মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন লিগ্যাল অ্যাকশন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের (ল) সহযোগিতায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় প্রস্থানের পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা: প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে। সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো: মুস্তাফিজুর রহমান তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্ননকে ত্বরান্বিত করবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসঙ্ঘ ও অন্য দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সংলাপে নিয়োজিত হতে পারে। বাংলাদেশ এই বিষয়ে একটি সমাধান খুঁজতে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেমিনারে বক্তারা নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার এবং সকল বৈষম্যমূলক আইন বাতিলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে উপযোগী পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দেন। তারা বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সাহায্য করবে। আইনের প্রধান আন্তোনিয়া মালভেই সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন এশিয়া জাস্টিস কোয়ালিসন সচিবালয়ের প্রধান প্রিয়া পিল্লাই, জাতিসঙ্ঘে মিয়ানমার সংক্রান্ত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসিআর বঙ্গবন্ধু চেয়ার শহীদুল হক এবং রোহিঙ্গা এক্টিভিস্ট ইয়াসমিন উল্লাহ প্রমুখ।
অন্য একটি সূত্রে প্রকাশ, একদিকে কাজ না থাকা অন্যদিকে প্রত্যাবাসনের দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধমূলক কর্মকা- বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে শুধু খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১৯টি। তাছাড়া চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক, ডাকাতি, ধর্ষণের মতো ঘটনা তো আছেই। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ‘যত বড়ই অপরাধী হোক, ক্যাম্পে ঠাঁই হবে না। সকল অপরাধীকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক এপিবিএন-দুই থানা পুলিশ সূত্র বলছে, শিবিরগুলোতে গত পাঁচ বছরে অন্তত ১১৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৭ জন, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত ৪৯ জন, ২০২২ সালের জুন থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ জন হত্যাকা-ের শিকার হন। তার মধ্য গত চার মাসে শুধু উখিয়া ক্যাম্পে ১২ জন খুন হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, ২০১৮ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের সীমান্ত ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে ৪ হাজার ৭৪৮টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৫০৫ জন রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসী’কে আটক করা হয়েছে। তারা অধিকাংশ উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। এছাড়া ৫০ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবাসহ ১৭ ’শ ৪৯ জন রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারী আটক হন। তার বিপরীতে ১৫ ’শ ২৯টি মামলা উখিয়া-টেকনাফ থানায় রুজু করা হয়। কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝি মো. হারুন জানান, ‘রোহিঙ্গাদের একটি বড়ো অংশ বেকারত্ব নিয়ে দিন পার করছে। এ সুযোগে অপরাধীচক্রগুলো তাদেরকে দলে ভিড়চ্ছে। আবার অনেকে অভাবের কারণে অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছে।’
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অপরাধ বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া বা পুনর্বাসনের ব্যাপারে আজও আমাদের জাতীয় কোনও নীতিমালা বা নির্দেশনাবলী নেই। ২০১৭ সালে মানবিকদিক বিবেচনা করে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই এই জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা কিন্তু আরও দুই দশক আগে থেকেই দলে দলে আসতে শুরু করেছে। তাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকার ও শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন ঘোষণায় কিছু ব্যবস্থাপত্র থাকলেও আমাদের নিজস্ব কোনও পরিকল্পনা-পরিকাঠামো নেই। তাদের জন্য আলাদা আইন, বিধি বা নীতিমালা তৈরির কথাও ভাবা যেতে পারে।তিনি আরও বলেন, কাজের সুযোগের অভাবে অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়ানো এই জনগোষ্ঠীর সাথে স্থানীয়দের তিক্ততা দিন দিন বাড়ছে। যার জেরে হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক। ৮-এপিবিএন পুলিশের তথ্য মতে, গত দুই বছরে ক্যাম্প থেকে আমেরিকার তৈরি অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেলসহ ২৫৮টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ১২টি, এম-১৬ রাইফেল ১টি, দেশীয় অস্ত্র ২৩৫টি। এসময় ৬ ’শ গোলাবারুদসহ ৬৪৩ জনকে আটক করা হয়। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে এনে ক্যাম্পে মজুতকালে ২১ লাখ ৪ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর লম্বাশিয়া শিবিরের এআরএসপিএইচ কার্যালয়ে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যাকা- এবং বালুখালীর ১৮ নম্বর শিবিরের দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ নামের মাদ্রাসায় আরসা-বিরোধী মাদ্রাসা শিক্ষক মৌলভী আকিজসহ ছয়জন খুন হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বাড়ায় শিবির এলাকায় সন্ত্রাসীরা কিছুটা কোণঠাসা হলেও তারা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়নি। প্রতিনিয়ত অবস্থান ও কৌশল বদলে শিবিরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে তারা। গত অক্টোবর থেকে চালু হওয়ার স্বেচ্ছাপাহারা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে এর সাথে জড়িত রোহিঙ্গা নেতা ও সেচ্ছাসেবীদের আক্রমণ করে কয়েকজনকে মেরেও ফেলেছে সন্ত্রাসীরা।
৮-এপিবিএন এর আওতাধীন ক্যাম্পগুলোতে প্রতি রাতে প্রায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী রোহিঙ্গা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া ১৪-এপিবিএনের অধীনে তিন হাজার ৫১৬ জন এবং ১৬-এপিবিএনের অধীনে তিন হাজার সাত শ স্বেচ্ছাসেবক একই কাজ করছে। এ বিষয়ে ৮-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন জানান, ‘ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সকল অপরাধী গ্রেফতারের অভিযান চলছে।’
এদিকে, বান্দরবানে মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় সেখানে সীমান্ত সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৫ দিন থেকে এই সড়কটি নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে। অন্যদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে লোকজনদের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। সম্প্রতি সীমান্তের ওপারে গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তুমব্রু বাজারের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তে এসব গুলির আওয়াজ হচ্ছে। এছাড়া রেজু সীমান্তের কাছে হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। সকাল থেকে সীমান্তে গুলির আওয়াজ শোনার পর সীমান্তের জিরো লাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বর্ডার গার্ড বিজিবি সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি টহল বাড়িয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বিভাগে পড়েছে। সীমান্ত এলাকার পাহাড়গুলো থেকে গাছ, বাঁশ, লাকড়ি ইত্যাদি সংগ্রহকারী দিনমজুররা এখন সেখানে যেতে পারছে না। ঘুনধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, গত আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘুনধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ী আত, ফাত্রাঝিড়ি, রেজু আমতলিসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। লোকজনদের সীমান্ত এলাকায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এদিকে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্যাটেলিয়ন ২০ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ রিয়াসত আজিম জানিয়েছেন, সীমান্ত উত্তেজনার কারণে গত ১৫ দিন থেকে সীমান্ত সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সড়কটির নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় লোকজনদের সীমান্ত এলাকায় না যেতে পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষে বেশ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com