শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ন

দেশে বরাবরই দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি বিরাজ করেছে : রিজভী

শাহ্জাহান সাজু:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দেশে বরাবরই দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি বিরাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) আয়োজিত জ্বালানী তেল, সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি : বিপর্যস্ত কৃষক, কৃষিখাত ও জনজীবন শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সঙ্কটকালে খাদ্য উৎপাদন অনিবার্য। মহামারীর কারণে দেশে খাদ্য সঙ্কটের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে বরাবরই দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। ক্ষুধা পরিস্থিতি এতোটা ভয়ঙ্কর যে মা তার সন্তানকে বিক্রি করতে বাজোরে নিয়ে আসছে। অথচ ক্ষুধা নিয়ে রাজনীতি ও মানুষের সাথে নির্মম উপহাস করা হচ্ছে। রিজভী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার কৃষি উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৭৮/৭৯ সালে গ্রামীণ উন্নয়নে ওই সময় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু হলো গ্রামের সমৃদ্ধি। কেবল জনদরদী শাসক হলেই কেবল জনগণের কষ্ট অনুভব করে তাদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করা যায়।
বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করতে সরকার নতুন কৌশল নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং নূরে আলম, আবদুর রহিম ও শাওন হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আর এটি প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সমন্বয়ে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে।
রিজভীর অভিযোগ, প্রথমে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করে আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখে। যদি তারা না পারে তখন পুলিশ তাদের পক্ষ হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে, গুলি করে। আবার লন্ডনে যেন প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় প্রতিবাদ না হয় এজন্য যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। যা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশেই হয়েছে। তবে এভাবে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আজকাল আওয়ামী লীগ নেতারা মিথ্যার কোরাস গাইছেন। বিএনপি মহাসচিব আওয়ামী লীগ আমলের সাথে পাকিস্তানের তুলনা করেছেন এতে তাদের ?খুব লেগেছে। পাকিস্তানের সাথে তুলনা করলে তারা ক্ষেপে যান। আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য তারা এসব করছেন।
তিনি বলেন, এই সরকার আজীবন ক্ষমতার থাকতে চায় বলেই নিজেদের লোককে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছে। অথচ সেই আইনে বলা ছিল আরো দু’বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু সেটাও তারা বাতিল করেছে। তাদের যেটাতে সুবিধা হয়েছে সেটি নিয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কথার সাথে কাজের মিল নেই। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও করলো আবার তারাই বাতিল করল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিরোধী দলে গেলে হরতাল দিবে না, আবার সেটি করেছেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা বিরাজ করছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। সারের সঙ্কট চলছে। জামালপুরে সারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে গিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কুইক রেন্টালের নামে সামিট গ্রুপের কাছে গেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা জনগণের কাছ থেকে নিতে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। তবে এসবের নামে কোথায় কত টাকা পাচার হয়েছে সেগুলো এখন বেরিয়ে আসছে। এগুলো লুকানো যাবে না। এ্যাবের সভাপতি কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুনের সভাপতিত্বে ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, কৃষিবিদ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক, মো: দিদারুল আলম, নূরুন্নবী শ্যামল, আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, আশাবুল হক আশা, ড. শফিকুল ইসলাম শফিক, আকিকুল ইসলাম আকিক, শেখ সফি শাওন, সিরাজুন্নবী মামুন, আহসান হাবিব প্রান্ত, কেএম আনিসুজ্জামান, কে আই এফ সবুর, সানোয়ার আলম, কামরুজ্জামান জনি ও শওকত ওসমান শামীম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। “গাজী মাজহারুল আনোয়ার আমাদের মাঝে একটি নক্ষত্রের মতো ছিলেন বাতিঘর”: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্রহীন এই অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আজকে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অবস্থা থেকে রক্ষা করা কি শুধু বিএনপির দায়িত্ব। বিএনপির চেষ্টা করছে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে কিন্তু সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং কিংবদন্তি গীতিকার চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ড. মোশাররফ ফাউন্ডেশন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার আমাদের মাঝে একটি নক্ষত্রের মতো ছিলেন বাতিঘর। তার ব্যবহার অমায়িক। কারো বিরুদ্ধে কখনো সমালোচনা করতে শুনিনি। চরম বেয়াদব মানুষ তার বিরুদ্ধে কখনো লেখালেখি করলেও তিনি উচ্চ বাক্যে তার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। মির্জা ফখরুল বলেন, স্বপ্ন দেখা ছাড়া ভালো গান লেখা যায় না। স্বপ্ন দেখা ছাড়া ভালো কবিতা লেখা লেখা যায় না। তেমনি স্বপ্ন দেখা ছাড়া একটি ভালো রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায় না। তাই সেই স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, টিকিয়ে রাখতে হলে, তাদেরকে তৈরি করতে হলে রাষ্ট্রের যে প্রটেকশন দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যত উন্নয়ন তার ভিত্তিটা স্থাপন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর সেটা গাজী মাজহারুল হক খুব ভালো করে জানতেন। এই সমস্ত সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল মানুষেরা যখন রাজনীতির পরিম-লে আসে তখন তারা পুরোপুরি মূল্যায়ন পায় না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আবারো সেই সংগ্রাম করে লড়াই করে সেই বাংলাদেশকে আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই যে বাংলাদেশকে হারিয়েছি। তিনি বলেন, জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার যে গান, অনুপ্রাণিত করার যে গান তার মধ্যে গাজী মাজহারুল ইসলামের অনেক গান রয়েছে। সে জাতিকে আজকে এই শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ সরকার বিভক্ত করে ফেলেছে। এটা শুধু আজকে করছে তা নয়, ৭২ সালের পরে যখন তারা ক্ষমতায় এসেছিল তখন তারা এই কাজটি করেছিল। আজকে আবার এই ১২ থেকে ১৫ বছরে গোটা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, এই সমাজকে একেবারে নষ্ট করে ফেলেছে মিথ্যাচার, অনাচার দুর্নীতি। আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে একটি পার্লামেন্ট গঠন হবে, সরকার গঠন হবে, সেই নির্বাচনে জনগণ অংশ নিতে পারে না, তবে সেটা কিসের নির্বাচন? ফখরুলের অভিযোগ, বিচারালয় গিয়ে বিচার পাওয়া যায় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে নিরাপত্তার পাওয়া যায় না। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিএনপি করলে উল্টা মামলা দিয়ে দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে স্বপ্ন তা নষ্ট হচ্ছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে পথ তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসবের জন্য আজকের শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে দায়ী বলেও অভিযোগ করেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com