শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১০:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়া শেরপুরে আগুনে পুড়লো পঁচিশ বিঘা জমির ভুট্টা ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্মাণাধীন দোকানে সন্ত্রাসী হামলা বাগেরহাট নানান আয়োজনে মে দিবস পালিত ভালুকা বিশেষায়িত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন বরিশালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা নগরকান্দায় অগ্নিকান্ডে চারটি দোকান ঘর ভস্মীভূত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না-কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার গলাচিপায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা ও জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালিত

মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শ

ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘লাকস্ফাদ কানা লাকুম ফি রাসুলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানাহ।’ অর্থাৎ তোমাদের জন্য রাসুলের (সা.) জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ (৩৩ : ২১)। অপর আয়াতে আল্লাহপাক বলেন- ‘ইন্নি রাসুলুল্লাহি ইলাইকুম জামিআ।’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর রাসুল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি (৭ :১৫৮)। তাই মানবতার মুক্তিদূত হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সব মানুষের নবী, বিশ্বনবী। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায়, দেশ-কাল নির্বিশেষে তিনি হলেন সব মানুষের জন্য মহান আল্লাহ প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ; যিনি বিশ্বমানবতার জন্য সর্বোত্তম আদর্শের মূর্ত প্রতীকও বটে। মানবজীবনের সব দিক ও বিভাগে যাঁকে অনুসরণ করলে মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জিত হবে, তিনি হলেন সেই সর্বোত্তম আদর্শের নমুনা বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)। ইরশাদ হচ্ছে- ‘কুল ইন কুনতুম তুহিব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবিউনি য়ুহবিব কুমুল্লাহ।’ অর্থাৎ হে রাসুল, আপনি বলে দিন তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা চাও তাহলে আমাকে অনুসরণ করো; তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন (৩ :৩১)। সৃষ্টিজগতের সবার জন্য অনুসরণীয় এই মহামানবের সব আদেশ-নিষেধ মহাসত্যে বিশ্বাসীদের অবশ্য পালনীয় বিষয় হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেন রহমতের মূর্ত প্রতীক, করুণার আঁধার বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)। তাই জগদ্বাসীকে আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় হাবিবের সর্বোন্নত গুণের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন- ‘ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন।’ অর্থাৎ হে নবী, আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য করুণার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রেরণ করেছি। বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে প্রেরিত এই মহামানবের অপর গুণটি হলো তাঁর সর্বোৎকৃষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এ বিষয়ে মহান স্রষ্টার ঘোষণা নি¤œরূপ- ‘ওয়া ইন্নাকা লাআলা খুলুকুল আজিম।’ অর্থাৎ হে রাসুল, আপনি সর্বোন্নত চারিত্রিক মাধুর্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছেন (৬৮ :৪)।
উল্লিখিত আয়াতগুলোর ভিত্তিতে আমরা রাসুলের (সা.) যেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাই তা হলো- সর্বোত্তম আদর্শ, অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব, গোটা বিশ্বের সবার জন্য তিনি রাসুল, আল্লাহর ভালোবাসা প্রাপ্তির মাধ্যম, তাঁর আদেশ-নিষেধের বাধ্যবাধকতা, বিশ্বভুবনের রহমত ও সর্বোৎকৃষ্ট নৈতিক ও চারিত্রিক অবস্থান। এমন একজন মহামানবকে আল্লাহপাক তাঁর তাওহিদ বা একত্ববাদের দাওয়াত প্রদানের নিমিত্তে নির্বাচিত করেছেন, যেটি নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন।
মহানবীর (সা.) ঘোষণা- ‘ইন্নামা বুইসতু মুআল্লিমান।’ অর্থাৎ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে মানবতার শিক্ষক হিসেবে। সমগ্র বিশ্বমানবতার মহান শিক্ষক হয়ে রাসুলের (সা.) আবির্ভাব ঘটল। মমতায় ভরপুর হৃদয় দিয়ে আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকায় বিপদগ্রস্ত মানবতার প্রকৃত সমস্যা তিনি উপলব্ধি করলেন এবং নিজের মাঝে বিকশিত অপূর্ব গুণাবলি আর অপরিসীম দরদ দ্বারা মানবজীবনের স্থানচ্যুত লক্ষ্যকে সঠিক স্থানে স্থাপন করলেন। আইয়ামে জাহেলিয়াকে স্বর্ণযুগে পরিণত করলেন। ইতিহাসের ধারাকেই তিনি পরিবর্তন করে দিলেন। ২৩ বছরের ব্যবধানে তিনি পৃথিবীর গতিপথকেই পাল্টে দিলেন। সভ্যতা-মানবতা তাঁর কাছে এতটাই ঋণী যে, যদি তাঁর প্রদত্ত অনুগ্রহ ও অবদান ফিরিয়ে নেওয়া হয়, তবে মানবসভ্যতা হাজার হাজার বছর পিছিয়ে যাবে আর বিশ্বমানবতা হারাবে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এবং পৃথিবীতে জীবনবোধ বলতে কিছু আর থাকবে না। তাঁর পরশে জন্ম নিল এমন একদল সৎকর্মশীল ব্যক্তি, যাঁদের একমাত্র পরিচয় ছিল আল্লাহর খাঁটি বান্দা হিসেবে। তাঁরা অশান্ত ও অভিশপ্ত জনপদকে এলম ও এয়াকিন, ন্যায় ও নিরাপত্তা, শান্তি ও শৃঙ্খলা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি আর আধ্যাত্মিকতা ও আল্লাহর জিকিরে পরিপূর্ণ করে দিল। মহান আল্লাহপাক তাঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পুণ্যবান সেসব মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে- মুহাম্মদ (সা.) হলেন আল্লাহর রাসুল আর তাঁর সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; কিন্তু নিজেরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি খুবই রহমশীল (৪৮ :২৯)।
মহানবীর (সা.) পবিত্র সান্নিধ্য তাঁদেরকে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করল। স্বয়ং রাব্বুল আলামিন তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটল পবিত্র কোরআনের বাণীর মধ্য দিয়ে- ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়ারাদু আনহু।’ অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা তাঁদের (সাহাবিগণ) প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহপাকের ওপর সন্তুষ্ট (৯৮ :৮)। আল্লাহর নবীর নক্ষত্রতুল্য সাহাবিগণের মাধ্যমে জমানার রথ বদলে গেল। আর এসবই হলো সর্বোত্তম আদর্শ নিয়ে মহানবীর (সা.) শুভাগমনের ফলশ্রুতিস্বরূপ।
মহানবীর (সা.) কৈশোরে ও যুবক বয়সে তিনি সততা ও বিশ্বস্ততার কারণে যে উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন তা হলো- ‘আলামিন’। সবাই তাঁকে ‘আলামিন’ বলেই ডাকত। অন্ধকার যুগে একজন কিশোর ও যুবক কতখানি বিশ্বস্ত হলে পরে অসভ্য ও বর্বর জাতির লোকজনও তাঁকে সম্মানের সঙ্গে স্বতন্ত্র এক অভিধায় ভূষিত করতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। যৌবনে পদার্পণকারী নবী আরবের গোত্রীয় কোন্দল আর বিবাদ-বিসংবাদের ভয়াবহতায় মর্মাহত ও বেদনাক্লিষ্ট হয়েছিলেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যুবক নবী স্বীয় মেধা ও সাংগঠনিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে গঠন করেছিলেন এক শান্তিসংঘ, যা ইতিহাসে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামে অভিহিত। এক ধ্বংসোন্মুখ জাতিকে অনিবার্য বিপর্যয়ের হাত থেকে পরিত্রাণের এক সফল প্রচেষ্টার নাম ছিল সেই হিলফুল ফুযুল। সুতরাং মহানবী (সা.) ছিলেন একজন আদর্শ যুবক তথা পৃথিবীর সব যুবকের জন্য তিনি আদর্শ।
রাসুলের (সা.) ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা সামগ্রিক জীবনে তাঁর মাঝে বিকশিত হয়েছে আরও উন্নত ও মহত্তম গুণাবলি। তিনি একজন আদর্শ পরোপকারী, আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ প্রচারক, আদর্শ সৈনিক, আদর্শ সেনাপতি, আদর্শ বিপ্লবী, আদর্শ নেতা ও আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক। তিনি শ্রমিকের আদর্শ, তিনি ব্যবসায়ীর আদর্শ, অতিথিপরায়ণতার আদর্শ, বিচারকের আদর্শ- সর্বোপরি পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তিনি সর্বমানবের কাছে সর্বোৎকৃষ্ট অনুসরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবেন। সর্বোত্তম আদর্শের অধিকারী হিসেবে প্রিয় হাবিবের ব্যাপারে মহান আল্লাহপাকের ঘোষণার সার্থকতা এখানেই নিহিত। লেখক ও গবেষক; অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com