মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়ানোর জন্য রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ছাড়াই সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে চরফ্যাশনের চাষিরা উৎপাদন করছেন বিষমুক্ত শাকসবজি। উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের চর ফকিরা, আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ,জিন্নাগড় ইউনিয়নের উত্তর মাদ্রাজ ও এওয়াজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম এওয়াজপুর গ্রামের বাসিন্দারা তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিরাপদ সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন বলে জানান তারা। চাষিরা জানান, কিটনাশক ব্যবহার করে সবজি চাষ করে নিজের পরিবারসহ মানুষকে বিষ খাওয়াতে চাইনা বলেই কিটনাশক মুক্ত সবজি চাষ করছি যা বাজারে বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছি এবং নিজেরাও খেয়ে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছি। গ্রাম ঘুরে দেখা যায় গ্রামের চারপাশে ছোট ছোট শাক সবজির খামার সবুজে আচ্ছাদিত। হালিমাবাদ গ্রামের নিরাপদ সবজি খামারের উদ্যোক্তা আকতার মহাজন(৪৮) জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে বিষমুক্ত সবজি চাষের আলাপ করলে তিনি পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দেন। এরপর থেকেই নিরাপদ সবজি খামারে রাসায়নিক বালাইনাশক স্প্রে ব্যবহার বন্ধ করে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকামাকর নিধন কেঁচো সার ও জৈব সারের ব্যবহার করে বিষমুক্ত লাউ, করলা, বেগুন, চিচিঙ্গা, শসাসহ শাক সবজি উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করছেন তিনি। চর ফকিরা গ্রামের জসিম উদ্দিন(৪০) জানান, ভারমি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে কিটপতঙ্গ নিধন করছি যা আগে কিটনাশক স্প্রে ব্যবহার করে নিধন করা হত। বর্তমানে আমাদের খামারে কোনো প্রকার কিটনাশক স্প্রে হয়না। খামারে প্রাকৃতিকভাবেই লাউ,চাল কুমোর,মিষ্টি কুমোর টমেটো শিম, বরবটি, করলা পেপে,বেগুন উৎপাদন করছি। উত্তর মাদ্রাজের সবজি খামারের উদ্যক্তা ফারুক(৪০) বলেন, আগে হাইব্রীড জাতের সবজি চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কিটনাশক স্প্রে ব্যবহার করতাম। যার মাধ্যমে অনেক বছর যাবত হাইব্রীড সবজি চাষ করেছি এবং ফলন বেশি হলেও পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা হত যা আগে জানতামনা। বর্তমানে আমাদের চাষিরা ছাইমাটি দিয়ে এবং সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকামকর নিধন ও জৈব কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে এবং সেই সার ব্যবহার করছে। ফলে পরিবেশ দূষণ কমছে। বাজারের সবজি ক্রেতা পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো.রিশাদ বলেন, বিষমুক্ত শাকসবজি খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায় তবে হাইব্রিড ও সার দিয়ে উৎপাদিত শাকসবজি খেয়ে কোনোও তৃপ্তি পাওয়া যায়না। যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অধিক পরিমানে ক্ষতি। তবে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে এবং ক্রয়ে একটু খরচ বেশি। উপজেলার পরিবেশকর্মী তৌকিদ আহমেদ সাব্বির জানান, জৈব পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষাবাদ করতে আগ্রহী চাষিদের কৃষি বিভাগ ও বেসরকারি এনজিও সংস্থাগুলো যদি প্রশিক্ষণ দিতেন এবং বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদে স্বাস্থ্য এবং নিরাপদ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে পরিবেশ ও প্রকৃতি থেকে রাসায়নিক সারের প্রভাব কমে যেত। এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষিবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, চরফ্যাশন উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ শাকসবজি চাষ হচ্ছে। উপজেলার ২১টি ইউনিয়নেই এধরনের বিষমুক্ত ও জৈব পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষিতে বিষ মুক্ত সবজি চাষে পরিবেশে রাসায়নিকের প্রভাব কমে যাবে এবং এ প্রক্রিয়ার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কমে যাবে।