পাপের সাগরে ডুবে থেকে মাঝে মধ্যে মানুষ ভুলেই যায় যে, একদিন তাকে আল্লাহ তায়ালার সামনে দাঁড়াতে হবে। স্বীকার করতে হবে জীবনের সব কৃতকর্ম। দুনিয়া নিয়ে মানুষ এত পরিমাণ ব্যস্ত যে, নিজের পাপাচারের দিকে ফিরে তাকিয়ে একটিবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলারও সময় নেই। অথচ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী মুহাম্মদ সা: দৈনিক শতবার ইস্তিগফার পাঠ করতেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার একটি গুণ হচ্ছে ক্ষমা করা। বান্দা যখন আল্লাহর দ্বারস্থ হয়, তখন তিনি ক্ষমা ও দয়ার কুদরতি হাত প্রসারিত করেন। বান্দা ইস্তিগফার করলে আল্লাহ আজাব দেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী মুহাম্মাদ সা: আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সূরা-১৫ হিজর-৪৯)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের প্রতি মুসিবত আপতিত হলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। (সূরা-২ বাকারা : ১৫৫-১৫৭)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকাবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না এবং তারা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তখনো আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সূরা-৮ আনফাল-৩৩)
নবী করিম সা: বলেন, ‘যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তিগফার করাকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, তা হলে আল্লাহ তায়ালা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন- তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, তাকে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’
নবী করিম সা: বলেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমজান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’ (বুখারি) হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, ‘বান্দা যদি দৈনিক ৭০ বার অপরাধ করে এবং ৭০ বার ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো।’ প্রিয় নবী সা: দৈনিক ৭০ বারের অধিক বা শতবার ইস্তিগফার পড়তেন তথা ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। অথচ তিনিসহ সব নবী-রাসূল ছিলেন মাসুম বা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ।
নবীজী সা: বলেন, ‘সব মানুষই অপরাধী, তাদের মধ্যে উত্তম হলো তওবাকারী।’(বুখারি) ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য শ্রেষ্ঠ দোয়াটিকে সায়িদুল ইস্তিগফার অর্থাৎ প্রধান বা শ্রেষ্ঠ ক্ষমার আবেদন বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দোয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতি হবে।’
আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি, ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাত্বাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা ছানাতু। আবুউ লাকা বিনি মাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজজুনুবা ইল্লা আনতা। (বুখারি, মিশকাত হা-২৩৩৫ দোয়াগুলো অধ্যায়-৯, ইস্তিগফার ও তওবা অনুচ্ছেদ-৪) অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমতো তোমার কাছে দেয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার ওপরে তোমার দেয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া পাপগুলো ক্ষমা করার কেউ নেই।’
ইস্তিগফারের উপকারিতা : পাপমোচনের একমাত্র উপায় হলো- ইস্তিগফার তথা আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। পাপে ভুগে মানুষ যখন হুঁশ হারিয়ে ফেলে, তখন তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে ফিরে গিয়ে মানুষ সঠিক পথের দিশা খুঁজে পেতে পারে। ইস্তিগফারের মাধ্যমে হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর হয়। এটি আল্লাহ তায়ালার রহমত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ইস্তিগফারের মাধ্যমে দোয়া কবুল হয় ও রিজিকের দরজা খুলে যায়। বেশি বেশি ইস্তিগফার করলে জ্ঞান ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
প্রতিনিয়ত ইস্তিগফার পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ হয়। আল্লাহ তায়ালার সর্বত্র বিরাজমানতা হৃদয়ে আরো গভীরভাবে উপলব্ধ হয়। আর এতে পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা যায়।
ইস্তিগফার আল্লাহ তায়ালার মাগফিরাত অর্জন করে জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র উপায়। তা ছাড়া ইস্তিগফারের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি পায়, আত্মা শক্তিশালী হয় এবং বিপদ-আপদ দূর হয়ে যায়। লেখক : সহকারী পরিচালক, বাইতুল কুরআন ওয়াসার সুন্নাহ মাদরাসা, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা