মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে মিরসরাই উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বদ্ধ গেড়ামারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অত্র অঞ্চলের ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই অঞ্চলে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস। শিক্ষার্থী প্রায় দেড়শতাধিক। বিদ্যালয়টি সরকারি তবুও নেই নজর। দিনে দিনে কমছে শিক্ষার্থী। এছাড়াও বিদ্যালয়ে রয়েছে সুপেয় পানির অভাব। উপজেলার এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২জন শিক্ষক দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে চলছিল পাঠদান। দীর্ঘ ৩৪ বছর বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেছেন এবং বিগত দুই বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায?িত্ব পালন করেছেন বাবু শ্রীপতি পাল। গত ৪ আগষ্ট, ২০২২ তিনিও অবসর গ্রহণ করে বিদ্যালয় থেকে চলে যান। বর্তমানে সহকারী শিক্ষক ইমরান হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর দায?িত্ব দিয়ে চলছে বিদ্যালয়। আরেক সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল হাসান তিনি গত জানুয়ারি থেকে ডিপি-এ্যাক্ট এর ট্রেনিং এ রয়েছেন। দেড়বছরের ট্রেনিং শেষ করে যোগদান করার কথা রয়েছে। সম্প্রতি এ অঞ্চলে দুটি নূরানী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অভিভাবকরা। ফলে এই বিদ্যালয়ে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। দিন যাচ্ছে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী। অভিভাবকরা হতাশায়। বিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষকের অভাবে ভেস্তে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন, হাসান, সাব্বির বলেন, বর্তমানে আমাদের ইমরান স্যার একাই ক্লাস নেন, একজন দিয়ে সব ক্লাস হয় না, অনেক সমস্যা হচ্ছে, আমরা সরকারিভাবে শিক্ষক চাই। অভিভাবক মোঃ মানিক মিয়া বলেন, এটি একটি সরকারি স্কুল অথচ কেউ খবর রাখে না। একজন শিক্ষক দিয়ে কী ১টি স্কুল চলে। মাসের পর মাস গেলেও কোনো কর্মকর্তা বা শিক্ষা অফিসের কোনো অফিসার আসেন না এই স্কুল পরিদর্শনে। গত এপ্রিলে ১১ তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন এর বিষয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেননি তিনি। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে শিক্ষার আলো বিলিয়েছেন অত্র অঞ্চলে। যাদের হাত ধরে বিদ্যালয়টি আজ এতদূর। যে শিক্ষকরা এই বিদ্যালয়টিকে পরম মমতায় আগলে রেখেছিল। সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু শ্রীপতি পাল, সাবেক প্রধান শিক্ষক কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক প্রধান শিক্ষক রাখাল কুমার বিশ্বাস সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় এবং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় এখানে কোন শিক্ষক শিক্ষকতা করতে রাজি হন না। নিয়োগ দিলেও বিভিন্ন অজুহাতে বদলি হয়ে যান তারা। যারা বিদ্যালয়টিতে শিক্ষাদান করেছেন তারাও অনেক কষ্টে অনেক ত্যাগের মাধ্যমে বিদ্যালয় কে টিকিয়ে রেখেছেন। সরকার যদি যথাযথ সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করেন তাহলে আশা করা যায় বিদ্যালয়টি অত্র অঞ্চলের জন্য শিক্ষাবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএন ফজলুল হক বলেন, বিদ্যালয়টি অনেকটা ভিতরে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় শিক্ষক যেতে চান না। তবে চলমান প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। আমরা গুরুত্ব সহকারে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক নিয়োগে চেষ্টা করব। শিক্ষক নিয়োগ জেলা থেকে হয়ে থাকে। আমরা জেলাতে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, এই অজপাড়া গাঁয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যালয়টির গুরুত্ব অপরিসীম। আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত আবেদন জানাবো শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে। এবং জেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করব।