আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন তাঁর কাছে দোয়া বা প্রার্থনা করতে এবং সাথে সাথে প্রকাশ করেছেন দোয়ার সুফল। কল্যাণকামিতা ও উদারতা কাকে বলে! আল্লাহর বাণী- ‘তোমাদের পালনকর্তা (আল্লাহ) বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। যারা অহঙ্কারবশে আমার ইবাদতে বা দাসত্বে বিমুখ, এরা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে’ (সূরা আল মুমিন, আয়াত-৬০)। তা ছাড়া আমাদের জন্য উৎসাহজনক আল্লাহর বাণী- ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন (যদি তোমরা তোমাদের ফরিয়াদ যথাযথভাবে উত্থাপন করতে পারো, বিশেষ করে ‘তাওবায়ে নসুহা’ বা সঠিক তাওবা করার পর)। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আয্যুমার, আয়াত-৫৩)। ইউনুস আ:-এর মাছের উদরে বন্দী অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা ও আত্মসমর্পণের জবাবে আল্লাহর বাণী- ‘আমি তার (ইউনূস আ:) আত্মসমর্পণ ও ফরিয়াদে সাড়া দিলাম এবং (৪০ দিন পর মাছের উদর হতে নিষ্কৃতি দিয়ে) তাকে উৎকণ্ঠামুক্ত করলাম। আর এভাবেই আমি উৎকণ্ঠামুক্ত করব সত্যিকার মুমিনগণকে ভবিষ্যতে’(সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত-৮৮)।
কত বড় সুসংবাদ আমাদের জন্য! সত্যিকার মুত্তাকি, মুমিন ও মুসলিমরা অবশ্যই থাকেন উৎকণ্ঠামুক্ত। কারণ তারা যথাযথভাবে ধৈর্যশীল এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। তাই করুণাময় আল্লাহ তাদের সাথী এবং তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ যার সাথী ও যার জন্য যথেষ্ট, সে সৌভাগ্যবানের কী কোনো দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা থাকতে পারে? নিশ্চয়ই নয়। আল্লাহর যেকোনো সিদ্ধান্তে তারা থাকেন সানন্দে রাজি বা সম্মত।
আল্লাহ মুমিনগণের বন্ধু ও অভিভাবক, নিয়ে যান তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে, ফলে তাদের জীবন হয় আলোকোজ্জ্বল। পক্ষান্তরে, যারা মুমিন নন (কাফির) তাদের বন্ধু হলো শয়তান, তাদের নিয়ে যায় আলো হতে অন্ধকারে, ফলে তাদের জীবন হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং অবশেষে তাদের স্থান হবে জাহান্নামে চিরকালের জন্য। আল্লাহর বাণী- ‘যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোতে নিয়ে যান। আর যারা কুফরি অবলম্বন করে তাদের অভিভাবক শয়তান, যারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা সবাই জাহান্নামবাসী এবং সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-২৫৭)। দোয়া কবুলের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ- নিঃসন্তান বৃদ্ধ জাকারিয়া আ: দোয়া করলেন আবেগাপ্লুত বা আশ্চর্যান্বিত হয়ে যখন মরিয়ম আ:-এর সামনে দেখতে পেলেন জান্নাতি খাদ্য ‘বাইতুল মুকাদ্দাসে’ অবস্থানরত অবস্থায়। জাকারিয়া আ:-এর দোয়া- ‘হে আল্লাহ! আমাকে একটি পবিত্র সন্তান দান করুন। একমাত্র আপনিই আমাদের ফরিয়াদ শ্রবণকারী’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত-৩৮)। আল্লাহ সাথে সাথে তার ডাকে সাড়া দিলেন- ‘আল্লাহ আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন আপনার পুত্রসন্তান, যার নাম হবে ইয়াহহিয়া। যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না। তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত-৩৯)। আলোচ্য আয়াতটি দোয়া কবুলের জ্বলন্ত ও বাস্তব উদাহরণ। স্বয়ং আল্লাহ আমাদের অনেক দোয়া কুরআনে দান করেছেন। যিনি দরখাস্ত মঞ্জুর করবেন, তিনিই দরখাস্ত লিখে দিলেন। ঠিকমতো দাখিল করতে পারলে মঞ্জুর হওয়ার ব্যাপারে কি আর কোনো সন্দেহ আছে? নিশ্চয়ই না। উদাহরণস্বরূপ-‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতও ওয়াকিনা আজাবান্নার’। অর্থ- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সূরা আল বাকারা, আয়াত-২০১)।
আল্লাহর বিশেষ রহমতে আমি নিজে দোয়া কবুলের প্রমাণ পেয়েছি বলে মনে করি, তবে আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন। উদাহরণস্বরূপ- জীবনের সর্বশেষ পরীক্ষায় ফেল করলাম, যা কিছুতেই না বিশ^াস করতে পারছিলাম, না মেনে নিতে পারছিলাম। গভীর রাতে আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাইতে চাইতে চোখের পানিতে জায়নামাজ খানিকটা ভিজিয়ে ফেললাম (১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে)। ১০-১১ দিনের মাথায় আমার হাতে একখানা পত্র এলো, যা আমার মহানন্দের কারণ ছিল আল্লাহর রহমতে। কারণ আমার ফেল, পাসে রূপান্তরিত হলো। তার মানে আমি পাস করলাম জীবনের শেষ পরীক্ষায় আল্লাহর অসীম রহমতে। লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ ও চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস