করোনার আক্রমণের লক্ষ্য বা প্রধান প্রতিপক্ষ সমাজ ও পরিবার বিচ্ছিন্ন একেকজন মানুষ, সেই একেকজন মানুষের মন মানসিকতায়, মূল্যবোধে, উপলব্ধির উপলব্ধিতে, আচার আচরণে, বিচার বিবেচনাবোধে, আত্মবিশ্বাস ও শক্তিতে, আত্মশুদ্ধিতে কেমন পরিবর্তন সূচিত হয়েছে বা হচ্ছে সেটাই এখন ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজে সংক্রমণের ভয় ঢুকিয়ে, প্রতিরোধ ও প্রতিষেধকের ধোঁয়াশে পরিস্থিতিতে মানুষ সামাজিক দূরত্বে থাকার নামে পরিবার ও আপনজনেরাও তাকে সহানুভূতি জানাতে ভয় পেয়েছিল, এমনকি স্থানীয় লকডাউনের নামে প্রচ- অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়েছিল এই মানুষকেই। আক্রান্ত বলে কথিত পরিবারের শিশুসহ ছয়জনকে ঘরে আটকাতে ছয়টি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল প্রতিবেশীরা; এ ছবি সামাজিক মিডিয়ায় এসেছিল। পরিবেশ প্রতিবেশে অভূতপূর্ব অনেক কিছুই ঘটছিল যা প্রচারে নিত্য বেদনা ও বিস্ময়ের উদ্রেক করে। করোনা আক্রমণের গতি প্রকৃতি পরিবর্তনের মাত্রা এবং এর এখতিয়ার এত ব্যাপক হয়েছিল যে এর সাথে তাল মিলিয়ে চলা যেমন কষ্টকর তেমনি নিকট অতীতকেও স্মরণে আনার ফুরসত কমে যাচ্ছিল। মূল্যবোধের বিব্রতকর পরিবর্তনে সবার মনে এখনো প্রশ্ন প্রায়ই জাগছে যে, করোনা আর কী বাকি রেখেছে আমাদের জন্য।
বয়স বাড়লে অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন সহজতর হয়, কম সময় ও শ্রমে বেশি কাজ করার ফলাফলও পাওয়া যায়। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধৈর্য, কর্ম উদ্যম, শক্তি ও সাহসেও ভাটা পড়ে। শ্রান্তি আসে ক্লান্তি বাড়ে। অবসাদের আত্মীয়রা এসে দেহে ও মনে বাসা বাঁধে, দৃষ্টি, শ্রবণ ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়- নানান রোগবালাই শরীরকে কর্ম-অক্ষম করে তোলে। ফলে অভিজ্ঞতার দ্বারা এক দিকে যে বাড়তি লাভ হয় এসব অনিবার্য অতিথির আগমনে ক্ষতি বাড়তেই থাকে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় এবং আক্রান্ত হলে অনাহূত অবহেলার আশঙ্কা বেড়ে চলেছে বয়স্ক ব্যক্তি মানুষের মনে। অর্থনীতির সেই অনিবার্য শর্ত- ‘আর সব যদি ঠিক থাকে’ অর্থাৎ পরিবেশ, অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, অন্যের সাহায্য সহযোগিতা এবং নিজের মনোবল বুদ্ধি বিবেক ও চিন্তাশক্তির ন্যূনতম সজাগ পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকলেই যেকোনো বয়সের মানুষের পক্ষে করোনা মোকাবেলা কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। আর সব তো ঠিক ছিল না ।
ফলে এখন করোনা শুধু না অন্য যেকোনো ছোট বড় মাঝারি যেমন ডেঙ্গুকেও ভয় পাচ্ছে মানুষ। যেমন সে এ ভয়ও পেয়েছিল করোনায় আক্রান্ত কিংবা তার মৃত্যু হলে তার পরিবার পরিজনকে ‘এক ঘরে’ করতে লকডাউনে পাঠানো হবে, তার স্বাভাবিক জানাজা হবে না, সমাহিত হওয়ার ক্ষেত্রেও একধরনের অনীহা অবজ্ঞা, এমনকি হাঙ্গামাও হতে পারে। এ সমস্যা যেন ব্যক্তি জনের, তার অন্যান্য আপনজন, পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজ এমনকি দেশ কর্তৃপক্ষও তখন ছিলেন কেমন যেন অসহায়, উদাসীন ও প্রতিকারবিহীন। এসব বাস্তব বিষয় বিবেচনায় এনেই স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় ব্যক্তি মানুষকে বলি- ‘মন রে! মন রে চল নিজের নিকেতনে।’ সময় থাকতে সবাইকে নিজে নিজে হতে হবে সচেতন, সাবধান। নিজে শরীরের দেহের যতœ, মনকে ভালো খাবার, পরিবেশকে বান্ধব করে তোলার পদক্ষেপ নিজেকেই নিতে হবে। এখন সবাইকে অনুভবের আয়নায় বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে, শ্রাবণের জোয়ারে নদীর পথ চলায়, পাখির ক’জনে, কুহেলী কুয়াশায় ঢাকা শীতের ভোর, শরতের নির্মেঘ আকাশ, কৃষ্ণচূড়া, বাগানবিলাস আর আজালিয়ার সৌন্দর্যে ভাবালুতায় মুখ লুকাতে হবে, শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হবে। পশু, পাখালির নিত্যদিনের সাঙ্গীতিক জীবনযাত্রা কান পেতে শুনতে তাদের সাথে সবার সাথে একাত্ম হতে হবে। এরা সবাই বিধাতার, বিধাতাও এদের সবারই। মনের সব জড়তা, কূপম-ূকতা, দীনতা, হীনতা ঝেড়ে মুছে ফেলে নিজেকে নির্ভার করে তুলতে হবে। হিংসা, দ্বেষ, ঈর্ষা, রাগ, ক্ষোভ, ভয়, আশঙ্কা, সঙ্কোচ, শঙ্কা, সংক্ষুব্ধতা সবই ত্যাগ করতে পারলে নিত্যনতুন উদ্যমে গৌরব প্রত্যাশায় উদ্বেল হয়ে উঠবে মন।
করোনাকালের প্রতিটি দিন নতুন নতুন আশঙ্কা ও ভয়ের, দুঃসংবাদের অবয়বে হাজির হয়েছিল। সে কারণে কারো কারো সফলতা ব্যর্থতার খতিয়ানে তাদের আত্মতুষ্টি কিংবা বিষাদে মলিন হওয়া দেখার জন্য নিজের নিকেতনে যাওয়ার বিলম্ব সমীচীন হবে না। অজানা আশঙ্কা উদ্বিগ্নে ভোগার পরিবর্তে প্রতিদিনের জীবনকে নতুন অর্থে অর্থবহ করে তোলা দরকার। হিসেবের খতিয়ান মিলবে জীবনের শেষ দিন, এভাবে একদিন সব সঙ্গীতের সুর থেমে যাবে, কেটে যাবে। তবে তার আগে উদ্বেগ উৎকণ্ঠারহিত, দুশ্চিন্তাহীন জীবনযাপনে নিষ্ঠা আত্মপ্রত্যয়ী জীবন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থাকতে হবে, সে লক্ষ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর আশঙ্কা দুর্ভাবনায় আকর্ণ হয়ে নয়, হতে হবে, থাকতে হবে আশাবাদী।
আশাবাদী হওয়া এবং থাকার ব্যাপারে ইবাদত উপাসনায় যার যার সৃষ্টিকর্তার প্রতিপূর্ণ আত্মসমর্পণে এবং কর্মে নিবেদিত নিষ্ঠার মানসিকতায় জাগ্রত রাখা বা থাকা উচিত। এই আশাবাদের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে যার যার সম্পর্কের বিষয়টি সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা মহিয়ান, গরিয়ান, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, পরম দয়ালু ও দাতা (রাহমানুর রাহিম)। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব একক এবং অদ্বিতীয়। এক বিস্ময়কর প্রক্রিয়ায় আমার জন্ম, শৈশব, কৈশোর, যৌবনকাল পেরিয়ে বর্তমান পর্যায়ে আমি উপনীত। কত অসম্ভব ভাব কল্পনার বাস্তবতায় আমি আজ। কত পশ্চাৎপর অবস্থা থেকে আমি আজ এখানে। আমি যা হয়েছি তা অন্যেরা একই সমতলে থেকেও হতে পারেননি। আবার আমিও অন্যের মতো অনেক পর্যায়ে যেতে পারিনি। আমি যা তাইই হয়েছি, এসবের নিয়ন্তা তিনিই। এসেছিলাম একা, তাঁরই বিধান মতো, আমার নিয়তি মতো আমি শেষ হয়ে যাবো, চলে যাবো একা একা। এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহর সৃষ্টি আমি- আমার নিয়ন্তার প্রতি আমার আত্মসমর্পণ ( মুসলিমুন), নির্ভরশীলতা (তাওয়াক্কাল), বন্দেগি কেমন হওয়া উচিত বা তার স্বরূপ কী? করোনাকালে দেশে দেশে ধর্ম ও মতবাদে এ স্বরূপ সন্ধান ও আত্মস্থকরণের তাগিদ অনুভূত হয়েছে হচ্ছে তীব্রভাবে। সেবার ইতালির এক হাসপাতালে করোনাযুদ্ধে জয়ী ৯৩ বছর বয়সী রোগীকে রিলিজের দিন ভেন্টিলেশনে অক্সিজেন ব্যবহার বাবদ ৫০০০ ইউরোর একটা বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। বৃদ্ধ কেঁদে দিলেন, চিকিৎসকরা বললেন কাঁদছেন কেন, এটা মাত্র এক দিনের বিল, অসুবিধা থাকলে এটি আপনাকে পরিশোধ করতে হবে না। বৃদ্ধ বললেন ‘আমি পুরো বিল পরিশোধ করব, কিন্তু আমার চিন্তা এবং ভয় সারা জীবন প্রকৃতি থেকে কত অক্সিজেন অবলীলায় পেয়েছি, এ জন্য কোনো দিন কিছ্ইু পে করিনি, করতে হয়নি, বিধাতার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করিনি।’
আল্লাহ আমার রব (প্রভু) আমার হাবিব (বন্ধু) তিনি আমাকে ভুল শুদ্ধ উভয় পরিবেশ পরিস্থিতিতেও পালন করেন- রক্ষা করেন। আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে, সংসারে জাগতিক নিয়মে আমাদের নিয়ন্ত্রককে ভয় পাই। মান্যগণ্য করি, তার হুকুম তামিলে তৎপর থাকি, তাকে খুশি করতে সমীহ করতে সচেষ্ট থাকি। কদাচিৎ তার অবাধ্য হই, তিনি মাইন্ড করতে পারেন এই চিন্তায় বা বোধবিশ্বাসে চিন্তাভাবনায় সবসময় সতর্ক থাকি। সেখানে আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি, আমার সব নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণ কর্তার প্রতি, তার হুকুম আহকাম পালনের প্রতি, তাকে সম্মান সমীহ করার ক্ষেত্রে তাকে ভক্তি ও ভয় করার ক্ষেত্রে এত অমনোযোগী এত অবজ্ঞা অবহেলা কেন? কেন আমরা তারই আরেক সৃষ্টিকেই আমাদের উদ্ধারকারী ভাবি? কেন তার কাছে বিপদে উদ্ধার চেয়ে, উদ্ধার পেয়ে, পরে ‘আমাদের বিচক্ষণতার জন্য আমরাই উদ্ধার পেয়েছি’ জাতীয় অহঙ্কার ও গর্বে আমরা স্রষ্টাকে ভুলে যাই, কেন তিনি সামনে নেই বলে? তিনি সরাসরি আমাকে তিরস্কার করছেন না বলে? তার প্রতি আমার অগাধ আস্থা, তার একত্বের মহত্ত্বের স্বীকৃতিতে কেন ব্যত্যয় ঘটাই? তিনি ভুল ধরছেন না ভুল ধরার জন্য, তিরস্কার করার জন্য সশরীরে সামনে নেই বলে? তিনি অবশ্যই সর্বত্র বিরাজমান। সে কারণে তিনি নিজে এসে নিজে কিছু করেন না, তারই সৃষ্টিকে দিয়ে করান।
আমরা তাঁর সৃষ্ট মানুষ, তাঁর খলিফা (সূরা বাকারা আয়াত ৩০) বা প্রতিনিধি, আমরা তাঁর রহমতে হেকমতেই ভালো মন্দ সব কিছু করি। আমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করি (সূরা ফাতিহা, আয়াত ৪) তিনিই সব কিছুর কর্মবিধাতা। এমনকি ‘তাঁর সদয় অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করার সাধ্য কারো নেই। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৫) সুতরাং কোনো কিছু সম্পাদনের ক্ষেত্রে তাঁর পরিবর্তে অন্য কিছু বা কাউকে কৃতিত্ব নেয়া বা দেয়ার ক্ষেত্রে ‘শুধু তাঁরই ইবাদত করার’ ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। আল্লাহকে ভয়, তাঁর ইবাদত বা বন্দনা, তাঁর রহমত লাভের প্রত্যাশা প্রার্থনায়, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের এই অস্বীকৃতি (শরিকানা, শিরক) ব্যাপক সাংঘর্ষিক আবহের সৃষ্টি হয়। ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত, চিন্তা থেকে কাজের উৎপত্তি।
কোনো কাজের চিন্তায় যদি আল্লাহ ব্যতিরেকে অন্য বিধায়ক এবং তাঁর নির্দেশনা বা সন্তুষ্টির পরিবর্তে অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় পরিব্যাপ্ত হয় তাহলে ওই কাজ সিদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে শুধু অসিদ্ধই হবে না, এটি শিরকের অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। এটিও খুব সূক্ষ্ম বিষয়। সে জন্য ‘সুন্দরবন আমাদের বাঁচিয়েছে’ না বলে ‘আল্লাহর রহমতে সুন্দরবন আমাদের বাঁচিয়েছে’ বলাই উত্তম। আল্লাহ অন্তর্যামী তিনি সবই জানেন, তিনি সূক্ষ্মদর্শী, আমি মনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে কী ধারণা বা ইচ্ছা পোষণ করছি সেটিও তিনি জানেন। তাঁর অগোচর কিছুই নয়। সুতরাং আল্লাহর ক্ষমতা ও তার ওপর নির্ভরশীলতার (তাওয়াক্কুল) ধারণাটাই প্রধান। ‘তোমরা যে পশু কোরবানি করো তার চামড়া, রক্ত, গোশত কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না, যা পৌঁছায় তা তোমাদের আল্লাহ সচেতনতা বা তাকওয়া।’ (সূরা হজ্জ, আয়াত ৩৭) কাউকে আল্লাহর শরিক করলে আল্লাহর কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না, কিন্তু বড় ক্ষতিগ্রস্ত হই আমরা, কেননা আমাদের সব দায়িত্ব পালন, ইবাদত বন্দেগি ও ভালো মন্দ অর্জনের মধ্যে তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশের ফলে আমার ওই সব অর্জন, কর্মসম্পাদন সবই আত্ম অহঙ্কারে পর্যবসিত হবে, শয়তানের ভুল ডিরেকশনে চলে যাবে। আল্লাহর ইবাদতকারী শিরোকুল মণি ইবলিশ এর বিরুদ্ধে যেটি ছিল অন্যতম অভিযোগ এবং সে আমাদের এভাবে সুযোগ পেলেই পদস্খলিত করবে এ ব্যাপারে সে চিরপ্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহর স্মরণ, স্বীকৃতি ও শোকরানা (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ) করা কর্তব্য আমাদের নিজেদের স্বার্থে। ‘আসলে যে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তার নিজের কল্যাণেই করে।’ (সূরা নামল, আয়াত ৪০)
নিজের নিকেতনে নিজের কর্মকা-ের বোধবিশ্বাসের সালতামামি হতে পারে। নামাজের মধ্যে আল্লাহর সন্দর্শন সাক্ষাৎ (মিরাজ) হয়ে থাকে এটা জানি। কিন্তু তার সাথে সাক্ষাতের প্রটোকল প্রকৃত অর্থে মানি? তাহলে নামাজে অমনোযোগিতা আসে কিভাবে? কেন নামাজে যা পড়ছি তার প্রতি মনোযোগ থাকছে না।
কেন মনে মনে ভাবনায় কামনায় বাসনায় বারবার তাঁর নির্দেশনার বরখেলাপ করি? সব দেখে শুনে মনে হয় যেন অভিনয় করে চলেছি। হায় দুর্ভাগ্য! কুরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা একই অপকর্ম বারবার করো অথচ তোমরা কেতাব পড়ো, অর্থাৎ জেনে শুনেও তোমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো।’ মুনাজাতে বলছি- ‘হে আল্লাহ আমাকে কামেল ঈমান দাও, সাচ্চা একিন দাও যেন বুঝতে পারি আমার ভালোমন্দ সবই তোমার ইচ্ছায় হচ্ছে, তোমার ভয়ে ভীত অন্তর দাও, তোমার স্মরণে লিপ্ত জিহ্বা দাও।’
আল্লাহর শিখিয়ে দেয়া মুনাজাতে এটাও বলছি, হে আল্লাহ যদি আমি বা আমরা ভুল করি তুমি আমাদের ভুলের জন্য পাকড়াও করো না- আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপাইও না যেমন বোঝা অতীতের ভাইদের ওপর চাপিয়েছিল- আমি যা বহন করতে পারি এমন বোঝা আমার ওপর দাও’ ইত্যাদি। এ মুনাজাত করছি কিন্তু বারবার তো একই ভুল করে চলেছি- একই অবাধ্যতা চলছে। তাহলে ওই মুনাজাত কী? ওটা কি তাহলে মনের থেকে বলছি না? আমরা এখনো মনের মধ্যে অন্যের অনিষ্ট কামনা করছি কি না, এখনো মানবতাকে অপমান অবমাননা, কারো কারো দাবি ও অধিকার হরণের মানসিকতায় আছি কি না, প্রবঞ্চনা প্রতারণার পথ খুঁজে ফিরছি কি না, এসবই নিজেকে নিজের মধ্যে আত্মজিজ্ঞাসায় আনত হলে আত্মানুসন্ধানে ব্যাপৃত হলেই মিলবে প্রভু নিরঞ্জনের ক্ষমা, ভালোবাসা, প্রেমদর্শন ও বিপদ থেকে উদ্ধার। লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান