এক. ‘সাবধান! যাদের হার্টে সমস্যা আছে, অনুগ্রহপূর্বক খেলা দেখা থেকে বিরত থাকুন।’ খেলা শুরুর আগে এমনি একটা সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিতেই পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তথা বিসিবি। এক-দুবার নয়, বার বার আমাদের সাথে এমন হয়। যখন মনে হয় জয়টা হাতের মুঠোয়, তখনি ছলচাতুরি করে ম্যাচটা যায় ফসকে। ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, বাংলাদেশ ক্রিকেটই যেন তার উপমা। গত রাতে ফের তার পূর্ণতা, জয়ের সুবাস ছড়িয়েও আরো একটা ব্যর্থতা। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলে, অবশেষে রঙিন হয়েছি বেদনার নীল রঙে।
দুই. একটা সময়ে ভাবা হতো, প্রকাশ্যেও বলা হতো, ‘জয় যদি চাও তবে, অভিজ্ঞদের খেলাও মাঠে।’ তবে এখন সময় বদলেছে; আফিফ, মোসাদ্দেক, মিরাজরা যেন তার জবাব দিয়েছে। গত রজনী দেখেছে যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভিন্ন রূপ, দেখেছে তারুণ্যের স্রোত। টি-টোয়েন্টি যে তারুণ্যের খেলা, বাংলাদেশ তাতে বরাবরই করেছে হেলা। ছোট্ট একটা তথ্যে দেই উপমা। অভিজ্ঞরা সবে মিলে ৫৫ রান ৪৯ বলে; আফিফ, মিরাজ, মোসাদ্দেক সেখানে ৫৭ বলে ১০১ রান তুলেছে স্কোরবোর্ডে। যেন বলছে, আমরা অগ্নি আমরা ঝড় আমরা তরুণ দল/দেহে মোদের শক্তি আছে, মনে প্রবল বল।
তিন. তুমিই সুখ, তুমিই দুঃখ। তুমিই আনন্দ, তোমাতেই স্বপ্নভঙ্গ। তুমিই আলো, তুমিই আঁধার; তুমিই পূর্ণিমা, পরিচয় আমাবস্যার। গত রাতের ইবাদত হোসেনকে এভাবেই তুলে ধরা যায়। গত রাতের নায়কও তিনি, খলনায়কও তিনি। শুরুর গল্পটা যেমন রঙিন, শেষটা গোধূলিতে বিলীন। প্রথম ২ ওভারে যেখানে ৩ উইকেট ১৩ রানে, শেষ ২ ওভারে কিনা সেখানে ৩৯ বিনা উইকেটে। ১১ রানই দিয়েছেন অতিরিক্ত খাতে। রাতের আধাঁরে শুরুতে আলো ছড়িয়েছেন চাঁদ হয়ে, ফের সেই চাঁদের আলোই ঢেকে দিয়েছেন কালো মেঘ হয়ে। অবস্থাটা ফুটে উঠে মমতাজের সেই গানে, ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস, বন্ধু তুই লোকাল বাস/আদর করে ঘরে তুলস, ঘাড় ধরে নামাস!’
চার. আরো একবার ক্যাচ মিস, আরো একবার সিদ্ধান্তহীনতা। আরো একটা হার, আরো একবার ব্যর্থতা আরো একবার ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা।
নতুন মোড়কে, সেই পুরনো রূপে সেই পুরনো মুশফিক বার বার ফিরে আসে। যেই বিশ্বাসে সাকিব দলে ফেরালেন তাকে, সেই বিশ্বাসকে যেন বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মুশফিক ফের ভূমিকা রাখলেন হারে। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, বড় সব মুহূর্তে, দল যখন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে; গ্লাভস হাতে তিনি আবির্ভূত হন খলনায়ক চরিত্রে। কখনো ক্যাচ মিসে, কখনো হাত ফসকে বল সীমান্তে, কখনো রান আউটে হন বাধা, কখনো বা রিভিউ বিভ্রাট; কথা উঠলেই মস্ত অভিমান বাঁধে জমাট। আর কত, আর কতটা পথ পেড়োলে তবে সুবোধের উদয় হবে!
পাঁচ. ক্যাচ দিলেন, ক্যাচ ড্রপ। ফের ক্যাচ দিলেন, নো বলে বেঁচে গেলেন। এবার ব্যাট ছুঁয়ে বল কিপারের গ্লাভসে, আম্পায়ার নট আউট দিলেন; রিভিউও তুলে রাখলেন। আরো একটা ক্যাচ উঠল, তা ফ্রি হিট ছিল। রান আউটের সম্ভাবনা কান ঘেঁষে চলে গেল। কপাল কারে বলে, কত প্রকার ও কী কী? সবই দেখা পাবেন এক কুশল মেন্ডিসে। অবশেষে ৫মবারের চেষ্টায় যখন ফিরলেন সাজঘরে, ৩৭ বলে ৬০ রান তখন তার ব্যাটে। অথচ ফিরতে পারতেন দ্বিতীয় ওভারেই, কিন্তু ফিরলেন ১৪.৩ ওভারে। দুই-দুটি জীবনের জন্য কুশল মেন্ডিসের পক্ষ থেকে, মুশফিকুর রহিমকে একটা ধন্যবাদ দেয়া যেতেই পারে।
ছয়. এবার ফিরি অধিনায়কত্বে। সাকিব বাংলাদেশের সব থেকে চতুর ও বুদ্ধিমান অধিনায়ক, একবাক্যে সবাই স্বীকার করে। শুধুই সমর্থক নয়, সতীর্থ, ম্যানেজমেন্ট এমনকি বিদেশীরাও চোখ বন্ধ করে সমর্থন দেয় এই কথাতে। সাকিবের হাতে অধিনায়কত্ব না থাকায়, বাংলাদেশ ১০ বছর পিছিয়ে আছে বলেও মন্তব্য ভেসে আসে। যেই সাকিবে এত আস্থা, এতো বিশ্বাস, যার চোখে স্বপ্ন দেখে, যার পায়ে পা রেখে পথ চলে গোটা বাংলাদেশ; তার থেকে এমন অধিনায়কত্ব একটু দৃষ্টিকটুই বটে। বিশেষ করে তিন নম্বর ওভারে মুস্তাফিজকে ফিরিয়ে না এনে চতুর্থ ওভারে আনা কিংবা এক ওভারেই মিরাজের সীমাবদ্ধতা আর মোসাদ্দেককে ব্যবহার না করা খানিকটা প্রশ্ন তুলে তার পরিকল্পনার দিকে।