ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির উদ্দেশ্যে সংগঠিত অপরাধ অথবা রাষ্ট্রীয় বা অ-রাষ্ট্রীয় সংস্থা, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গুপ্তচরবৃত্তি, ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য চুরি, তথ্যবিকৃতি, মানি লন্ডারিং, আর্থিক প্রতারণা, কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত এরূপ বিষয়ে হস্তক্ষেপজনিত অপরাধকে সাইবার ক্রাইম বলা হয়। আমাদের ব্যবহারকৃত ইমেইল, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইনে কেনাকাটা করা, ব্যাংকিং সার্ভিসসহ ব্যবহার করা সবকিছুই সরাসরি সাইবার দুনিয়ার অংশ। বর্তমানে বেশির ভাগ কাজের সঙ্গেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনলাইন বা ইন্টারনেটের যোগসূত্র রয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা যেমন সাইবার দুনিয়ায় বিচরণে অভ্যস্ত হচ্ছি, তেমনি অপরাধীরাও তাদের অপরাধ সংগঠনের জন্য এই প্ল্যাটফরমকে ব্যবহার করছে।সাইবার অপরাধ বর্তমান সময়ের খুব পরিচিত এবং সবার খুব অপছন্দনীয় একটি শব্দ। তৃতীয় বিশ্বে কমবেশি সবাই কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। এসব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অদক্ষতার কারণে প্রতিনিয়ত তারা সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। আমাদের দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়ে তেমন কোনো সুস্পষ্ট আইন বা নির্দেশনা নেই। মালটিমিডিয়া সুবিধাসংবলিত হ্যান্ডসেট তরুণদের হাতে হাতে যা দিয়ে তারা তাদের নিজেদের দুনিয়া তৈরি করে ফেলছে। এর মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও চিত্র সংরক্ষণ ও শেয়ার প্রযুক্তিতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের মোবাইল ফোনে। ইন্টারনেট, ইউটিউব, পর্নোগ্রাফি আসক্তিতে প্রায় ৬২ শতাংশ যুবসমাজ যৌনহয়রানি ও ধর্ষণসহ বড় বড় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। যা প্রতিনিয়ত মহামারির আকার ধারণ করছে। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা অনুযায়ী সাইবার হামলায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি নারীরা। এই অপরাধের শিকার হওয়াদের ৪৪ শতাংশই মনে করছেন সাইবার অপরাধীদের তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেওয়া গেলে দেশে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
এছাড়া দেশের বেশির ভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ নেই। ফলে খুব সহজেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং অর্থ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে প্রায় ৫ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে কেবল গত ছয় মাসে প্রায় ২ হাজার লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। গত ২০২১-এ সাইবার অপরাধসংক্রান্ত প্রায় ২ হাজারেরও অধিক মামলা করা হয়েছে। বিভিন্ন পন্থায় মানুষ সাইবার অপরাধীদের টার্গেটে পড়ছে এসব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। আজকের দুনিয়ায় বেশির ভাগ কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন করা সম্ভব। তথ্য সংরক্ষণ এবং সরবরাহের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে সাইবার সিস্টেমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষ এখন ডিজিটাল কারেন্সি ব্যবহারেও অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ফলে অপরাধীরাও তাদের অপরাধ করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে। সাইবার ক্রাইম বন্ধে এবং ভুক্তভোগীদের সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকার সাইবার মনিটরিং সেল গঠন করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুব সামান্য। এসব সাইবার অপরাধ বন্ধে আইন যতটা কার্যকর তার চেয়ে বেশি জরুরি আমাদের সচেতনতা, যথাযথ জ্ঞান, ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়া। কী করলে হ্যাকিংয়ের হাত থেকে বাঁচা যাবে, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা হলে কাকে জানাতে হবে, প্রতিকারের জন্য কোথায় যেতে হবে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি অনলাইন পদ্ধতিতে কাজ করে তাদের নিজস্ব সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল দেশে রূপ নিয়েছে। সাইবার ক্রাইমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হলে সেটা সারা দেশের জন্যও একটা বড় ক্ষতি। তাই সাইবার অপরাধ রোধকল্পে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাম্প্রতিক এক খবরে দেশে সাইবার অ্যাটাকের আশঙ্কা করা হয়েছে। কাজেই সময় থাকতে ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়