জাতিসংঘকে গুম নিয়ে তদন্তে সাহায্যের অনুমতি দিতে
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিৎ জোরপূর্বক গুমের অভিযোগগুলোর স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আন্তর্জাতিক আহবানে সাড়া দেয়া। ৩০শে আগস্ট বিশ্ব গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে বলা হয়, স¤প্রতি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তিনি সরকারের প্রতি গুমের ভিক্টিম, তাদের পরিবার এবং সুশীল সমাজকে সঙ্গে নিয়ে একটি বিশেষ মেকানিজম বা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার আহবান জানান, যার মাধ্যমে দেশের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের অভিযোগগুলো তদন্ত করা যাবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী ওই মেকানিজম বাস্তবায়নে তিনি জাতিসংঘের সহযোগিতার প্রস্তাবও দেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের নির্যাতন বন্ধ করতে বাংলাদেশের কৌশলগত এবং বাণিজ্য সহযোগীরা সরকারের প্রতি এরইমধ্যে আহবান জানিয়েছে।
এ নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, অসংখ্য গুমের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের যুক্ত থাকার যে প্রমাণ রয়েছে তা বেশ শক্ত। বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ এ নিয়ে তাদের অজ্ঞতা জাহির বন্ধ করা এবং অভিযুক্তদের জবাব ও দায় নিশ্চিতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করা। ২০২১ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে গুম নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে এ ধরণের ৮৬টি ঘটনা তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ সরকার ওই রিপোর্ট অস্বীকার করা ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এছাড়া হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে কোনো ধরণের আপডেট তথ্যও দেয়নি বাংলাদেশ সরকার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের ওই রিপোর্টে বলে, ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন র্যাব ও এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ সরকার ভিক্টিমদের পরিবারকে হুমকি ও ভয় দেখাতে থাকে। যদিও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সত্যিকার অর্থে সেখানে দাবিগুলো যাচাই করে দেখছিল। মায়ের ডাক নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ অন্তত ১০টি পরিবারকে হুমকি দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে তাদের থেকে জোরপূর্বক মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। এতে তারা দাবি করেছেন, তাদের কোনো স্বজন গুম হয়নি এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য কিংবা বর্তমান অবস্থা জানতে কোনো বড় উন্নয়ন না দেখে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এর পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ র্যাব কর্মকর্তাদের ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে গভীর তদন্ত এবং অপরাধের দায় থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানান যাতে, গুম নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে করে এ ইস্যু চিহ্নিত করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যাবে। তিনি বাংলাদেশকে গুম প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বীকৃতি দেয়ার কথাও বলেন। মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বছরের পর বছর ধরে কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে, তাদের প্রিয়জনের হদিস সম্পর্কে তাদের জানানো হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ অপরাধীদের দায় নিশ্চিতে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসটি পালন করা।