গরিব, অসহায় ও দুস্থ্য মানুষের ওএমএস কার্ডের নাম কেটে নিজ পরিবারসহ পছন্দের স্বচ্ছল লোকদের দেওয়া এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়নকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মিঠাখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তাকে অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় মোংলা উপজেলার ঠোটারডাঙ্গা সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের সামনে মিঠাখালী ইউপি চেয়ারম্যান উৎপল কুমার ম-লের বিরুদ্ধে এ বিক্ষাভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে মিঠাখালী ইউপির ভুক্তভোগী কয়েকশ নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে। এ সময় গ্রামবাসী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে স্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষোভ সমাবেশে তারা ইউপি চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে তাকে অপসারণসহ সব অনিয়মের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানায়। মিঠাখালি ইউপি আ’লীগ সভাপতি বাবু প্রীতিশ চন্দ্র হালদার বলেন, ওএমএসের তালিকায় থাকা আগের গরিবদের নাম কেটে চেয়ারম্যান উৎপল তার পছন্দের স্বচ্ছল লোকদের নাম দিয়েছেন, যারা এই কার্ড পাওয়ার যোগ্য নয়। ৪নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ ইউনিয়নের সব উন্নয়ন প্রকল্পে তিনি চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। সর্বশেষ গত মাসের শেষে ও চলতি মাসের শুরুতে তিনি সরকারের দেওয়া গরিবের সহায়তার সিদ্ধ মিনিকেট চালের পরিবর্তে নষ্ট কম দামের আতপ চাল দিয়েছেন। সিদ্ধ চালের দাম বেশি হওয়ায় তা বিক্রি করে কম দামের খাবার অযোগ্য আতপ চাল দিয়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। ৭নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি আশিস হাওলাদার বলেন কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। এসব প্রকল্প দিয়ে তিনি তার পরিবার, আত্মীয় স্বজনদেরসহ নিজ বাড়িতে মাটির কাজ করিয়ে চরম অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। স্থানিয় বাসিন্দা আবু তাহের শেখ কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমারে সরকার ৬২ শতক জমি রেকর্ড দিছিলো কিন্তু সেই জমি উৎপল চেয়ারম্যান ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিছে। সরকারের কাছে আমি এই চেয়ারম্যানের কঠোর বিচার দাবী করি। আমি জেন আমার জমি ফেরৎ পাই। বক্তারা আরও বলেন, আমরা এসব কর্মকা-ের সঠিক বিচারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাছে তার অপসারণের জোর দাবি জানাচ্ছি। সম্প্রতি উন্নয়ন প্রকল্পের দেখভালকারী এক কর্মকর্তাকে (ট্যাগ অফিসার) তার আপন ভাই লাঞ্ছিত করে। তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মোংলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে তদন্তানাধীন রয়েছে। মোংলা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক মিঠাখালি ইউপি চেয়ারম্যান ইস্রাফিল হাওলাদার বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার। এছাড়াও তার চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণের জোর দবী জানায় এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, যুবলীগ নেতা মোঃ আরিফ ফকির, পুরোহিত অসিত চক্রবত্রী, মহিলা আ’লীগ নেত্রী অনিতা মিস্ত্রী প্রমূখ। উল্লেখ্য, উৎপল কুমার ম-ল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও বিনা ভোটে মিঠাখালী ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।