বর্তমান প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে সাধারণ ও পরিচিত একটি শব্দ হচ্ছে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা, যে তরুণ তার তারুণ্যের বলে বলীয়ান হয়ে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখত আজ সেই তরুণ কেন জানি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা কি কখনো ভেবেছি এর প্রধান ও মূল কারণ কি? যদি এর জরিপ করা যায় তাহলে দেখা যাবে, ডিপ্রেশনই এর প্রধান ও অন্যতম একটি কারণ। একজন যুবকের ডিপ্রেশনের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিতে যদি পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে যুবক তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় হারামের সাময়িক প্রশান্তি লাভের চেষ্টা আজ তাকে এই কঠিন সমস্যার সম্মুখীন করছে।
ইসলামের প্রতিটি হারাম কাজ মানুষের কাছে স্পষ্ট। যখন কেউ নিজেকে হারামে জড়িয়ে ফেলে তখন স্বাভাবিকভাবেই তার অন্তরে কাঁপুনি সৃষ্টি হয় যে, তার এই কাজটি করা উচিত হচ্ছে না। কেননা, প্রতিটি আত্মা চায় হারাম থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। কিন্তু আমরা আমাদের যৌবনের উত্তাল তাড়নায় আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সেই হারামেই জড়িয়ে পড়ি। যার ফলে এই সাময়িক প্রশান্তিই দীর্ঘস্থায়ী ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা কখনোই খুঁজে দেখি না যে, দীর্ঘস্থায়ী প্রশান্তি মূলত কিসের মধ্যে নিমজ্জিত।
রাসূল সা: বলেছেন, ‘প্রতিটি মানব শরীরে একটি মাংসের টুকরো রয়েছে এটি যখন সুস্থ তখন পুরো শরীর সুস্থ আর এটি যখন রোগাক্রান্ত হয় তখন পুরো শরীরই রোগাক্রান্ত। আর এটিই হচ্ছে অন্তর বা কলব’ (সহিহ বুখারি-৫২)।
কিন্তু এই কলব কিসের মাধ্যমে সুস্থ থাকে এটি না জানার কারণেই আজকে আমাদের অন্তর রোগাক্রান্ত, ফলে দীর্ঘস্থায়ী হয় ডিপ্রেশন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘অন্তরসমূহের প্রশান্তিই হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে’ (সূরা রাদ-২৮)। জিকিরের অনেকগুলো অর্থ রয়েছে। আমরা যদি সবগুলোকে একত্র করি তাহলে এটি দাঁড়ায়, জীবনের সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে তার বিধিনিষেধ মেনে চলে পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিস মেনে চলায় হচ্ছে জিকির। আর এই জিকির হচ্ছে অন্তরের প্রশান্তি। আমরা যদি অন্তরকে প্রশান্তি না দিয়ে দিন-রাত এর ওপর জুলুম করতে থাকি তাহলে এই অন্তর দীর্ঘস্থায়ী ডিপ্রেশনের দিকে ধাবিত হবে- এটি স্বাভাবিক বিষয়।
এ জন্যই আমরা যখন পাপকাজ বা আল্লাহর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করি তখন আল্লাহর কাছে এই বলে ক্ষমা চাই, হে আল্লাহ আমরা আমাদের আত্মার ওপর জুলুম করেছি অর্থাৎ আমার আত্মা আপনার জিকির করতে চাইছিল কিন্তু অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমি আপনার দেয়া বিধানকে উপেক্ষা করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে বা আমাদের মাফ করুন।
তাহলে এ কথা স্পষ্ট যে, কলবের ওপর জুুলুম বা আজকের এই সাময়িক হারামের প্রশান্তিই আমাদের দীর্ঘস্থায়ী ডিপ্রেশনের কারণ।
এখন কয়েকটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা যাক– আজকের প্রজন্ম সবাই জানে, যুবক-যুবতীর অবাধ মেলামেশা হারাম। তবুও হারাম সম্পর্কে আবদ্ধ। ফলাফল ডিপ্রেশন।
– এই প্রজন্ম মাত্রই জানে, হস্তমৈথুন একটি জঘন্য ও নিকৃষ্টতর হারাম কাজ। কিন্তু সাময়িক প্রশান্তিতে এই কাজ করেই যাচ্ছে। ফলে কিছুক্ষণ পরই তার মুখে হতাশার ছাপ।
– মাদকতা আজকের সমাজের অন্যতম ডিপ্রেশনের কারণ অথচ সবাই জানে এটি হারাম। কিন্তু সাময়িক প্রশান্তি এনে দেয় বলে যুবকরা এর পেছনে ছুটছে।
আমরা যদি ডিপ্রেশনের প্রতিটি কারণ এভাবে পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে- প্রত্যেকটির পেছনেই এই হারামের সাময়িক প্রশান্তি লাভের আকাক্সক্ষাই কাজ করে।
তাই আসুন, আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করি, নিজের বিবেককে জাগ্রত করি। প্রতিটি কাজ করার আগে এর পরিণতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করি। সর্বোপরি আল্লাহর দেয়া বিধিনিষেধ মেনে তার দেয়া পথে চলেই তার জিকিরের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি খুঁজি তবেই আমাদের ডিপ্রেশনকে দূর করা সম্ভব।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া