সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও বেড়েছে মূল্যসূচক। মূলত বাছাইকরা ‘ভালো’ প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে পতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সূচক। এ ক্ষেত্রে ওষুধ, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক ও আর্থিকখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভর করেই সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকে। অন্যখাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হলেও এই চারখাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়। প্রথম আধা ঘণ্টার লেনদেনে ডিএসইতে ৫২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। ফলে লেনদেনের শুরুর দিকে সূচকের বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় হয় দরপতনের তালিকা। লেনদেনের শেষদিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দরপতন হলেও শুরুর মতো শেষের দিকেও লেনদেনের গতি ছিল বেশ ভালো। ফলে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। এমন লেনদেন বাড়ার সূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বড় ভূমিকা পালন করেছে বাছাই করা ৩০টি কোম্পানি। ভালো কোম্পানি হিসেবে বাছাই করা ৩০টির মধ্যে ১৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে সাতটির এবং পাঁচটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, লেনদেনে শুরুর ৩০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৩৩ পয়েন্ট। আর লেনদেনের ২ ঘণ্টা ৫১ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫২ পয়েন্ট। সূচকের এমন বড় উত্থানের পর হঠাৎ করেই দর হারাতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। ফলে সূচকও নিচের দিকে নামতে থাকে। অবশ্য এর মধ্যে দাম বাড়ার প্রবণতা ধরে রাখে বড় মূলধনের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ, ওষুধ, ব্যাংক ও আর্থিকখাতের বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয়। ফলে দাম কমার তালিকা বড় হওয়ার পরও সূচক ঊর্ধ্বমুখী থেকে দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে এক হাজার ১২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৯টির। আর ৮৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম কমার তালিকা বড় হলেও টেলিযোগাযোগ খাতের একটি প্রতিষ্ঠানেরও দরপতন হয়নি। এ খাতের তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া ওষুধখাতের ১৯টির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে নয়টির। আর ব্যাংক খাতের নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ছয়টির। আর্থিকখাতের ১১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে নয়টির।
অপরদিকে সব থেকে বেশি দরপতন হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের। এ খাতের ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ১৪টির। এছাড়া বিমাখাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২৫টির। প্রকৌশল খাতের ১৯টির শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং কমেছে ২১টির। খাদ্য খাতের আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে আটটির।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩১৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে টানা ছয় কার্যদিবস সূচক বাড়লো।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৮৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৭৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি ডিএসইতে ১ হাজার ৬০১ কোটি ২০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর গত আট মাসে ডিএসইতে দেড় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়নি। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জাহোলসিম বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইস্টার্ন হাউজিং মেট্রো স্পিনিং এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৩০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৯টির দাম বেড়েছে, বিপরীতে কমেছে ১২৮টির এবং ৭৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।