শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন

বাঙালির প্রজাতি বিচ্ছিন্নতা

হরিপদ দত্ত
  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

নোয়াম চমস্কি দেখিয়েছেন ভাষা বিচ্ছিন্ন হয়ে কী করে নতুন ভাষা-প্রজাতির উদ্ভব ঘটায়। চার্লস ডারউইনও তাই। প্রাণ-প্রজাতি কী করে বিচ্ছিন্নতার ভেতর নব-নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করে, তার প্রমাণ করেছেন তিনি। মানব প্রাণীর গোত্র, বর্ণবিভেদও তাই। সবকিছুকে উসকে দেয় বিচ্ছিন্নতা। আটপৌরে দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। ধরুন আপনার কন্যাটি ২০/২৫ বছর পর আপনার ঘর ছেড়ে স্বামীর ঘরে চলে গেল। কেন না সারা বিশ্বের মেয়েদের নিজস্ব বাড়িঘর থাকে না, জন্মসূত্রে ওরা মানবসমাজের আদিম উদ্বাস্তু প্রজাতি। এদের গৃহান্তর ঘটে। বাবারবাড়ি। শ্বশুর বা স্বামীর বাড়ি। পুত্রসন্তানের বাড়ি। আমৃত্যু এই ত্রিভুবনেই ওরা বিরাজমান। তো বাবা হিসেবে আপনি স্বামী গৃহযাত্রী কন্যাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের মিনির বাবার মতো সজল চোখে উৎকণ্ঠিত থাকবেন। অন্য দশটা-পাঁচটা বাবার মতো ভাবতে শিখবেন কন্যা শ্বশুরবাড়ি ‘মানিয়ে নেবে’, ‘সব সয়ে যাবে’, ‘শ্বশুরবাড়ির সবাইকে ‘আপন’ করে নিতে শিখবে’। কিন্তু জন্ম-মাটি, পিতা-মাতা-ভাই-বোন, পড়শি-সাথী, স্মৃতিময় পিতৃগৃহ কি চাপা পড়ে যায় সামাজিক অনুশাসনে? পুরুষতান্ত্রিকতার শেকলে?
আসলে এটি এক সামাজিক গভীর বিচ্ছিন্নতা। এই বিচ্ছিন্নতা বাবা-মায়ের সংসার থেকে ছিটকে পড়া বিবাহের শেকলে বাঁধা মেয়েটির মনোলোকে যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৈরি হয় তার সঙ্গে যুক্ত হয় নয়া এক দুনিয়া। যৌন জীবন আর প্রজনন জীবন। অসংখ্য এই দ্বন্দ্ব নারীর শরীরে, জীবনে, চিন্তায় অভিনতুন এক বিবর্তন ক্রিয়ার জন্ম দেয়। স্বামী গৃহের নারীটি পূর্বের পিতৃগৃহের নারী থাকে না। সে বদলে যায়, নতুন প্রজাতি বিবর্তন ঘটে তার ভেতর। পিতৃগৃহের ‘বালিকা নারী’ হারানো সেই চেতনায় কোনো দিন আর ফিরতে পারে না। ভাগ্যচক্রে যদি সে তালাক নিয়ে কিংবা বিধবা হয়ে তার জন্মভিটেয় ফিরেও আসে। সে তখন পিতৃগৃহে নতুন প্রজাতির নারী মাত্র। প্রজাতি বিচ্ছিন্নতা জটিল এক অভিক্রিয়া। আমরা মানব প্রজাতির উদ্ভব আর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার ইতিহাসের দুয়ারে হানা দিতে পারি। অবশ্যই উঠে আসবে ‘মানিয়ে নেওয়া’ আর নিজেকে নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন করে বদলে ফেলতে বাধ্য হওয়ার মতো। পূর্বের দৃষ্টান্তটি আরও তলদেশের গভীরে ঢুকে যাবে ধর্মের পেষণে পড়ে। নারীটি যদি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিধর্মী পুরুষের ঘরে ‘স্ত্রী’ হয়ে আসে তখন পুরুষের ধর্মের পেষণে ল-ভ- হয়ে যায় তার জন্মগত ধর্ম। সে আত্মসমর্পিত হয়, নিজেকে আগাপাস্তলা পাল্টে নিতে বাধ্য হয়। পরিবর্তন ঘটে তার নিজস্বতার, শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পেষণে। মানসিক নতুন প্রজাতি সত্তায় আত্মসমর্পিত হয় সে। সবকিছুর মূলেই বিচ্ছিন্নতা।
বিবর্তনবাদ দেখিয়েছে আমাদের চোখের সামনে যে বিশ্বটা রয়েছে, মানুষ থেকে সব প্রাণী, উদ্ভিদ, পূর্ব বা আদিতে এই আদলে ছিল না। বিবর্তন ঘটেছে তার, উদ্ভবকালের প্রকৃতির বিবর্তনের বা বিচ্ছিন্নতার ফলে। সামান্য একটা কল্পতরুফলা নারকেল আদিতে ছিল ক্ষুদ্র খেজুর ফলের আকার। যে সুস্বাদু লিচু জনৈক চৈনিক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী পাহাড়ি জঙ্গলে আবিষ্কার করেছিলেন তার পূর্ব প্রজাতির কোনো কোনো উপ-প্রজাতি বাংলাদেশেও পাওয়া যায়। পুরান ঢাকার কোনো না কোনো আদি বাড়িতে আজও হয়তো তারা টিকে আছে। লিচুরই পূর্বপুরুষ তারা, আঞ্চলিক উচ্চারণে যাদের ‘আশু’ বা আঁশফল বলা হয়। আকারে ক্ষুদ্র এবং স্বাদে টকমিষ্টি। জিন বিবর্তন বা বিচ্ছিন্নতার পথ ধরেই আজকের নারকেল আর লিচু আমাদের চোখের সামনে। আমরা নিজেরাও তো তাই, বিবর্তন বা বিচ্ছিন্নতার পথ ধরে আমাদের পূর্বপুরুষদের অরণ্যেই পরিত্যাগ করেছিলাম আমরা। অরণ্য বিচ্ছিন্নতার ফলই আজকের আমি আর আপনি। আধুনিক নাগরিক মানুষ। মানব সৃষ্টির উদ্ভব বর্ণ একমাত্র কালো, ব্ল্যাক অ্যান্ড ব্ল্যাক। আমাদের উদ্ভব ঠিকানা আদি আফ্রিকার কেনিয়া অঞ্চল। উদ্ভবকালে ‘মেলানিন’ নামের রক্তক পদার্থ শরীরের চামড়ার ডার্ক বা কালো রঙের কারণ। গরমের দেশ আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে কৃষ্ণবর্ণ মানবের উপদলটি ঠা-ার দেশ ইউরোপে অভিগমন ঘটাল, তাদের ওপর সূর্যের প্রবল অতিবেগুনি রশ্মির প্রকোপ কমতে থাকে। এর ফলে কৃষ্ণবর্ণ মানুষরা ত্বক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাদামি বা শ্বেতবর্ণ ধারণ করে। মাত্র আড়াই হাজার বছর এই রঞ্জক প্রভাবে মানুষের ত্বক বা চামড়ার রং বাছাইয়ের সিলেক্টিভ মিউটেশন বা পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া জিনবাহিত হয়ে স্থায়িত্ব লাভ করে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, যে কালো বাঙালি পেটের দায়ে দেশ ছেড়ে ‘ঈশ্বরের স্বর্গরাজ্য’ আমেরিকা বা লন্ডনে গতর খেটে ক-বছর পর দেশে ফেরে, তখন তার ত্বকের রং কালো থেকে খানিকটা ফিকে বাদামি রং ধারণ করে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির অতি দুর্বল প্রভাবে। এটা ক্ষণস্থায়ী। দেশে সপ্তাহ কাটতেই অতিবেগুনি রশ্মির তীব্র প্রভাবে পূর্বের রং ধারণ করে শরীরের রং। বাংলাদেশের পুরুষের তুলনায় নারীরা যে খানিকটা ফর্সা এর কারণ তারা অসূর্যম্পশ্যা বা গৃহবন্দি। অন্যদিকে আজও সমাজে এমন মানুষ আছে, অবশ্যই অসংখ্য নারী, যারা আমৃত্যু সর্বমোট ১০০ দিনও রামায়ণের সীতার মতো রামচন্দ্র ভ্রাতা লক্ষ্মণ কর্তৃক নির্ধারিত ‘লক্ষ্মণরেখা’ অতিক্রম করার সাহস পায়নি। নারী বলে তাদের বাড়ির ত্রিসীমানায় পা ফেলার অনুমতি নেই। তাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে প্রকৃতি বিশ্ব থেকে, সমাজ থেকে, রাষ্ট্র থেকে। সে যা হোক, ইতিহাস প্রমাণ করে প্রাচীন মিসর, রোম কিংবা গ্রিকসভ্যতা বিকাশকালে মানুষের গাত্রবর্ণ নিয়ে কোনো ছুতমার্গ ছিল না। রানী ক্লিওপেট্রার গায়ের রং তো কালোই ছিল। আজও আফ্রিকার কোনো কোনো আদিবাসী দখলদার ইউরোপীয়দের (শ্বেতাঙ্গ) মনে করে ওরা ঈশ্বর-অভিশপ্ত। অশুভ প্রেতাত্মার প্রভাবে ওরা শ্বেতবর্ণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে শ্বেতীরোগীদের বেলায়ও একই দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান। বর্ণবাদ তো উগ্রতা নেয় আধুনিক যুগে। বিশেষ করে ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের সময়। মধ্যযুগেও ছিল। আরব দেশে কাফ্রি ক্রীতদান-আখ্যান ইতিহাসে আছে। ভারতবর্ষে অন্যার্য ঘৃণার মূলেও বর্ণবাদ। ওই যে গণতন্ত্রের ঢোল বাজানো হয় আমেরিকার গৃহযুদ্ধ তথা দাসপ্রথা বন্ধের ইতিহাস নিয়ে, সেই যুদ্ধের মূলে ছিল কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের শ্রমশক্তি দখলের জন্য শ্বেতাঙ্গদের লড়াই। খামার মালিকদের হাত থেকে কালো ক্রীতদাসদের মুক্ত করতে না পারলে উদ্ভাবন করা যন্ত্রশিল্পের বিপ্লবের ক্ষেত্রে শ্রম দেবে কারা দৈনিক ১৮/২০ ঘণ্টা? ওই যে বলা হয় কৃষ্ণাঙ্গদের দাসত্বমুক্তি, গণতন্ত্র, মানবতা, সব ফাঁকা আওয়াজ মাত্র। ওই যে কালোবর্ণ মানুষকে ঘৃণা করা, বিদ্বেষ ছড়ানো, নির্যাতন করা, দমন করা, এটি মানবসভ্যতার একটি আদিম অভ্যাস। বাঙালিরা কি এই অভ্যাস থেকে মুক্ত? গায়ের বর্ণ কালো বলে সুপাত্র মেলে না যে মেয়ের সে যে অবসাদে আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করে, এ কার পাপ!
এই যে মানুষকে অপর মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তা কি শুধু অর্থনৈতিক শ্রেণিবিচারে? ধর্মে নয়? গাত্রবর্ণে হয়? ভাষায় নয়? শোষক আর শোষিত যেমনি বর্তমানে বিশ্ববাস্তবতা, ঠিক তেমনি গাত্রবর্ণও। ওই যে আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু, তা বাস্তব সত্য। শ্বেতাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব যেন চিরন্তন মহাসত্য! শুধু যে ইহকাল তা তো নয়, ধর্মে বর্ণিত পরকালের স্বর্গেও তো শ্বেতাঙ্গিনী দেবী-অপ্সরাগণ বিরাজ করে। এই যে অখ- মানবসমাজকে বিচ্ছিন্ন করা হলো গাত্রবর্ণেরা আরও জটিল হয়ে উঠল অসংখ্য রাষ্ট্রসত্তার উদ্ভবের ফলে। রাষ্ট্র জন্ম নেয়। রাষ্ট্র ভাঙে। পুরাতন ভূমি নতুন নাম নিয়ে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মানুষ থেকে মানুষ, ভূমি থেকে সীমানাঘেরা ভূমির উদ্ভব ঘটে। প্রাণিজগতের প্রজনন এবং সংখ্যাবৃদ্ধির মতো রাষ্ট্র প্রজননও ঘটে। পেছনে একটি শক্তি বাস্তবতাই ক্রিয়াশীল। তার নাম বিচ্ছিন্নতা। কলরব ওঠে ‘স্বাধীনতা’ আর ‘সাম্য’। মানুষ হয় তো খানিকটা স্বাধীনতা পায়, সাম্যটা অধরাই থেকে যায়। বিষয়টা এমন যে, যত অসাম্য থাকবে, বঞ্চনা থাকবে, শোষণ থাকবে এবং পরিণামে তত বিদ্রোহ ঘটবে। বিদ্রোহ হলে রাষ্ট্র ভাঙবে, রাষ্ট্রের প্রজনন হবে, বৃদ্ধি পাবে রাষ্ট্রসংখ্যা। এটাই তো বাস্তবতা!
সুপ্রাচীন যুগের রাষ্ট্রহীন বিশ্ব বদলে গেল। প্রাগৈতিহাসিক বিশ্ব এটলাস বা মানচিত্রের দিকে তাকালে চোখে ধাঁধা লাগে। গোলার্ধে মাত্র দু-তিনটি বিচিত্র নামের সীমারেখা আঁকা রাষ্ট্র। মহাসাগর, মহানদী, পর্বতশ্রেণি, অনন্তপ্রসারী অরণ্য, দিগন্ত-ছোঁয়া মরুভূমি, লক্ষ-কোটি বছরের প্রাণশূন্য হিম-শীতল বরফ ভূমি। বাইবেলীয় যুগের (পুরাতন এবং নতুন বিধান বা ওল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্ট) মানচিত্রে যে দেশ বা রাষ্ট্রগুলো ছিল তা আজ আর নেই। হয়তো আছে পুরাতন নাম বর্জন করে নতুন নামে। শুধু নাম নয়, সীমানা চিহ্নও পাল্টে গেছে। এটাই তো ভূগোল আর ইতিহাসের বাস্তবতা। যেমন ইসরায়েল দেশটি। এই যে অখ- বিশ্বের খ-ায়ন, বারবার সীমানা পুনর্গঠন তার পেছনে তো শুধু অর্থনৈতিক শ্রেণিহিংসাই দায়ী নয়, অবশ্যই দায়ী ধর্ম-হিংসা, ভাষা-হিংসা আর গাত্রবর্ণ-হিংসা। এটি ঔপনিবেশিক প্রবণতাই নয়, প্রাগৈতিহাসিক প্রাচীন প্রবণতাও বটে। একজন শ্বেতবর্ণ চিত্রশিল্পী যখন চোর, দস্যু, খুনি, ভিখারি, কৃষক, শ্রমিক কিংবা ভূতপ্রেতের ছবি আঁকেন তখন চেহারা হয়ে ওঠে কদাকার। গাত্রবর্ণ হয়ে ওঠে কালো বা ঘন খয়েরি রঙে আঁকা। রবীন্দ্রনাথের মতো বড় মাপের কবি-মানুষও বাড়ির চাকরের বর্ণনা দেন চমকে ওঠার মতো। ‘ভূতের মতো চেহারা তার নির্বোধ অতিঘোর/যা কিছু হারায়’, গিন্নি বলেন, ‘কেষ্টা’ বেটাই চোর।’ অশিক্ষিত, অসংস্কৃত, কৃষ্ণবর্ণ দরিদ্র সরল-সহজ গ্রাম্য চাকরের এই চেহারা! বাবা-মা শখ করে ‘কৃষ্ণ’ নাম রাখলেও নগর বাবুরা বিকৃত উচ্চারণে ‘কেষ্ট’ বা ‘কেষ্টা’ বলে ডেকেই সুখানুভব করে। এই যে গাত্রবর্ণ-ঘৃণা, ধর্ম-ঘৃণা, ভাষা-ঘৃণা, খাদ্যাভ্যাস-ঘৃণা, নি¤œবর্ণ-ঘৃণা ইত্যাদির সঙ্গে ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী আর উপনিবেশবাদী রাজনীতি। সব মিলেই ১৯০৫ সালে অখ- বাংলা প্রথমবার ভেঙে গেল। দোষটা শুধু ইংরেজের ভেদনীতি নয়, হাজারটা অন্য কিছুর। ধরা যাক ইংরেজ বা অন্য কোনো ইউরোপীয় উপনিবেশ শক্তি বঙ্গভারতে এলো না, দীর্ঘস্থায়ী হলো মুঘল-নবাবি যুগ, অখ- বাংলা কি ভাঙত না? ভাঙত! পূর্ববঙ্গের রক্তে রয়েছে বিদ্রোহ। দুর্ভাগ্য তার। ব্যর্থ বিদ্রোহ। দীর্ঘ পরাধীনতা। স্বাধীনতাও নতজানু হলো পুঁজিবাদের, একাত্তরে।
এ ভূমি আর্যাবর্তের উচ্চকোটি সমাজ আর আর্যঋষীদের জন্য ছিল পাপভূমি বা নিষিদ্ধ দেশ। এখানে গমনাপরাধে শাস্ত্রে প্রায়শ্চিত্ত বিধান রয়েছে। আজও উচ্চবর্গীয় হিন্দুদের কাছে পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের প্রতি উন্নাসিকতার কারণ যতটা না ধর্ম তার চেয়ে অধিক নি¤œবর্ণ হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হওয়ার মিথ বা অর্ধসত্য ধারণা। এটাই অবাক করা বিষয় যে, সুপ্রাচীনকাল থেকেই আর্যাবর্তের আর্যবাদী বা ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ অনার্য জনজাতি অধ্যুষিত পরে নানা বর্ণ-গোত্র মিশ্রণে সৃষ্টি হওয়া বাঙালিকে প্রায় জোর করেই তথাকথিত আর্যসভ্যতার উত্তরাধিকার থেকে সুকৌশলে বিচ্ছিন্ন করে দূরে ঠেলে রেখেছিল। ১৯৪৭ সালে তারাই পশ্চিমবঙ্গ বা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আসলে এই বিচ্ছিন্নতাই ঐতিহাসিক বাস্তবতা। অনিবার্য পরিণতি। ( দেশরূপান্তরের স্যজন্যে) লেখক: কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com