শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন

চা পাতা উত্তোলনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন চা শ্রমিকরা, কাঁচাপাতা রাখার ট্রাপ হাউজ ভরপুর

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২

চা বাগানগুলোতে টানা ১৯ দিন শ্রমিকদের কর্মবিরতিকালের বিরাট ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন তৎপর চা শ্রমিকরা। কর্মবিরতির কারনে কাঁচা পাতা উত্তোলন বন্ধ থাকায় চা গাছ নির্ধারিত সাইজের চেয়ে এক থেকে দেড় ফিট বড় হয়ে যায়। চা পাতার কুঁড়ি বড় হয়ে শক্ত হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিকরা কাচি বা দা দিয়ে পাতা উত্তোলন করছেন। গত কয়েকদিনে শ্রমিকরা লাখ লাখ কেজি চা পাতা তুলে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। রেকর্ড পরিমাণ এ পাতা রাখার স্থান সংকুলান হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। বিরতিহীনভাবে ফ্যাক্টরি চললেও চা পাতা উৎপাদনে স্মরণকালের প্রচুর কাঁচামাল কাঁচাপাতা সংগ্রহ হচ্ছে। গতকাল বুধবার (৩১ আগস্ট) সকালে এমনটাই দেখা যায় বিভিন্ন চা-বাগানে। কাঁচাপাতা রাখার ট্রাপ হাউজ ভরপুর হয়ে আছে। তাই কোনো কোনো বাগান কর্তৃপক্ষ ভিন্ন স্থানে নিয়ে পাতা রাখছে। চা-শ্রমিকরা বলছেন, জীবনে এত পাতা উত্তোলন করিনি। সর্বোচ্চ ৫০ কেজি উত্তোলন ছিল রেকর্ড। কিন্তু গত ২ দিনে জনপ্রতি আমরা ১০৬-১১০ কেজি পর্যন্ত পাতা উত্তোলন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছি। নারী ও পুরুষ শ্রমিক পাতা তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পাতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় সকাল বিকেল চলছে বাগানে বাগানে পাতা চয়ন। বাগান ব্যবস্থাপকরা বলছেন, আমরা এত বেশি চা পাতা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। ২৪ ঘণ্টা ফ্যাক্টরি চালাচ্ছি। পাতা রাখার স্থান দিতে পারছি না। চা পাতা উৎপাদনের গুণগতমান রক্ষা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট চা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচাপাতা রাখার ট্রাপ হাউজ ভরপুর। তাই পাতা রাখা হয়েছে ম্যানেজার বাংলো ও কোম্পানি বাংলোর বারান্দায়। এছাড়াও পাতা রাখা হয়েছে সহকারী ম্যানেজারদের বাসার ফ্লোরে এবং মন্দির ঘরের পাশের বৈঠকখানার মেঝেতে। রাজঘাট চা বাগানের চা শ্রমিক রবিন্ড তান্দি(৩৬) বলেন, আমার জীবনে এত চা-পাতা ওঠাতে পারিনি। একদিনে ৯০ কেজি পাতা তুলেছি। শ্রীমঙ্গল ফুলছড়া চা বাগানের চা শ্রমিক সজিব কানু(৩৮) বলেন, এক বেলাতেই ১১৫ কেজি চা-পাতা তুলতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। যা নিজের কাছে অবাক লেগেছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ১৯ দিন বাগান বন্ধ থাকায় চা গাছের পাতার কুঁড়ি অনেক লম্বা হয়েছে। তাই শ্রমিকরা বেশি বেশি করে পাতা তুলছেন। বাগানে পাতা রাখার মতো স্থান দেওয়া যাচ্ছে না। পাতা প্রক্রিয়াজাত ও লোডশেডিংয়ের কারণে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার মহসিন টি হোল্ডিং লিমিটেডের শ্রী গোবিন্দপুর বা বাগানের কারখানা ব্যবস্থাপক ফয়সল শামীম পাভেল বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির পর বাগান খুলার পর থেকে প্রতিদিন রেকর্ড পরিমাণ কাঁচা চা পাতা উত্তোলন হচ্ছে। আমার বাগানে গতকাল একজন শ্রমিক রেকর্ড পরিমাণ ২৫০ কেজির উপরে চা উত্তোলন করেছেন। চা শ্রমিকরা প্রতিজন দৈনিক ২৪ কেজি কাঁচা পাতা উত্তোলন করলে বর্তমানে হাজিরা ১৭০ টাকা। পরবর্তী প্রতি কেজি ৫ টাকা হিসেবে মজুরি পাবেন। যে শ্রমিক ২৫০ কেজি কাঁচা পাতা উত্তোলন করেছেন তার দৈনিক মজুরি ছাড়া অতিরিক্ত মজুরি এসেছে ১১৩০ টাকা। দৈনিক মজুরি ও অতিরিক্ত মজুরি হিসেবে তার একদিনের মোট আয় হয়েছে ১৩০০ টাকা। তিনি বলেন, এখন চায়ের পাতা শক্ত হয়ে যাওয়ায় হাত দিয়ে পাতা প্লাকিং করা হচ্ছে না। প্লাকিং করা হচ্ছে কাচি বা দা দিয়ে। ফলে শ্রমিকরা রেকর্ড পরিমাণ কাঁচা পাতা উত্তোলন করতে পারছেন। অনেক শ্রমিক অতিরিক্ত হাজিরার লোভে গাছের ডাল পর্যন্ত কেটে নিয়ে আসছেন। আমার বাগানে শত-শত বস্তা কাঁচা চা পাতা কারখানার বাইরে রাখা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com