রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জামালপুর জেলার তিন হাজার প্রান্তিক পরিবারকে উন্নত আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে উপভোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে ইসলামপুরে সিডস কর্মসূচির অবহিতকরণ সভা কে হচ্ছেন নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কেশবপুরে সংবাদ সম্মেলন চিলাহাটি প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক মেয়াদের কমিটি গঠন বদলগাছীতে কৃষকের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ উলিপুরে ইউড্রেনের দুই পাশের সংযোগ সড়ক হওয়ায় এলাকাবাসী আনন্দিত কালীগঞ্জে সরকারি স্থান থেকে ফুলের হাট স্থানান্তর: বিপাকে প্রতিবন্ধী ইজারাদার পিআইবি,র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলো নগরকান্দা ও সালথার সাংবাদিক বৃন্দ গজারিয়া স্বপ্নপূরণে ছেলেকে হেলিকপ্টারে বিয়ে করালেন স্কুলশিক্ষক বাবা বরিশালে প্রচন্ড তাপদাহে বাড়ছে তালপাখার চাহিদা

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই সম্মিলিত উদ্যোগ

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২

বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বার বার দেশবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। কারণ শুধু দেশে নয়, বিশ্বব্যাপী খাদ্যোৎপাদন কমতির দিকে। ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় পড়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর দেশগুলোয় খাদ্য ঘাটতি বড় সংকটের আকার নেবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে থাকা এসব দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশেরও। দৈনিক খবরপত্রে একটি প্রতিবেদনে এ আশংকার সংবাদ গত সপ্তাহে এফএও সূত্রে প্রকাশিত হয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে এফএও। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত সংস্থাটির ক্রপ প্রসপেক্টস অ্যান্ড ফুড সিচুয়েশন শীর্ষক প্রান্তিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৫টি দেশে ঘাটতিজনিত মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা এখন সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশ আছে নয়টি, বাংলাদেশসহ যার তিনটিই আবার দক্ষিণ এশিয়ার।
আমরা জানি,জলবায়ু পরিবর্তন ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে চাপে পড়েছে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা। জ্বালানি সংকট ও আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারের অস্থিরতায় ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে পরিস্থিতি। বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে সার ও কৃষিপণ্যের সরবরাহ চেইনেও। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় অভ্যন্তরীণ নানা প্রভাবক এ সংকটকে স্থানীয় পর্যায়ে আরো মারাত্মক করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আসন্ন দিনগুলোয় খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় নীতিনির্ধারকরাও এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আগামী বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন। এজন্য দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সে বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন তিনি। এফএওসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার প্রক্ষেপণে গোটা বিশ্বেই চলতি বছর খাদ্যশস্য উৎপাদন কমার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এফএওর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের আর সব মহাদেশ বা অঞ্চলেই এবার খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবেশি হারে কমবে। জ্বালানি সংকট এরই মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কৃষি উৎপাদন খাতে আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দামও এখন বাড়তির দিকে। মূল্যস্ফীতির কারণে অন্য খাতগুলোর মতো কৃষি উৎপাদনেও কৃষকের খরচ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিষয়গুলো এরই মধ্যে দেশে দেশে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ঘাটতি পূরণে খাদ্য আমদানিকে আরো ব্যয়বহুল করে তুলেছে ডলারের বিনিময় হারের ঊর্ধ্বগতি ও রিজার্ভ সংকট। উপরন্তু বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ডলার রিজার্ভও এখন দিনে দিনে কমে আসছে। ভোক্তাপর্যায়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে চালসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের দামও এখন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
অর্থনৈতিক এ সংকটকেই বাংলাদেশে সম্ভাব্য মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার প্রথম অনুঘটক হিসেবে চিহ্নিত করেছে এফএও। সংস্থাটির বক্তব্য হলো কভিডের অভিঘাতে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। সে সময় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্যে যে প্রভাব তৈরি হয়েছিল, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এর মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যনিরাপত্তা আরো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারেও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে মূল্য পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে খাদ্যের প্রাপ্যতা ও প্রবেশাধিকার-সংক্রান্ত আগেকার যাবতীয় পূর্বাভাসের চেয়েও পরিস্থিতি এখন অনেক বেশি খারাপ। বিশেষ করে খাদ্য ঘাটতি পূরণে আমদানিনির্ভর দেশগুলো এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে। এসব দেশে একদিকে যেমন খাদ্যমূল্যস্ফীতি বাড়ছে অন্যদিকে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নও হচ্ছে ব্যাপক হারে। বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)। ২০০৯-১৯ পর্যন্ত ১০ বছর সময় নিয়ে দেশের সব জেলার খাদ্যনিরাপত্তার চিত্র বিশ্লেষণ করেছে সংস্থাটি। গবেষণায় পাওয়া ফল সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আইপিসি ক্রনিক ফুড ইনসিকিউরিটি রিপোর্ট’ শিরোনামে প্রকাশ হয়েছে। এতে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে বছরে দু-চার মাস দিনে গড়ে এক বেলা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত খাদ্যের অভাবকে তৃতীয় স্তরের বা মধ্যম মাত্রার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বছরে চার মাস বা তার বেশি সময় দিনে এক বেলা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত খাদ্যের অভাবকে বর্ণনা করা হয়েছে চতুর্থ স্তরের বা গুরুতর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা হিসেবে। আইপিসির হিসাব অনুযায়ী, দেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন মধ্যম ও গুরুতর মাত্রার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। এফএওর প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ হার আরো বেড়ে মারাত্মক আকার ধারণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটও (আইএফপিআরআই) মনে করছে, কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে। সংস্থাটির এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দামে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এ ভারসাম্যহীনতায় আরো প্রভাব ফেলেছে। এতে উন্নয়নশীল দেশ ও তাদের উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্যের হারে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে। বাংলাদেশেও খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাদ্যের সমতা নষ্টের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গ্রামীণ খানাগুলোয় খাদ্যের পেছনে ব্যয় কমিয়ে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এ মুহূর্তে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকির আজমল হুদা বণিক বার্তাকে বলেন, বোরো মৌসুমের জন্য আমাদের হাতে আরো তিন মাস সময় আছে। এ সময়ে সারের মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। পুষ্টির সংকট হলেই কিন্তু সেটাকে খাদ্যনিরাপত্তার সংকট হিসেবে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে পুষ্টির ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্যের অব্যাহত দরবৃদ্ধি ও সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাতের প্রভাব দেশে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও নানা সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে দেশের জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সে হারে খাদ্যোৎপাদন বাড়েনি। বিবিএস ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে সোয়া ৫ শতাংশের বেশি। যদিও এ সময় খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশেরও কম। দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রধান দুই খাদ্যশস্য চাল ও গম উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টনে। জনসংখ্যা তথা চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে উৎপাদন সেভাবে না বাড়ায় দেশে খাদ্যশস্যের আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে। যদিও বিশ্ববাজারে মূল্যের ঊর্ধ্বমুখিতা ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে এখন চাহিদামাফিক আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরেও দেশে ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টন চাল ও গম আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম বাড়তির দিকে থাকায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার টনে। দেশে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব। দীর্ঘায়িত খরায় ব্যাহত হয়েছে আমন মৌসুমের উৎপাদন। এর আগে গত মে মাসে সিলেট অঞ্চলের বন্যায় বোরো ধানসহ ব্যাপক ফসলহানির শিকার হয়েছেন কৃষক। এফএওর হিসাব অনুযায়ী, ওই সময়ের বন্যায় অন্তত ৭২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, এ বিষয়ে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা জনগণের সতর্ক ছাড়া এই সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। আমরা সবাই সচেতন হলে অবশ্যই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এই যুদ্ধেও বিজয়ী হবো ইনশাহআল্লাহ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com