রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলাকে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ভেজালযুক্ত খাবার সরবরাহ, মাদকসহ নানাবিধ অপরাধ বন্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গত সাড়ে ৮ মাসে শতাধিক অভিযান পরিচালনা করেছেন। এ অভিযান পরিচালনার সময় অপরাধের ধরণ অনুযায়ী কখনও মুচলেখা, কখনও সর্তক আবার কখনও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে দিয়েছেন দন্ডসহ জরিমানা ও অনেক ক্ষেত্রে দায়ের করেছেন নিয়মিত মামলা। ইউএনও’র নিয়মিত সরকারি দায়িত্বের মতই এ অভিযানও দিনে দিনে নিয়মিত হচ্ছে। যখনই কোন রকম অসামাজিক কার্যকলাপ কিংবা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বা অন্য কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পেতেন কাউকে না জানিয়ে অফিস সহকারি, আনসার সদস্যদের সাথে নিয়ে সে স্থানে ছুটে যেতেন। আবার কোন সময় পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে অভিযান করেন। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকদের সাথে অভিযানে বেড়িয়ে যান। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরই তিনি নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়ে মানুষের চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেন। প্রথমেই তিনি অসহায় মানুষ ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের সবার সহযোগিতায় সহায়তার জন্য নিজ অফিস কক্ষে স্থাপন করেন মানবিক সহায়তা বক্স। ওই বক্সে দানকৃত অর্থে দিচ্ছেন অসহায়দের খাদ্য সহায়তা, কারো ঘর নির্মাণের টিন ও অর্থ, গরিব পরিবারের শিক্ষার্থী যাদের অর্থ অভাবে বিশ্ব বিদ্যালয়, কলেজে ভর্তি হতে পারেনা তাদের অর্থ দিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা, কারো বই, ড্রেস ও বাইসাইকেল কিনে দিয়ে লেখাপড়ার সুগম করেছেন এবং করছেন। আবার বেশ কিছু দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া নিজ অফিসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্থাপন করেছেন সংরক্ষিত চেয়ার। আর সচেতন মানুষের চাওয়া অনুযায়ী গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ও আবাদী জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক, বাজারের বিভিন্ন দোকান, রেস্তরায় ভেজালযুক্ত খাবার বিক্রি, লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইলে গেম খেলা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, ইভটিজিং বন্ধসহ সামাজিক ব্যাধি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- বন্ধে নামে অভিযানে। এসবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকায় গত সাড়ে ৮ মাসে (১৬ অক্টোবর পর্যন্ত) শতাধিক অভিযান পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে ২৬ টিতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, জরিমানা ও নিয়মিত মামলা দায়ের করেছেন। এই ২৬ টির কিছু অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মেশিন ধ্বংস, ট্রলি জব্দ ও জরিমানা। আর কিছু রয়েছে মাদক সংক্রান্ত। বাকীগুলো জরিমানা, মুচলেখা ও সর্তক। ইউএনও’র চলমান অভিযানে এসব অপরাধ অনেকটা কমে এসেছে। আর জড়িতরা অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। এর বাইরেও ইউএনও শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত পরিদর্শন, নিজে ক্লাস নেওয়া, অভিভাবক সমাবেশ, শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অব্যাহত রেখেছেন। সমাজ সেবক আবুল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাজু আহম্মেদ লাল, গণমাধ্যম কর্মী আব্দুল আলীম, দুলাল, ব্যবসায়ী মানিক মিয়া, শিক্ষক সফিয়ার মো. জাকিউল আলম বলেন, ইউএনও’র এসব কর্মকান্ড সর্বমহলে তিনি প্রসংশিত হচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এরশাদ উদ্দিন পিএএ বলেন, আমি সচেতন মানুষের সহযোগিতায় গঙ্গাচড়া উপজেলাকে অপরাধমূলক কর্মকা- মুক্ত করতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর অসহায় মানুষ ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য যা কিছু করছি সেটা আমার একার অবদান নয়, সচেতন গঙ্গাচড়া বাসীর অবদান।