বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

রহমতের নবী মুহাম্মদ সা:

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২

এ বিশাল পৃথিবীটা যখন অশান্তির চরম দুঃসময় অতিক্রম করছিল, পৃথিবীর মানুষ অপেক্ষা করছিল এমন একজন মুক্তিকামী মহামানবের জন্য, যিনি পৃথিবীর অবিন্যস্ত অবয়বটি পাল্টে দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজাবেন পৃথিবীকে। ঠিক সেই মুহূর্তে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: পৃথিবীতে আগমন করলেন সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য মহান আল্লøাহ রাব্বুল আলামিনের অপার রহমত হিসেবে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে মহানবী সা:-কে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লøাহ) আপনাকে পুরো বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-১০৭) মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: পুরো বিশ্ববাসীর জন্য শ্রেষ্ঠতম আদর্শের নিদর্শন। গোটা মানবজাতির সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বাধিক সম্মানিত এবং সব নবী-রাসূলের নেতা পরিশেষে আগমন করেন। সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: কোনো একটি বিশেষ দল বা সম্প্রদায়ভুক্ত নবী ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন পুরো বিশ্বের মানুষের জন্য বিশ্বনবী। কারণ তাঁর পর দুনিয়ায় আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না। এই মর্মে রাসূলে করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘অন্য নবীরা তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন, আর আমি বিশ্বের সব মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’
মহানবী সা: আরো ইরশাদ করেছেন, ‘আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না।’ মহানবী সা: মানবগোষ্ঠীর প্রতি সত্য প্রচারে নিবিষ্ট হন এবং সত্যভ্রষ্ট, পাপাসক্ত মানব সমাজকে তিনি দেখিয়েছিলেন পরম কল্যাণ ও কামিয়াবির পথ। যাতে তারা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে শান্তি এবং সৌভাগ্য লাভ করতে পারে। আর অনাগতকাল ধরে তাঁর সে আদর্শের ছায়াতলে পরম শান্তি ও নিরাপদ আশ্রয় পেতে পারে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। মহানবী সা: পৃথিবীতে আবির্ভূত হন এমন এক কঠিন সময়ে যখন পুরো পৃথিবী আইয়ামে জাহেলিয়াতের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল। কোথাও শান্তি ছিল না, স্বস্তি ছিল না, ধর্মের নামে অধর্ম বিরাজ করছিল সর্বত্র। শিরক ও কুফরের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল সবাই। নারীদের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছিল অবলীলায়, কন্যাসন্তানকে দেয়া হচ্ছিল জীবন্ত কবর। মারামারী, হানাহানি, খুন-খারাবির উন্মত্ততায় গোটা সমাজ ছিল টালমাটাল, পৃথিবীর সেই করুণ অবস্থা নিরসনের জন্য আল্লøাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মদ সা:-কে সিরাজুম মুনিরা বা প্রদীপ্ত চেরাগরূপে প্রেরণ করলেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁরই দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং প্রদীপ্ত চেরাগরূপে।’ (সূরা আহজাব, আয়াত নং : ৪৫-৪৬)
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: বিশ্ব মানবতার জন্য সত্যিকার শান্তির পথ, আল্লøাহ রাব্বুল আলামিনের মনোনীত বান্দা হওয়ার সত্যিকার পথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি মানুষে মানুষে হানাহানি দূর করে বিশ্বজনীন মানব সমাজ গড়ার পথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের অথবা কোনো আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোনো কালোর ওপর কোনো সাদার অথবা কোনো সাদার ওপর কোনো কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো আল্লøাহভীতি।’ প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা: মানুষে মানুষে সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন, মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সম্প্রীতি ও সমবেদনার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘সুন্দর আখলাকের পরিপূর্ণ রূপ দিতে আমি প্রেরিত হয়েছি।’ পৃথিবীর সব মানুষের চেয়ে তিনি ছিলেন সুন্দরতম ও সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: ইরশাদ করেন, ‘আমি কখনোই এমনটি দেখিনি যে, হজরত রাসূলুল্লাহ সা: নিজের ব্যক্তিগত আক্রোশে কোনো অন্যায়কারীকে শাস্তি দিয়েছেন।’ মহানবী সা:-এর চাচা আবু তালিবের পুত্র হজরত আলী রা: শৈশবকাল থেকে মহানবী সা:-এর কাছে প্রতিপালিত হয়েছেন। কিশোরদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। মহানবী সা: সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মহানবী সা: ছিলেন অতিশয় উদার, মহানুভব ও দয়ার্দ্রচিত্ত। সর্বাবস্থায় তাঁর হৃদয়ের কোমলতা ও দয়ালু স্বভাবই প্রতিভাত হতো, কঠোরতা তিনি পরিহার করে চলতেন। তাঁর মুখ দিয়ে কখনো খারাপ ও অশ্রাব্য বাক্য নির্গত হতো না। তিনি কখনো অন্যের দোষত্রুটি অন্বেষণ করতেন না। যদি এমন কোনো অনুরোধ তাঁর কাছে পেশ করা হতো, যা গ্রহণযোগ্য নয়, তা হলে তিনি যেমন তা অনুমোদন করতেন না, আবার সরাসরি তা নাকচও করে দিতেন না। যারা তাঁকে জানতেন, তারা সহজেই এর অর্থ অনুধাবন করতে পারতেন। তিনি এটি এ জন্য করতেন যেন অন্যের অনুভূতিতে এতটুকু আঘাত না লাগে অথচ অনুমোদনযোগ্য নয় এমন কাজ থেকেও সে নিবৃত্ত হয়।’ হজরত আলী রা: আরো বলেন, ‘তিনি ছিলেন অতিশয় পরোপকারী মহানুভব ব্যক্তি, কঠোরভাবে সত্যবাদী ও দয়ার্দ্রচিত্ত। তাঁর সাহচর্যে আসার সৌভাগ্য যারা অর্জন করেছেন তারাই হয়েছেন মুগ্ধ ও আনন্দিত। যে কেউ তাঁকে দেখেছে, প্রথম দর্শনেই তাঁর সৌম্যকান্তি তাঁকে আকর্ষণ করেছে এবং পরিচয় ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে তিনি তাঁকে মহব্বত করতে শুরু করেছেন।’ তিনি ছিলেন সবার আদর্শ, তাঁর ধৈর্য, আত্মত্যাগ, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যবাদিতা, বিনয় ও নম্রতা, দানশীলতা, আন্তরিকতা ও উদারতা বিশ্বের সব মানুষকে দান করেছে অতুলনীয় আদর্শ। তিনি মানুষকে স্বাবলম্বী হতে শিক্ষা দিয়েছেন। হজরত আয়েশা রা: বলেছেন, ‘রাসূল সা: সব কাজ নিজ হাতে করতেন, নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন, বকরির দুধ দোহন করতেন, নিজের কাজকর্ম নিজেই সম্পন্ন করতেন।’
রাসূলুল্লøাহ সা: তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে বিশাল জনসমুদ্রে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যত দিন তোমরা এর অনুসরণ করবে তত দিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো- আল্লøাহর কিতাব (আল-কুরআন) ও তাঁর প্রেরিত রাসূলের সুন্নাহ।’ (মিশকাত শরিফ) বস্তুত বর্তমান সমস্যাসঙ্কুল বিশ্বে যেখানে মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বি ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যেখানে সন্ত্রাস ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, দেশে দেশে হানাহানি ও যুদ্ধবিগ্রহ চলছে, নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরছে, যেখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য নষ্ট হচ্ছে, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতপার্থক্য ও আচার-আচরণের ভিন্নতা সহ্য করা হচ্ছে না, সেখানে রাসূলুল্লøাহ সা:-এর অনুপম আদর্শ ও সর্বজনীন শিক্ষা অনুসরণই পুরো পৃথিবীতে এবং বিভিন্ন সমাজে বহু প্রত্যাশিত শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com