কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদী গুলোর অববাহিকার চর-দ্বীপচর গুলোতে প্রকৃতির ঐশ্বর্য আর অপূর্ব শোভায় সুশোভিত কারুকার্যময় কাশফুলের বাগান। প্রকৃতির আপন খেয়ালে শরৎকালে আপনা আপনি কাশফুল ফুটেছে চরাঞ্চলে। আকাশে নীল মেঘের পাহাড় আর কাশ ফুলের ছোয়া নিতে চাইলে যেতে হবে চর-দ্বীপচর গুলোতে। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্য যেন ফুটে উঠেছে এখানে। মাথার উপর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা খেলা আর নিচে অপূর্ব শোভায় কাশফুলের মেলা। ধরলা, ব্রমপুত্র তিস্তা, দুধকুমর, ফুলকুমর, নীলকমল নদ-নদীর বিভিন্ন চর-দ্বীপচরে অথবা নৌকায় ভ্রমনে যাওয়ার পথে আপনি দেখতে পাবেন কাশফুলের সৌন্দর্য্যময় দৃশ্য। জেলা শহর থেকে বিভিন্ন দ্বীপচরে কাশফুলের বাগান যেতে কোথাও দুই ঘন্টা আবার কোথাও তিন ঘন্টা সময় লাগে।
নৌকা ছাড়া যাবার আর কোন পথ নেই। প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে নৌকা দিয়ে যাবার সময় চোখ জুড়ানো সারি সারি কাশফুল। বাঙ্গালী বর্ষ এখন সময়টা চলছে শরৎকাল। শরৎকাল এলেই কুড়িগ্রামের চারদিকে সাদা মেঘের ভেলার মত কাশফুলের মেলা। কাশফুল দিয়ে ছড়িয়ে আছে জেলার বিভিন্ন চর-দ্বীপচর গুলো। ১৬টি নদ নদীর অববাহিকায় প্রায় সাড়ে ৪০৫ টি চর-দ্বীপচরে জেগে ওঠা বালু মাটিতে বিশাল পরিসরে মাঠজুড়ে শুধু সাদা কাশফুলের সমারোহ। জেলায় কোথাও তেমন বিনোদন স্পট না থাকায় প্রকৃতি প্রেমীক তরুন-তরুনিরা সহ সব স্তরের মানুষ ছুটছে কাশবনের দিকে। কাশবন শুধু চরা লের সৌন্দর্যই নয়, কাশফুল বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চরা লবাসী। কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলার অববাহিকায়, যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায়, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোলস্নারহাটসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে সাদা মেঘের ভেলায় কাশফুলের মেলা। প্রকৃতির ও সৌন্দর্যে দেখলে যেকারও মন হারিয়ে যেতে পাড়ে। চর-দ্বীপচর গুলোর বালুর মাঝে সাদা কাশফুল ঢেকে আছে। একটু অপেক্ষা করলে দেখা যায়, কাশফুলের বাগানে বাতাসের ঢেউ লাগে অপর¤œপ সৌন্দর্যে দোল খায় ফুল গুলো। সন্ধ্যার আগে আকাশের লাল আভাছড়িয়ে পড়ে তখন নদ-নদীর কোলজুড়ে সাদা ফুলে ঢাকা। অপূর্ব দৃশ্য।কিছু পর্যটকরা এখানে আসার প্রধান উদ্দেশ্য কাশফুলের বাগানে এসে নদীর প্রান্ত্মে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পারে। নিবিড় শ্যামলিয়া, চোখ জুড়ানো নৈসর্গ, আকাশে মেঘমালার উড়ে চলা, চরের মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন প্রণালী, এখানকার মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা এক অনন্য বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এখানকার মানুষ সহজ সরল শান্তিপ্রিয়, মৈত্রীভাবাপন্ন, ধর্মসহিষ্ণু ও সাংস্কৃতিক মনাভাব। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর বন্যা পরবর্তীতে নদ-নদীর অববাহিকায়ন বালু মাটি জমিয়ে সেখানেই জন্ম নেয় কাশ। কোন প্রকার ব্যয় ছাড়াই কাশবন বিক্রি করে নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন চর-দ্বীপচরের মানুষ। এক বিঘা জমির কাশের বাগান ১৪-১৫ হাজার টাকা বিক্রি করে এখানকার মানুষরা। কুড়িগ্রাম সদর ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমনের চর গ্রামের নুর হোসেন জানান, আমার ১০ বিঘা জমিতে কাশ হয়েছে, এ কাশগাছ খুলনা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন নিয়ে গিয়ে তারা পানের বরোজ দেয়। অনেকে আবার কিনে ঘরের ছাউনি ও ঘরের বেড়া দেয়। কুড়িগ্রামে আগে বেশীভাগ ছনের ঘর ছিল, কিন্তু এখন শহর, গ্রাম উন্নয়ন হয়েছে।তাই কাশগাছ বাইরের লোকের কাছে বিক্রি করি। কাশ আবাদ করা লাগে না। বন্যার পর প্রতিবছর এমনিতেই জমিতে হয়। আর দুই-তিন মাস পর আমরা ১০ বিঘা জমির কাশ তিন থেকে চার লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবো। এই টাকা দিয়েই আমাদের সংসার খরচ চলবে, ছেলে মেয়ের জন্য খরচ করবো। আমাদের চরে একমাত্র বিনা পয়সায় এই আবাদটাই হয়ে থাকে। ওই গ্রামের আব্দুল আজিজ বাদশা বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গা মানুষ আমার এখানে কোন প্রকার টাকা ছাড়াই কাশগাছ পাই। আমার দুই বিঘা জমিতে কাশ হয়েছে। তা বিক্রি করে অন্য আবাদ করবো আর বাকি টাকা সংসারে খরচ করবো। জমিতে কাশ জন্ম নেয়ার ৫-৬ মাস পর গাছ থেকে কাশ ফুল পড়ে গেলে গাছ কেটে আটি বেধে ১ হাজার আটি ৬-৭ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানান। শুক্রবার ছুটিদিন কাঁঠালবাড়ী থেকে কাশবন দেখতে আসা প্রকৃতি প্রেমিক রাসেদ মিয়া, আবদুর রাজ্জাক জানান আমাদের বাড়ি এখান থেকে ২০ কি মি দূরে কাশফুলের বাগান দেখতে এসেছি। এত সুন্দর কাশফুলের বাগান দেখে আমাদের খুব ভালো লেগেছে। দু’চোখ জুড়িয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন জানান,ঋতু পরিক্রমায় এখন শরৎকাল,আর সেই শরৎকালের বৈশিষ্ট্য কাশফুল। কাশফুলের আদিনিবাস রোমানিয়ায়। এটি বাংলাদেশেরও একটি পরিচিতি উদ্ভিদ। আমাদের কুড়িগ্রামেএটি সবার কাছে অতিপরিচিত।কাশফুলের ইংরেজি নাম “ক্যাটকিন”। কাশফুলে রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। কাশ সাধারণত শুকিয়ে খর হিসেবে গোখাদ্যর ব্যবহারও করা হয়। তাছাড়াও গ্রামাঅ রে ঘরের ছাউনি, বেড়া নির্মান করে থাকে। পানের ছাউনি ও বরেজেও ব্যবহার হয়ে থাকে।