সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

চাল রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অবশেষে ভাঙা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। তাছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে দেশটি। অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম ও সরবরাহ ঠিক রাখতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে দিল্লি। গতকাল শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, বিশ্বে ১৫০টি দেশে চাল রপ্তানি করে ভারত। তাই তাদের যেকোনো ধরনের বিধিনিষেধে খাদ্যের বাজারে চাপ বাড়তে পারে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাড়তে পারে চালের দাম। তাছাড়া তীব্র খড়া ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দেশে দেশে গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।
তবে রপ্তানিতে নতুন নিয়মের কারণে আমদানিকারকরা ভারতের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বী থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকতে পারে ক্রেতারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য চালে শুল্ক বসালেও সিদ্ধ ও বাসমতি চাল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করেনি দেশটি। সম্পূর্ণ ভাঙা চাল রপ্তানিতেই মূলত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এসব ভাঙা চাল আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো আমদানি করতো। এর আগে ২৮ আগস্ট একটি সূত্র জানায়, সরকার ভাঙা চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দেওয়ার জন্য আলোচনা করছে, যা ভারতের রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি এখনো আলোচনাধীন ও খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে ঘোষণা আসবে বলেও জানানো হয়। বৈশ্বিক চাল বাণিজ্যের ৪০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। ফলে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে বিশ্বের অনেক দেশ বেকায়দায় পড়বে। বিশেষ করে যেসব দেশে এরই মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। বিশ্বের ৯০ শতাংশ চাল এশিয়ায় উৎপাদন ও খাওয়া হয়।
মোটা ও মাঝারি চালের দাম কমা শুরুর পর ভারতের এই ঘোষণা: আমদানির প্রভাবে বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। তবে নাজিরশাইলের মতো বেশি দামের চালে কোনো প্রভাব নেই।
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হতেই বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। পাইকারি বাজারে কমার পরে এবার ঢাকার খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করেছিল চালের দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে খুচরায় কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। বেশি কমেছে মোটা চালের দাম। মাঝারি ও সরু চাল মানভেদে কেজিপ্রতি এক টাকা দেড় টাকা কমেছে। তবে নাজিরশাইলের মতো বেশি দামের চালে কোনো প্রভাব নেই। গত রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের চাল ব্যবসায়ীরাও বলছেন, চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে পাইকারিতে নওগাঁর বাজারে চালের দাম যতটা কমেছে, রাজধানীর বাজারে ততটা কমেনি।
সরকার জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ধাপে ধাপে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমতি দেয়। গতকাল পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ৮৬ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। যার মধ্যে গত ৩০ আগস্টের পরে ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। জুলাই মাসে ডলারের বাজার বেশি অস্থিতিশীল থাকায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে আগ্রহ কম ছিল।
২৮ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়। চাল আমদানির মোট করভার ২৫ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৫ শতাংশ। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরা আবার চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এতে দেশের বাজারে চালের দাম একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল স্বর্ণা ও চায়না ইরির দাম দুই দিন আগেও খুচরায় প্রতি কেজি ৫৫ টাকা ছিল। সেটা এখন ৫৩ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। ১০ কেজির বেশি কিনলে অনেক ব্যবসায়ী কেজিপ্রতি আরও এক টাকা কম রাখছেন। খুচরা বাজারে মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ৫৬ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছেÍদুই দিন আগে যা এক থেকে দেড় টাকা বেশি ছিল। বিআর–২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকার আশপাশে। সরু মিনিকেট চাল কম দামেরটা ৭০ থেকে ১ টাকা কমে ৬৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেটের আরও কয়েকটি ধরন রয়েছে, সেগুলোও পাইকারিতে কমতে শুরু করেছে। তবে কমেনি নাজিরশাইল চালের দাম। এটা আগের মতো ৭৫ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে রয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারের ফরিদপুর রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানির প্রভাবে পাইকারিতে চাল আমরা এখন বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে কিনতে পারছি। খুচরা বাজারে যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে দাম আরও কমবে কি না, সেটা নির্ভর করছে আমদানি কতটুকু হচ্ছে, তার ওপর।’ প্রায় একই কথা বলছেন নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী বাংলাদেশ রাইস এজেন্সির মালিক মো. আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটা ও মাঝারি চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। সরু চালের ক্ষেত্রে প্রভাবটা কম, কেজিপ্রতি কমেছে ১ টাকা। তবে ভালো মানের সরু চাল ও সুগন্ধি চালের দাম এখনো কমেনি।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারত থেকে চাল আসা ছাড়াও দাম কমার আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেমন দফায় দফার বাজারে অভিযান, সারা দেশে দরিদ্রের জন্য ওএমএসের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল বিতরণ। এ ছাড়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে পরিবার কার্ডধারীদের মাসে ১০ কেজি চাল দেওয়ার কর্থাবর্তা চলছে। সব মিলিয়ে বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে।
চালের দাম এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ কেজিপ্রতি আরও ১ থেকে ২ টাকা কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে মিলমালিকদের ফোন করে চাল চাইলেও তাঁরা সহজে দিতে চাইতেন না। এখন মিলমালিকেরা নিজেরা ফোন দিয়ে চাল বিক্রির জন্য সাধছেন। চালের বাজার পড়তির দিকে উল্লেখ করে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইকারিতে চালের দাম কমেছে। আমদানি বাড়লে আরও কমবে। তবে সে ক্ষেত্রে মিলমালিকদের কিছুটা লোকসান গুনতে হতে পারে। কারণ, ধান থেকে চাল বানানোর খরচ এখনো বেশি পড়ছে।’
সরকারি সংস্থা টিসিবির তালিকাও বলছে, বাজারে চালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় এখন কম। টিসিবির হিসেবে বাজারে এখন মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও তা ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। মাঝারি মানের চালের দামও কিছুটা কমতির দিকে। এক সপ্তাহ আগে মাঝারি মানের চাল প্রতি কেজি ৫৬ থেকে ৬৪ টাকা ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। নওগাঁর মোকামে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। সপ্তাহখানেক আগে মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমেছে মাঝারি ও সরু চালের দাম। ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের দাম বাড়ার যে প্রবণতা চলছিল, তা কমে গেছে। রাজধানীর নিউমার্কেটে গতকাল দুপুরে চাল কিনছিলেন আজিমপুরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন আহমেদ। বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলছিলেন, আগে তাঁরা ভালো মানের সরু চাল খেতেন, যার দাম ছিল ৭০ টাকার মতো। দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচ কমাতে তিনি এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকার মধ্যে মাঝারি মানের চাল কিনে থাকেন। চালের দাম সামান্য কমলেও তিনি মাঝারি মানের চালই কিনবেন বলে জানালেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com