শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

আত্মার শুদ্ধতায় পোশাক

মারজানা কুবরা:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বলা হয়, নারী অবলা! এটা নারীর ভূষণও ছিল বটে। তবে নারী আজ আর নিজেকে অবলা মানতে রাজি নয়। নারী অবলা নেই। আজ নারী কথা বলতে শিখেছে নিজের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে। তাদের মুখ নয় শুধু তাদের দেহও আজকাল কথা বলে! কথা বলে পোশাক, আধুনিক বেশ-ভূষা, তাদের দেহ ভঙ্গিমা। কাজেই এ নারীকে অবলা বলে, নিরীহ ভাবার কোনো কারণ সত্যিই আছে কি?
বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ অন্যতম সমালোচিত বিষয়। তার পোশাকের সাথে জড়িত জাতির সভ্যতা। আদি মানবজাতিও পোশাক সম্পর্কে সচেতন ছিল। ছিল সভ্য। আদিম মানুষ দেহের লজ্জা নিবারণের তাগিদে পোশাকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তখন থেকেই তাদের বস্ত্র-আচ্ছাদন এবং তার জোগান ছিল প্রকৃতি হতে। লজ্জাকে তারা প্রাধান্য দিত বা তাদের মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছিল। যদিও ওই সময় পোশাকের বাহারি আদব তারা রপ্ত করেনি। বন্য থেকে সভ্য হতে মানুষ পোশাকের প্রয়োজন অনুভব করে। প্রয়োজন পূরণ করতে পোশাক কে উন্নতি দান করেছে। নিজেদের সভ্য করে তুলেছে। আমরা যে পোশাকের সমাহার দেখছি এখন তার সূচনা আদিম কাল থেকেই শুরু হয়েছে যখন সামাজিকতার নিয়মনীতি ও ছিল না। তারাও লজ্জাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রাক সভ্যতার সময় থেকে শালীন হতে মানুষ পোশাকের আশ্রয় নেয়। সভ্যতার বিকাশের সাথে পোশাকের বিকাশ সাধিত হয়। তবে এখন আমরা কিছু আবার অন্য সভ্যতাই ফিরতে চাই। আদিমকালের সভ্যতা হীন সভ্যতায়! তবে তা শুধুই পোশাকের ক্ষেত্রে। নারীর পোশাক খাটো হতে হতে নগ্নতার সর্বোচ্চ সীমা পেরিয়েছে। পোশাকেই নাকি নারীর স্বাধীনতা উপলব্ধি হয়! পোশেক নিয়ে স্বাধীনতার লোভাতুর বুলি সবার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। তবে স্বাধীনতা কিসের স্বাধীনতা? শুধুই পোশাকের?
পোশাকের দিকটা নিয়ে এখানে বলতে চাই। পোশাকের ব্যাপারে স্বাধীনতা নিজেদের প্রদর্শনের স্বাধীনতা এখন মুক্তমনা নারীরা চায়। আধুনিকতা পোশাককে আবার প্রাক সভ্যতার দিকে ধাবিত করতে চায় পোশাককে সঙ্কীর্ণ করে। প্রাক সভ্যতার মানুষগুলোকে দ্বিধাহীন ভাষায় আমরা অসভ্য বলি। তবে প্রগতির এমন সভ্যতাকে কী বলব? আধুনিক সভ্যতা, নাকি আধুনিক অসভ্যতা?
একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের পোশাক কেমন হবে, আমরা কী করব বর্তমান পরিস্থিতিতে- এ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ, আমাদের নিজস্ব ড্রেস কোড রয়েছে। বর্তমান সময়ে পোশাক নিয়ে কে কী বলল সেসব বিতর্কে না গিয়ে আমার ধর্ম কী বলে আমাদের মনোযোগ সেদিকেই রাখা উচিত।
আমরা যদি অপসংস্কৃতি থেকে নিজস্ব ড্রেসকোডের দিকে লক্ষ করি ইসলাম পুরুষ ও নারীর জন্য শালীনতা ও সুন্দরের সমন্বয়ে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কিছু বিধিমালা। যাতে পর্দা ও পোশাকের বাস্তব অর্থের প্রতিফলন ঘটেছে। নারীর পোশাক অবশ্যই তার গোটা দেহ আবৃত করার জন্য যথেষ্ট হতে হবে। হাত ও চেহারা ঢাকা রাখা নিয়ে কোনো কোনো বর্ণনায় আলেমদের মাঝে কিছুটা দ্বিমত হলেও বর্তমান ফেতনায় নারীর প্রতি পূর্ণ তাগিদ মুখ ঢেকে পর্দা করা। এ ব্যাপারে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, মহিলারা যেন তাদের গায়ে ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখে। এ ছাড়া পোশাক নিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে বনি-আদম আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারির পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে। (সূরা আল আরাফ : ২৬)
ননমাহরামের সামনে অথবা বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে নারী পুরো শরীর ঢেকে বের হবে। নিজের ঘরের লোকদের সামনে চেহারা হাত-পা খুলে চলাফেরা করতে অসুবিধা নেই। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারীকে শালীনতা বজায় রেখে ঘরের বাইরে চলাফেরা করার কোনো বিকল্প নেই। শালীনতা লুকিয়ে থাকে পোশাকের মধ্যে। পোশাকের অধঃপতন পশ্চিমা কালচারের অনুকরণের ফলে এখন আমাদের সমাজেও পশ্চিমাদের ফলপ্রসূ চিত্র অঙ্কিত হচ্ছে। মেয়ে বাবার হাতে ধর্ষিতা হচ্ছে। মা ছেলে দ্বারা ধর্ষিতা হচ্ছে। কারণ, আমাদের বোধশক্তি অস্তমিত হয়ে যাচ্ছে আগ্রাসী কবলে। নারী নিজেকে মা, বোন ভাবতে অনুপ্রাণিত নন; বরং মিস ডায়না, আধুনিকা স্মার্ট ইত্যাদি ভাবতে এবং দেখতে ভালোবাসেন তাই। নারী মা, মেয়ে, বোন হয়েও ধর্ষিত হচ্ছে। নারীর জন্য, রঙিন পোশাক, অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমন পোশাক পরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। নারীর পোশাক এমন পাতলা এতটা লাগোয়া আঁটসাঁট হবে না। যা তার দেহের অবয়ব আবরণের জন্য যথেষ্ট নয়। ঢিলেঢালা শালীন পোশাকে নারীর সৌন্দর্য সুরক্ষিত। নারীর সৌন্দর্যের ওপর একমাত্র তার স্বামীর হক। রাসূল সা: নারীকে সুগন্ধি মেখে পুরুষদের আকর্ষিত করে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন। নারীকে পর পুরুষের মতো পোশাক বিধর্মী নারীদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো পোশাক পরিধান করতেও তিনি নিষেধ করেছেন। গর্ব ও অহঙ্কারের জন্য দামি পোশাক পরে। মানুষকে দেখানোর থেকেও ইসলাম নারী-পুরুষ সবাইকে নিষেধ করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূল সা: নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষের ওপর আর পুরুষের বেশ ধারণকারী নারীর ওপর লানত করেছেন। (সহিহুল বুখারি-৩৮৮৫)
পোশাক শুধু বাহ্যিক দিক নয় আমাদের অন্তরেও প্রভাব ফেলে। পোশাকের কারণে মানুষ অহঙ্কারী হয়। শালীন হয়। নগ্ন হয়। পোশাক আবার অন্তর হতে অহমিকা দূরও করে। যদি হয় সেটা তাকওয়ার পোশাক। তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম পোশাক। কিছু পোশাক মানুষের রুচির পরিচয় বহন করে। তার ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। একজন মানুষ যদি রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক পোশাক পরিধান করে তবে তার মানে স্বভাবতই আর পাঁচজন মানুষের মতো অন্যায় করতে ইতস্ততা আসবে। তাছাড়া আমাদের জন্য উত্তম হলো রাসূলের আদর্শ মেনে চলা। সে কথা আচার-আচরণ পোশাক যাই হোক না কেন! পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার উত্তম উপমা রাসূলে আরাবি সা:। যারা রাসূলকে প্রকৃত ভালোবাসতে চান তাদের জন্য আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন, তোমাদের জন্য রাসূলের জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, আপনি বলুন হে মুহাম্মদ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ করো এতে আল্লাহও তোমাদেও ভালোবাসবেন এবং তোমাদের মাফ করে দেবেন। লেখক : শিক্ষার্থী, হাদিস বিভাগ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা, চাঁদপুর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com