা গল্প ও নাটক জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছিল। ঘটনার অভ্যন্তরীণ শক্তি ভূমিকম্পের মতো আমাদের পুরো সমাজকে প্রচ- ঝাঁকুনি দিয়েছিল। চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের সমাজের সুন্দর ফিটফাট অবয়বের অপর পিঠের কদর্য চেহারা, আমাদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাগুলো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জেনেও না জানার ভান করে নির্লিপ্ততার গোপন দিকগুলো দেখিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভালো কাজের পরিণতি কতটুকু ভয়ঙ্কর খারাপ দিয়ে শেষ হতে পারে!
মেজর (অব:) সিনহা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন চৌকশ অফিসার ছিলেন। তিনি ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সে’র (এসএসএফ) সদস্য ছিলেন। সাধারণত সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনী থেকে বাছাই করা অফিসারগণকে ওই বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। অফিসারদের প্রচ- রকম শারীরিক সামর্থ্য, জ্ঞানগত পরিপক্বতা, মানসিক ভারসাম্যপূর্ণতা, উন্নত নৈতিক গুণাবলী, মনোবল এবং দেশপ্রেমের উৎকর্ষ ইত্যাদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে ‘এসএসএফ’ এ নিয়োগ দেয়া হয়। বিশেষ এই বাহিনীতে নিয়োগের পর দেশী-বিদেশী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সামর্থ্য এবং দেশপ্রেম আরো বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। এমন একজন অফিসার মেজর (অব:) সিনহা ভালোভাবে বুঝে-শুনেই স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে ভিন্নরকম এক কাজের জগতে নেমে ছিলেন। তিনি অস্ত্র আর ইউনিফরম ছেড়ে এসেছিলেন কিন্তু দেশপ্রেম আর দায়িত্ববোধ জমা দিয়ে আসেননি। এই দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি হাজির হয়েছিলেন কক্সবাজারের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে, যেখানে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মেজর (অব:) সিনহা হৃদয় দিয়ে বাংলা মায়ের রূপ-সৌন্দর্যের গভীরতা উপলব্ধি করেছিলেন।
দেশ-মাতৃকার এই রূপ তাকে পাহাড় আর সাগরের মিলনমেলায় নিয়ে গিয়েছিল। তিনি ‘জাস্ট গো’ নামের ডকুমেন্টারি তৈরি করে বাংলার রূপ বিশ্বের দরবারে নতুনভাবে তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়েই কক্সবাজারস্থ হিমছড়ির রেস্ট হাউজে উঠেছিলেন তার ছোট্ট টিমসহ। রাজশাহীর শুটিং শেষ করে তিনি এসেছিলেন কক্সবাজার। প্রায় মাসখানেক সেখানে তারা কাজ করেছেন। এই কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষের সাথে তার সখ্য গড়ে উঠেছিল। এর কিছু দিন পূর্বেই তিনি চাকরিকালীন সময়ে কক্সবাজার ‘বিজিবি’র ‘অপারেশন অফিসার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই চাকরির সুবাদে তার কক্সবাজারের চোরাচালান বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা হয়েছিল। তিনি সে সময় এ ব্যাপারে একটি ডকুমেন্টারিও তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। সেখানকার ইয়াবা করিডোর সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। ওই এলাকার অবৈধ চোরাচালান সম্পর্কিত পূর্ব ধারণার সুবাদে মেজর (অব:) সিনহা ‘জাস্ট গো’ তৈরির কাজ পরিচালনার সময় সেই ব্যাপারে আরো গভীর ধারণা অর্জন করে ফেলেছিলেন। এতে দেশপ্রেমিক মন তার কেঁদে উঠেছিল দেশের এই কালো চেহারা দেখে। তিনি এর বিরুদ্ধে দেশের জন্য কল্যাণকর কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন। সেই উৎসাহ থেকে মেজর (অব:) সিনহা এই চক্রের গভীরে প্রবেশ করে অন্ধকারের সেই চেহারাগুলো চিহ্নিত করে ফেলেছিলেন। তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন এই অফিসার এই চোরাকারবার চক্রের সাথে জড়িত নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত চেইনের সব চরিত্র জেনে ফেলেছিলেন এবং জীবন্ত সাক্ষ্য বা আলামত তার সংগ্রহে ছিল; যার কারণে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম তাকে হত্যার পর সব ইলেকট্রনিক গ্যাজেটসমূহ (ভিডিও রেকর্ডার, ক্যাসেট ইত্যাদি যন্ত্রপাতি) ওসি প্রদীপ সিজ করে নিয়ে গিয়েছিল। সেটা ছিল আলামত ধ্বংসের আলামত। আর সেগুলো থেকে পরবর্তীতে মেজর (অব:) সিনহার চরিত্র হননের জন্য তার দলের সদস্য শিপ্রা দেবনাথের কিছু ব্যক্তিগত চিত্র পুলিশের জনৈক অফিসার কর্তৃক প্রকাশ করা হয়েছিল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রোল করা হয়েছিল। জানা যায়, হত্যাকা-ের পূর্বে টেকনাফের অন্ধকার জগতের বিষয়ে মেজর (অব:) সিনহার সাথে তৎকালীন ওসি প্রদীপের কথা হয়েছিল এবং সিনহা প্রদীপের একটি ইন্টারভিউ আয়োজন করতে চেয়েছিলেন। বরখাস্ত ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানা এলাকায় একজন অপ্রতিরোধ্য সম্রাট হয়ে উঠেছিলেন। তার অত্যাচার নির্যাতনে থানার অধীনস্থ এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তার প্রধান অস্ত্র ছিল ‘ক্রসফায়ার’! টেকনাফ থানা এলাকায় তার সময়ে দুই বছরে ৪৮টি বন্দুকযুদ্ধে ৮৭ জন মানুষ নিহত হয়েছিল (ডেইলি স্টার : ১৪/১২/২০২০)। তার দুই ধরনের বাণিজ্য সেখানে গড়ে উঠেছিল।
প্রথমত, ইয়াবা পাচার এবং দ্বিতীয়ত, ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়। এই চাঁদার ডিলিংস-এ বনিবনা না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ‘ক্রসফায়ারের’ শিকার হতে হতো। এমনকি ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগও ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে। আবার তার এসব অপকর্মের খবর সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হতে পারত না। কারণ, সাংবাদিকগণও ‘ক্রসফায়ারের’ ভয়ে তটস্থ থাকতেন। আমরা জেনেছি, প্রদীপের হাতে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার নিষ্ঠুর নির্যাতনের কথা। র‌্যাবের তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল প্রদীপ স্থানীয় ইয়াবা কারবারিদের সাথে যোগসাজশে বিশাল অঙ্কের পাচারে জড়িত ছিল যার দৈনিক মূল্যমান ছিল ৫০ লাখ টাকা (ডেইলি স্টার : ১৪/১২/২০২০)। অতি সম্প্রতি দুদকের মামলায় প্রদীপ এবং তার স্ত্রী ‘চুমকি কারণের’ চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আদালত তাদের যথাক্রমে ২০ এবং ২১ বছরের কারাদ- দিয়েছেন। প্রদীপ এই সম্পদ ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করেছিলেন (নয়া দিগন্ত : ২৮/০৭/২০২২)। টেকনাফ থানার দেয়ালে প্রদীপের বিশাল ছবি অঙ্কন করা ছিল সব অফিসিয়াল নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে।
এমনকি ‘ক্রসফায়ারে’ প্রদীপ নিজের বিদেশী পিস্তলও ব্যবহার করত। তাছাড়া তদন্তে বেরিয়ে এসেছে প্রদীপ প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে যোগাযোগ করতেন, যা তদন্ত কমিটিকে অবাক করেছিল। আবার প্রদীপ একটি বিদেশী দূতাবাসের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন বলে জানা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, প্রদীপের এত ধরনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অপকর্মের খবর আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিছুই জানতে পারেনি! এখানে প্রশ্ন হলো পুলিশের অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অন্য গোয়েন্দাদের চোখে কি এসব এড়িয়েছে, নাকি তারা দেখেও না দেখার ভান করেছে, নাকি তারা তাদের কাজটি সঠিকভাবে করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেগুলো আমলে নেয়নি বা কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতার জালে আটকে ছিল? এই প্রশ্নগুলো কিন্তু থেকেই যাবে! এজন্যই তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি পরামর্শ দিয়েছিল পুলিশের কর্মকা- তদন্তের জন্য একটি নিরপেক্ষ ‘স্বতন্ত্র তদন্ত ইউনিট’ গঠন করা দরকার। আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রদীপের পূর্বেও অপরাধের রেকর্ড ছিল এবং সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও তিনি দুই-দুই বার পুলিশের সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্ত এবং কক্সবাজার এলাকায় ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন।
মেজর (অব:) সিনহা হত্যাকা-ের পর বেশ কিছু বিষয় জাতির সামনে ঘটতে দেখা গিয়েছিল। পুলিশ প্রধান ও সেনাপ্রধান একই মঞ্চে উঠে ইতিহাসের প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন যার যার মতো করে এই হত্যাকা-ের বিষয়ে কথা বলেছেন। সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসাদের সংগঠন ‘রাওয়া’ (জঅঙডঅ) খুব শক্ত প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছিল। হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে তারা রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছিল। পরবর্তীতে ‘রাওয়া’ এর চলমান নির্বাচিত কমিটিকে বরখাস্ত করে দিয়ে তার গঠনতন্ত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে দেখা যায়। সিলেকশন এবং ইলেকশনের সমন্বয়ে একটি নতুন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ ‘রাওয়া’-এর ওপর এই পরিবর্তনটি চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এতে ‘রাওয়া’ তার ঐতিহ্যবাহী ‘স্বকীয়তা’ হারাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন। মেজর (অব:) সিনহা হত্যাকা-ের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ওপর। যে মাসে সেই হত্যাকা- ঘটেছিল তার পরের মাসটি (সেপ্টেম্বর ২০২০) ছিল ‘ক্রসফায়ার’ শূন্য। অর্থাৎ তার আগের দুই বছরের সেপ্টেম্বর প্রতি মাসে গড়ে ৩৭টি করে ‘বিচারবহির্ভূত’ হত্যাকা- ঘটলেও ওই মাসটিতে একটিও ঘটেনি। আর তার পরের মাসগুলোতেও এই ‘বিচারবহির্ভূত’ হত্যাকা- অনেক কমে গিয়েছিল।
বাংলাদেশ পুলিশ একটি ঐতিহ্যবাহী পেশাদার সংস্থা। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে রয়েছে তাদের ঈর্ষণীয় অবদান। অনেক পুলিশ সদস্য স্বাধীনতার জন্য অকাতরে শহীদ হয়েছিলেন। গত করোনা ঢেউয়েও পুলিশের প্রায় ২০০ সদস্য জনগণের সেবা করতে গিয়ে করোনাক্রান্ত হয়ে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু কিছু কিছু অর্বাচীন প্রদীপ ও লিয়াকতের জন্য গোটা বাহিনীর দুর্নাম হয়েছে। প্রদীপ টেকনাফ থানার আরো বেশ কিছু সদস্যকে তার অপকর্মের সাথে যুক্ত করে ফেলেছিল। তবে ভার্টিক্যালি উপরের দিকে কারা ছিল তা জানা না গেলেও কিছু কিছু আঁচ করা গিয়েছিল হত্যাকা-ের ঘটনাপ্রবাহে। হত্যাকা-ের পরপরই তৎকালীন কক্সবাজারের এসপি মহোদয়ের সাথে প্রদীপের সেল ফোনে কথোপকথন যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে মেজর (অব:) সিনহার বোন প্রায় ১০টি অভিযোগ তুলে সেই এসপি মহোদয়কেও আসামির তালিকাভুক্তির আর্জি জানিয়ে ছিলেন যদিও তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল আদালত কর্তৃক। আবার বাদিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন যে, ওই ‘এসপি মহোদয় তদন্তকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেই চলছেন’ (প্রথম আলো : ১০/০৯/২০২০)। অন্য দিকে তদন্ত চলাকালীন পুলিশের বিভিন্ন সদস্যের ফেসবুক ওয়ালে সিনহার দলের সদস্য শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত বিষয়ে ট্রোল করে মেজর (অব:) সিনহার চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা দেখা গিয়েছিল।
সিনহা হত্যাকা- ঘিরে একটি বিষয় বেশ তাৎপর্য বহন করে। ঘটনাপ্রবাহ, সব ধরনের আলামত, সংবাদপ্রবাহ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইত্যাদি সব কিছুতেই তৎকালীন ওসি প্রদীপকেই মূল আসামিরূপে শনাক্ত করা হলেও বাংলাদেশের একজন প্রতিথযশা আইনজীবী প্রদীপের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন। তিনি প্রদীপকে নির্দোষ দাবিও করেন। আইনজীবী হিসেবে কিসের ভিত্তিতে তিনি এই দাবি করেছিলেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে পরিস্থিতি ও আলামতের ভিত্তিতে যেকোনো সাধারণ মানুষই বুঝতে পারছে মূল আসামি প্রদীপ। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, ওই সম্মানিত আইনজীবী কি আইন ব্যবসার স্বার্থে নাকি সাম্প্রদায়িক স্বার্থে এই মামলায় প্রদীপের পক্ষে লড়েছেন? অবশ্য তার একটি সাম্প্রদায়িক দলের নেতৃত্ব দেয়া এবং বিভিন্ন সময় তার বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে তার সাম্প্রদায়িক অবস্থানটাই বেশি প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। মেজর (অব:) সিনহা হত্যা মামলায় তদন্ত, বিচার ইত্যাদি দ্রুত অথবা যথাসময়ে সম্পন্ন করে সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে আপাত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা প্রশ্ন করেন, প্রদীপ, লিয়াকত, নন্দ দুলালরাই কি প্রকৃত হত্যাকারী? তারাই কি এতসব ‘ক্রসফায়ার’ এবং ‘ইয়াবা’ চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিল নাকি তাদের উপরেও কেউ বা কারা ছিল? প্রদীপরা কি শুধুমাত্র পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী নাকি তারা শুধুই ফুটসোলজার? তাদের কি কেউ উপরের আদেশদাতা ছিল? থাকলে তারা কারা? শুধু একটি থানার কয়েকজন কর্মকর্তা এতসব বড় বড় ঘটনা সামাল দিতে সক্ষম ছিলেন নাকি তাদের উপরে সামাল ও সাহস দেয়ার কোনো ক্রীড়নক ছিল? এই প্রশ্নগুলোর সুরাহা অবশ্যই হতে হবে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হলে।
নি¤œ আদালতে রায় হয়েছে। তবে এখনো পেপার বুক তৈরি হয়নি। পেপার বুক প্রস্তুত হলে শুনানির জন্য হাইকোর্টের তালিকায় আসবে (প্রথম আলো : ৩১/০৮/২০২২)। কিন্তু এর সময় কতদিন লাগবে, তা কেউ বলতে পারছে না। তবে আইনের শাসনের দাবি হলো, এই রায়ের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি কার্যকর করা। মেজর (অব:) সিনহাকে ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে তার রেখে যাওয়া দেশপ্রেম, কর্মস্পৃহা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদের যে উপমা দিয়ে গেলেন নিজের জীবন দিয়ে, আমরা প্রত্যেকটি নাগরিক যদি তা থেকে শিক্ষা নিতে পারি, তবেই দেশ ও জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব ইনশাআল্লাহ। আর সিনহার দুঃখিনী মাও আশায় বুক বেঁধে আছেন রায় কার্যকরের জন্য। তার আর্তি হলো, ‘রায় কার্যকর হলে এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে (দেশের) মানুষের জন্য।’ এই মায়ের বুকে ছেলে সিনহা কখনো ফিরে আসবে না। মাকে সান্ত¡না দেয়ার ভাষা জাতির নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি, ১৬ কোটি জনতার দেশপ্রেমিক সন্তানরা সবাই এক একজন সিনহা।
লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক,Email: maksud2648@yahoo.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com