শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ধনবাড়ীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবস পালিত মাধবদীতে জ্যান্ত কই মাছ গলায় ঢুকে কৃষকের মৃত্যু বদলগাছীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী কালীগঞ্জে কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা লতিফ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন বরিশালে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন হাতিয়ায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার ক্যাম্পাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত স্মৃতি কর্ণার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিরুল ইসলামের পক্ষে ছাত্রলীগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

বেড়েছে বজ্রাঘাত, মাঠে যেতে ভয় কৃষকের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মেহেরপুরের অধিকাংশ কৃষক সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত। জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে ফসল আবাদ হয়। সারা বছর চাষাবাদ করে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। তবে এই জেলায় সম্প্রতি আবাদ কমে গেছে। কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন, ফসলি জমিতে বজ্রাঘাতে হতাহত বেড়েছে। এই আতঙ্কে তারা মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এর ফলে আবাদও কমে গেছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেহেরপুরে বজ্রাঘাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, পর্যাপ্ত নিরাপদ কৃষক ছাউনি থাকলে বজ্রাঘাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন তারা। পরিবেশবিদরা বলছেন, সড়কের পাশে তালসহ বড় বড় গাছ থাকলে বজ্রাঘাত মোকাবিলা করা যায়। এ কারণে সড়কের পাশে বেশি বেশি গাছ লাগানোর বিষয়ে কৃষি বিভাগকে উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরে গত দুই বছরে বজ্রাঘাতে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামে ধানক্ষেতে কাজের সময় বজ্রাঘাতে দুই কৃষক মারা গেছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
মেহেরপুর সদর উপজেলা তেরোঘরিয়া গ্রামের কৃষক আজিম ও শামীম বলেন, ‘বর্তমানে এলাকার কৃষকদের মাঝে নতুন করে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মেঘ দেখলে কাজ বন্ধ করে বাড়ি বা অন্য কোথাও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এতে আমাদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। আগে বড় গাছে বা অন্য কোথাও বজ্রাঘাত হতো। এখন গাছপালা কেটে উজাড় করা হচ্ছে। সরকারিভাবে বিভিন্ন মাঠে বজ্রাঘাত থেকে কৃষকদের রক্ষায় কৃষক ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে কৃষকরা কোনও নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছেন না।’
সদর উপজেলার শোলমারি গ্রামের যুবক সোহান বলেন, ‘বজ্রাঘাতে কয়েক দিন আগে আমার চাচাতো ভাই মারা গেছেন। তারা মাঠে ধানের জমিতে কাজ করছিল। এ সময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তিনিসহ দুই জন মারা যান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশেহারা। গ্রাম পর্যায়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বজ্রাঘাত থেকে রক্ষায় কৃষকদের কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়নি।’
মেহেরপুর সহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও পরিবেশবিদ মাসুদ রেজা বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার চেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে বজ্রাঘাতে। এর প্রধান কারণ দুটিÍজলবায়ু পরিবর্তন ও বড় বড় গাছ কেটে ফেলা। মাঠে কাজ করার সময় কৃষকদের গাছের নিচে আশ্রয় না নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির আশপাশে আশ্রয় নিয়ে বজ্রাঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এছাড়া মেঘ দেখলে কাজ বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে চলে আসতে হবে। তাল গাছসহ বড় গাছ রক্ষায় এখনি কৃষি বিভাগ ও বন বিভাগের উদ্যোগ নিতে হবে।
বিজ্ঞানীরা জানান, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রাঘাতের আশঙ্কা ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়ন প্রকল্পের টিম লিডার অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘নানা কারণে বজ্রাঘাত এবং হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাতাসের মুভমেন্ট ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বজ্রাঘাত থেকে রক্ষায় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতাও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কালো মেঘ দেখলে খোলা স্থানে না থাকা, কাজ বন্ধ রাখা, বাড়িতে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা এবং উঁচু জাতের বৃক্ষরোপণ করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’ মেহেরপুর সদর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চায়না পারভিন জানান, তাল গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ করাসহ বজ্রাঘাত থেকে রক্ষায় কৃষককে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় কোনোভাবে জলাবদ্ধ জমিতে কাজ করতে নিষেধ করা হচ্ছে। কিছু মাঠে সরকারিভাবে কৃষক ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। এগুলো আরও বেশি তৈরি হলে কৃষকদের জন্য ভালো হবে। পর্যায়ক্রমে সব মাঠে এ ধরনের ছাউনি তৈরির জন্য জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
বজ্রাঘাত কেন হয়? বায়ুম-লে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় বেশ গরম হাওয়া দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম হাওয়া দ্রুত ঠান্ডা হওয়ায় প্রক্রিয়ার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। তখনই বজ্রাঘাত ঘটে।
বজ্রাঘাত থেকে বাঁচতে যা করবেন: আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাতে দেখলে বজ্রাঘাতের সময় খোলা বা উঁচু জায়গায় না থেকে দালানের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। বজ্রাঘাতের সময় উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বিদ্যুৎ স্পর্শের আশঙ্কা বেশি থাকে। এ সময় গাছ বা খুঁটির কাছাকাছি থাকা নিরাপদ নয়। ফাঁকা জায়গা, কৃষি জমি বা বড় গাছে বজ্রাঘাত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এসব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com