ইট ছুড়লে পাটকেল খেতে হয়, এটি স্বতঃসিদ্ধ কথা। এতকাল ধরে প্রকৃতির সাথে মানবজাতি যে বিরূপ আচরণ করেছে, এখন প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। জলবায়ুর চরমভাবাপন্নতা তারই এক প্রতিউত্তর। সারা বিশ্বে খরা, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, প্রচ- উত্তাপ-উষ্ণতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অজ্ঞাত সব রোগবালাই বিশ্বসভ্যতার জন্য এখন এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এসব দুর্যোগ দুর্বিপাক ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাতে মানুষ এখন ভীত, শঙ্কিত, বিস্মিত ও বিষণ্ণ আগামী দিনের পরিণতির কথা ভেবে। তবে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এমন পরিস্থিতি মানুষের নিজেরই হাতের কামাই। এখন ইউরোপসহ বিশ্বজুড়েই চলছে প্রচ- খরা ও অসহনীয় দাবদাহ। এটিকে বলতে হবে মানবজাতির পাপের প্রায়শ্চিত্ত। জলবায়ু এমন ভয়ঙ্কর খেয়ালিপনার অন্যতম একটি প্রধান হেতু- বৈশ্বিক উষ্ণতা। এর পেছনে রয়েছে শিল্পোন্নত পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের শিল্প-কারখানা থেকে অনবরত ও মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ। যে কারণে তার বহু অশুভ প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার কারণেই অনাবৃষ্টি, দাবদাহ, খরা। এখন উষ্ণতাজনিত দুর্দান্ত খরা দাবদাহ ইউরোপসহ পুরো পৃথিবী যেন উত্তপ্ত চুল্লি হয়ে উঠছে। সে কারণে সেই মহাদেশের বহু নদ-নদী এখন শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। সেই সাথে পানির অভাবে ক্ষেত-খামারের মাটি ফেটে চৌচির হচ্ছে। এর পরিণতিতে আগামীতে শস্য উৎপাদনে ঘাটতি, সেই সাথে কৃষিজীবীদের জন্য দারিদ্র্য অপেক্ষা করছে। এই সমস্যা প্রকৃতপক্ষে আরো বহু সমস্যার শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটাবে। জলবায়ুর এমন বৈরিতা সামনে রেখে কিছুকাল আগে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইংল্যান্ডে। সে সম্মেলন থেকে যে সুপারিশগুলো প্রস্তাবাকারে গৃহীত হয় তার অন্যতম ছিল কার্বন নিঃসরণ দ্রুত হ্রাস করা, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত কমিয়ে আনার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ। কিন্তু উদাসী মানুষ হয়তো তার অস্তিত্ব অবসানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। সে জন্যই মনে হয় সেই প্রস্তাবগুলো এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্তাকারে থেমে আছে। এমন অনিবার্য ধ্বংস নিয়ে কারোই যেন কোনো সংবিত নেই। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব কপ-২৬ সম্মেলনকালেই এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন যে, মানবসভ্যতা এখন ধ্বংসের মুখোমুখি, ভয়াবহ সেই দুর্যোগের ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠেছে। এর প্রতিবিধানের জন্য আর মুহূর্তকাল অপেক্ষা করা যাবে না। সেই মুহূর্তকাল এখন বছর ঘুরতে চলছে, কিন্তু কেউই সে আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না। এ দিকে, কপ-২৬ সম্মেলন থেকে যে কয়টি দেশের নামোল্লেখ করে বলা হয়েছিল এরাই জলবায়ুর বিরূপতার প্রথম ও প্রধান শিকার হবে। তার মধ্যে বাংলাদেশের নাম উপরের দিকে। তার আলামত আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। সে সম্মেলন থেকে হুঁশিয়ার করা হয়েছিল, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের এক বিরাট এলাকা সমুদ্রের লোনা পানির কয়েক ফুট নিচে তলিয়ে যাবে। অতি সম্প্রতি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদসহ দক্ষিণাঞ্চলের বহু স্থান অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে হাঁটুপানির নিচে চলে যাচ্ছে বারবার। জলবায়ুর এমন অস্বাভাবিকতার কারণে দেশব্যাপী প্রচ- খরা, উষ্ণতা, অনাবৃষ্টি, যা কিনা এই ভরা বর্ষা মৌসুমের আবহাওয়ার সাথে একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব আলামত এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের চিন্তিত, ভীত করে তুললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে তেমন কোনো বোধ-বিবেচনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করা বা বোঝার নজির দেখা যায়নি। অর্বাচীন জনতার মতো যেন তাদের ভাবভঙ্গি। এমন বিপর্যয় প্রকৃতপক্ষে মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তো বটেই, সেই সাথে সড়ক জনপথ মারাত্মকভাবে ক্ষতবিক্ষত করে চলেছে। জলবায়ুর বৈরিতা দিনকে দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এ বছর খরার কারণে দেশে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। এই ভরা বর্ষা মৌসুমে কৃষকদের যখন ক্ষেত-খামারে অপরিসীম আনন্দে সব পরিশ্রম ভুলে গিয়ে কেবলই লাঙ্গল-জোয়াল নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, এবার কিন্তু সেই সময়েই সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। কৃষক এখন ঘরে বসে বৃষ্টির অপেক্ষায় হা-হুতাশ করছে। নদী-খালের পানি শুকিয়ে জেলেদের মাছ শিকারও বন্ধ। কৃষক, জেলে বিষণ্ণ ও ম্লান মুখে ভাবছে আগামীতে তাদের কি নিরন্ন থাকতে হবে? সেই সাথে দেশের কোন পরিণতি ঘটবে? ধান না ফললে খাদ্যঘাটতি অপরিহার্য। ঋণভারে জর্জরিত দেশ, সেই সাথে রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায় উজাড় হওয়ার পথে, খাদ্য আমদানি করবে কিভাবে? ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানিতে ভাটা পড়েছে, ১০ লাখ ১০ হাজার টনের মতো চাল আমদানির কথা ছিল; কিন্তু চাল এসেছে মাত্র ৩৪ হাজার টন।
এ দিকে, জলবায়ুর যে বিপর্যয়কর অবস্থা তার ওপর একশ্রেণীর ক্ষমতাধর দুরাচারী নির্বিবাদে যত অপকর্ম করে যাচ্ছে, যার জের হিসেবে ঘটছে নানা বিপদ। এদের অপকর্মের জন্য হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে ক্ষেত-খামার বিলীন হচ্ছে, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে যা কিনা জলবায়ুজনিত সমস্যাকে প্রকটতর করে তুলবে। এসব অপকর্মের হোতাদের পেছনে রাজনৈতিক মদদ থাকায় তাদের ঔদ্ধত্য সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন বিবেকহীনতার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ভূবিজ্ঞানীরা তাদের অধ্যয়ন-গবেষণাসঞ্জাত জ্ঞান থেকে এই বার্তা দিচ্ছেন, পাহাড়ের তাৎপর্য অপরিসীম। পাহাড় পৃথিবীর ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে। পাহাড়, টিলা ধ্বংস করা হলে এই ভূখ-ের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। পাহাড় টিলাকে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না। যেভাবে পাহাড় ধসে এখন হতাহতের ঘটনা ঘটছে; কিন্তু পাহাড় ধ্বংস করা হলে তার পরিণতি তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ হবে। পাহাড় ধ্বংস হলে ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের প্রকোপ বাড়বে, প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হবে। জীবন ও সম্পদ বিনষ্ট হবে অনেক। প্রকৃতি বা পাহাড়কে প্রাকৃতিকভাবেই থাকতে দিতে হবে। পাহাড় প্রকৃতির অপরূপ দান এবং অতুলনীয় সৌন্দর্যের আধার। দেশের ও জনগণকে পাহাড় পর্বত টিলা রক্ষায় অনন্য নজির স্থাপন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে সরকার ও নাগরিকরা পর্বত ও পাহাড় রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। নিবিড় পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা তাদের পাহাড় পর্বতকে নিয়েই দেশকে গড়ে তুলছেন। সেখানে পাহাড়ে পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করে, সৌন্দর্য বাড়িয়ে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। ফলে সারা বছরই সেখানে পর্যটকদের বিচরণ থাকে। আর এ খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগ রয়েছে। পরিকল্পনামাফিক এমন বাড়িঘর হোটেল-মোটেল পাহাড়ে নির্মাণ করা দরকার, যাতে কোথাও ঝড় বৃষ্টি বা বর্ষায় এসব স্থাপনার কোনো ক্ষতির কথা শোনা যাবে না। আমাদের দেশে সেটি করা হচ্ছে না বলে পাহাড়ে প্রতি বছর নানা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। কয়েক বছর আগেও দেশ বহু ছোট-বড় পাহাড় টিলায় সমৃদ্ধ ছিল; কিন্তু ক্ষমতাধর কিছু লোকের লোভ-লালসার শিকার হয়ে স্রষ্টার এই অসামান্য দান তথা সম্পদ বিনষ্ট করে পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। পাহাড় ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং একই সাথে বায়ুম-লে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেই সাথে ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্সের সুরক্ষা দেয়। এত সব কিছুর বিবেচনায় বিভিন্ন দেশে পাহাড়গুলোকে সযতনে দেখভাল করা হয়। যদি একান্তই কখনো প্রয়োজন হয় সেসব পাহাড়ে রাস্তাঘাট নির্মাণের, তবে পাহাড়ের তেমন ক্ষতি না করে সুড়ঙ্গ কেটে পথ তৈরি করে নেয়া হয়। আর আমাদের এখানে নির্বিচারে বছরে ৩৬৫ দিনই যার যখন যেভাবে মন চায় নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পাহাড় কাটছে- কেউ বসবাসের জন্য বা পথ রচনা করতে, কেউবা আবার বাণিজ্যি করতে পাহাড় কেটে আবাসিক প্লট সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে।
একইভাবে বন কর্তৃপক্ষের হেলা অবহেলায় এমনই কথা বলতে হয়, তাদের সহযোগিতায়ই দেশের বনাঞ্চল উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। অথচ জলবায়ু বৈরিতার মুখে এবং তার ভয়াবহ ছোবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বিভিন্ন কর্মসূচিসহ বৃক্ষরোপণকে গুরুত্ব দিচ্ছে গোটা বিশ্বই। উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা, তার অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সে দেশে জলবায়ু মোকাবেলার জন্য বৃক্ষরোপণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ট্রুডো ঘোষণা দিয়েছেন, কানাডাকে সবুজ বনানীতে ঢেকে দিতে কোটি কোটি বৃক্ষ রোপণ করা হবে। বহু দেশ জলবায়ু বৈরিতাকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন কর্মসূচিসহ বৃক্ষরোপণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা-উত্তরকাল থেকে ফি বছরের মধ্যভাগে বর্ষা বাদলের মৌসুমে বিপুল অর্থ ব্যয় করে বৃক্ষরোপণের একটি সপ্তাহ পালন করে সরকার এবং লাখ লাখ গাছ রোপণ করার ‘রেওয়াজ’ রয়েছে। বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রতি বছর যে লাখ লাখ বৃক্ষরোপণ করা হয়, তার একটি হিসাব হয়তো কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া যেতে পারে; কিন্তু রোপিত এসব গাছের কতগুলো বেঁচে থাকছে, সে কথা জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই ‘লা’ জবাব হয়েই থাকবে। তবে কেন এত অর্থ ব্যয় আর প-শ্রম। এ জন্য পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন তাৎপর্যহীন ও কোনো অবদানই রাখতে পারছে না। পরিবেশের সুরক্ষা, দেশের কাঠের প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রতিটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল থাকাটা আদর্শিক অবস্থান; কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। তবে এটিও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে বনরক্ষকদের কর্মকা-ে। বন বিভাগের ভূমিকা যদি পুরোপুরি পর্যালোচনা করা হয়, তবে তাদের ব্যাপারে এমন কথা মনে জাগবে- বন তো বনই তাতে আবার কী দেখার আছে। বন শুধু প্রকৃতিতে বৈচিত্র্য আনে এমন নয়। তা পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে। মানুষের বসবাসের জন্য লোকালয়, আর পশুপাখির জন্য দরকার নিরাপদ অরণ্য। বনরক্ষকরা সেই অরণ্যে হস্তক্ষেপ করে পশুপাখির স্থানকে বসবাসের অনিরাপদ থেকে তুলছে। সে কারণে বনের জন্তু জানোয়ারকে এখন প্রায়ই লোকালয়ে চলে আসতে দেখা যাচ্ছে। এসব জন্তু জানোয়ারের দেহে যে মারাত্মক রোগ-ব্যাধির জীবাণু রয়েছে তা মানব সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বব্যাপী যে মানবদেহে যত অজ্ঞাত রোগের সংক্রামণ লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটি পশুর লোকালয়ে প্রবেশের কারণে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদ-নদী যখন পানিতে টইটম্বুর হয়ে উদ্দম গতি চলে, তখনই প্রকৃতপক্ষে সেটি সর্বনাশা হয়ে থাকে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এখন নদ-নদীর এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে পড়ছে, তাতে কূলের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শুধু ক্ষেত-খামার নয়; বহু গ্রাম, নানা স্থাপনা মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এ জন্য প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষকে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ নদী-নদীর বক্ষে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন। এভাবে বালু তুলে আনার পরিণতি কতটা যে মারাত্মক সেটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও চোরায় না শোনো ধর্মের বাণী। এসব দুরাচারী দেশে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে নিয়ত অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করে বিপুল অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে। এমন কর্মকা-ের পরিণতি হচ্ছে নদীর স্রোতের বিরূপ প্রভাব ফেলা এবং নদীভাঙন তীব্রতর করে তোলা। বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ বিঘিœত হয়ে থাকে। সেটিই নদীভাঙনের অন্যতম কারণ। বর্ষায় নদীভাঙন স্বাভাবিক হলেও তা কখনো কখনো তীব্রতর হয়। একটি কারণের কথা বলা হয়েছে। আর যেসব কারণে নদী ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, সেটি হলো নদীর তীর রক্ষায় ও বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রচুর অবকাঠামো গড়ে তোলা। তবে এসব বিনিয়োগের আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না কখনোই। সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব ও অনিয়ম দুর্নীতির ফলে নদী রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয় বটে; কিন্তু প্রতি বছরই এসব বাঁধ ভেঙে যায়। তাই কোনো ফল পাওয়া যায় না। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে- ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের এক হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১৭ লাখ ১৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এমন কিছু বাঁধ কখনোই মানবকল্যাণে আসে না; বরং ক্ষতিও বেশুমার। আধুনিকপরিবেশ বিজ্ঞানীদের সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, সৃষ্টিকর্তা পাহাড় পর্বত নদী-সাগর ভূপ্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন এমন একটি ভারসাম্য সহকারে যে, এর কোনো ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম ঘটালে তা শুধু প্রকৃতিকে নয়, গোটা পরিবেশেই সৃষ্টি হয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া। গঙ্গা নদীর যে স্রোতধারা পদ্মা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ভারতীয় অংশে ফারাক্কা বাঁধ সে মূল স্রোতধারা বন্ধ করার ফলে আজ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলজুড়ে হয়েছে মরুভূমির আলামত। গ্রীষ্মকালে প্রচ- গরম আর শীতকালে তীব্র শীত। হিমালয় এলাকার বনরাজি নিশ্চিহ্ন হওয়ার ফলে আমাদের দেশে মাঝে মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।
ndigantababor@gmail.com