লেগ-স্পিনার রায়ান বার্লের আগুন ঝড়ানো বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ানডেতে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে এই প্রথম ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেলো জিম্বাবুয়ে। ৩৩ ম্যাচ মোকাবেলায় অসিদের বিপক্ষে তৃতীয় জয় পেলেও সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হারলো জিম্বাবুয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার মাঠ টাউন্সভিলে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে জিম্বাবুয়ে। শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে জিম্বাবুয়ের বোলাররা। ফলে ১৮ ওভারের মধ্যে ৭২ রানে অসিদের পাঁচ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠায় তারা। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ৫, স্টিভেন স্মিথ ১, অ্যালেক্স ক্যারি ৪, মার্কাস স্টয়নিস-ক্যামেরুন গ্রিন ৩ রান করে ফিরেন। ষষ্ঠ উইকেটে দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন ওয়ার্নার ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। জিম্বাবুয়ের বোলারদের উপর আক্রমণাত্মক ব্যাট চালিয়ে জুটিতে ৫২ বলে ৫৭ রান তুলে দলের স্কোর এক শ’ পার করেন ওয়ার্নার-ম্যাক্সওয়েল।
এই জুটিতেই ৪৭ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়ার্নার। ২৬ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১২৮ রান। ২৭তম ওভারে প্রথম আক্রমণে আসেন বার্ল। ওভারের চতুর্থ বলে ম্যাক্সওয়েলকে বিদায় নিয়ে জুটি ভাঙেন বার্ল। ২২ বলে ১৯ রান করেন ম্যাক্সওয়েল। ওভারের শেষ বলে অ্যাস্টন আগারকে শিকার করেন বার্ল। নিজের প্রথম ওভারে দুই উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ওভারে সেঞ্চুরির পথে থাকা ওয়ার্নারকে বিদায় করেন বার্ল। নাভার্স-নাইন্টিতে আউট হওয়া ওয়ার্নার ১৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৪ রান করেন ।
২ ওভারে ৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বিধ্বংসী রুপে থাকা বার্ল নিজের তৃতীয় ওভারে আরো ২ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৩১ ওভারে ১৪১ রানেই গুটিয়ে দেন। ইনিংসে ৩ ওভারে ১০ রানে ৫ উইকেট নেন বার্ল। ৩৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেট নেন বার্ল।
১৪২ রানের টার্গেটে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান তোলেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার তাকুদওয়ানাশে কাইতানো ও তদিওয়ানাশে মারুমানি। ১৯ রান করে কাইতানো ফিরলে মিনি ধস নামে জিম্বাবুয়ের ইনিংসে। মিডল-অর্ডারে ওয়েসলি মাধভেরে ২, সিন উইলিয়ামস শূন্য এবং সিকান্দার ৮ রান করে দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরেন। তবে এক প্রান্ত আগলে ইনিংস বড় করছিলেন মারুমানি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩৫ রানে থামতে হয় তাকে। এতে ৭৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। এতে ম্যাচ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিপক্ষে লড়াই শুরু করেন অধিনায়ক রেগিস চাকাভা। তিন টেল-এন্ডার টনি মুনওয়াঙ্গাকে নিয়ে ৭৭ বলে ৩৮, বার্লকে নিয়ে ২২ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুয়েকে ঐতিহাসিক জয়ের কাছে নিয়ে যান চাকাভা। আর অষ্টম উইকেটে ব্রাড ইভান্সকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৫ রান তুলে ১১ ওভার বাকি থাকতেই জিম্বাবুয়েকে ইতিহাস গড়া জয় এনে দেন চাকাভা। ৩টি চারে ৭২ বলে অপরাজিত ৩৭ রান করা চাকাবভার এই ছোট্ট ইনিংসেই জয় রচিত হয় জিম্বাবুয়ের। এছাড়া মুনওয়াঙ্গা ১৭, বার্ল ১১ ও ইভান্স অপরাজিত ২ রান করেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন পেসার জশ হ্যাজেলউড। ১ ব্যাটারকে আউট করে ১০২ ম্যাচে দুই শ’ উইকেট পূর্ণ করেন স্টার্ক। ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম দুই শ’ উইকেট নেয়ার বিশ্ব রেকর্ড গড়েন স্টার্ক। ফলে ভেঙে যায় পাকিস্তানের স্পিনার সাকলাইন মুশতাকের রেকর্ডটি। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন জিম্বাবুয়ের বার্ল।