বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

জলবায়ু পরিবর্তন: বিশ্বে বিরূপ প্রভাব

ইলিয়াজ হোসেন রানা
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২

পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ কেবল মেহনতি মানুষের শত্রু নয়, ধরিত্রীরও শত্রু। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের যে সব দেশ সবচেয়ে বেশি দায়ী, তার মধ্যে আমেরিকা অন্যতম। সে দেশের মাথাপিছু হিসেবে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন নির্গমনের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ ২০%। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর চেয়ে এ হার অনেক বেশি। এ ছাড়া কার্বন-ডাইঅক্সাইড নির্গমনের ক্ষেত্রে চীন ১৮.৪%, রাশিয়া ৫-৬%, ভারত ৪.৯%, জাপান ৪.৬% দায়ী। এ ছাড়াও আফ্রিকান ইউনিয়নের দেশসমূহ এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্র যেমন- বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদিআরব, আরব-আমিরাত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনে জাতিসংঘের কাঠামোগত সনদ অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া হলেও স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন, মাত্রাতিরিক্ত মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ, জলবায়ু অসংবেদনশীল বিল্ডিং নির্মাণ এবং বিশ্বজুড়ে সবুজ বনাঞ্চলের অপরিকল্পিত নিধনের কারণেই মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চরমে পৌঁছাচ্ছে দিন-দিন।
সম্প্রতি আবহাওয়ার ধরন, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ এবং মাটির আর্দ্রতার অসঙ্গতি লক্ষ করা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, গ্রীষ্মকালে ইউরোপ ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সালের একই সময়ে গড় আবহাওয়ার তুলনায় অনেক বেশি শুষ্ক ছিল। অন্যত্র চীনের পশ্চিমে আবহাওয়া খুব শুষ্ক ছিল, অনেক অঞ্চল আবার খরার সম্মুখীন হয়েছে। সাব-সাহরান আফ্রিকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঞ্চলেও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজমান ছিল। ইউরোপীয় অঞ্চলের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে ৫০০ বছরে খরার সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে এবার। আগস্টের শেষের দিকে ইউরোপের প্রায় অর্ধেক চরম শুষ্কতা দেখা দেয়। পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের গবেষক ড. হ্যাটারম্যান বলেছেন, ‘আমরা গত ৫ বছর ধরে একটানা খরার সম্মুখীন হচ্ছি এবং এ বছরে শত শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’ বিষয়টি শুধু কম বৃষ্টি হওয়া নয়, আরো বেশি উষ্ণ পরিস্থিতি ৬০ এর দশকে রেকর্ড করা শুরু হওয়ার পর থেকে এই গ্রীষ্মে চীনে উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। চরম তাপমাত্রার ও বৃষ্টিপাতের প্রভাবে চীনের বৃহত্তম নদী ইয়াংজি সংকুচিত হয়ে গেছে। চীনের সরকারি তথ্য অনুযয়ী, আগস্ট মাসে নদী সংলগ্ন এলাকায় ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। দক্ষিণ চীনের বিরাট অংশ খরার বিরুদ্ধে লড়াই করলেও উত্তর অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা দেখা দিয়েছে। চীনের লিও নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। চরম ভেজা ও শুষ্ক উভয় অবস্থায় বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যাচ্ছে। ইউএস ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের জলবিশেষজ্ঞ পিটার গ্লিক বলেছেন, ‘সাইবেরিয়া ও পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন খরার অঞ্চল বৃদ্ধি পায়, তখন অন্যত্র বন্যার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়।’ ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়ায় খরার কারণে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে। সোমালিয়ায় গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। কঙ্গো ও উগান্ডায় বড় অংশ জুড়ে শুষ্ক সম্মুখীন হয়েছে। দক্ষিণ সুদান, মৌরতানিয়া, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও জাপানের মতো কিছু দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে এবার। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক অংশে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, ১৯৭০-৭৯ সালের তুলনায় খরা ও বন্যার সংখ্যা ২০১০-১৯ সালের মধ্যে যথাক্রমে তিনগুণ ও দশগুণ বেড়েছে। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বলেন, গত দুই দশকে ১২০০ বছরের মধ্য সবচেয়ে চরম খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এ গ্রীষ্মে গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বনে আগুন লেগেছে এবং পানি সঞ্চয়ের মাত্রা কমে গেছে। নাসার তথ্যমতে, লেক ও পাওয়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার, যা অ্যারিজোনে ও উটাহকে ঘিরে রয়েছে। এটি এখন নি¤œ স্তরে নেমে গেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানে ঘন ঘন খরার মধ্যে পড়তে থাকলে এ বছরের শুষ্ক পরিস্থিতির কারণে কৃষি, পরিবহন ও জ্বালানি উৎপাদন ব্যাহত করছে। আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষের আশংকা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, প্রায় ২ কোট ২০ লাখ মানুষ খাদ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় বর্ষাকালীন রেকর্ড বৃষ্টি ও উষ্ণ তাপমাত্রায় দেশটির উত্তরাঞ্চলের পর্বতগুলোর হিমবাহ গলে নেমে আসা পানিতে পাকিস্তানজুড়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে দেশটির ২২ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়ে এবং ঘর-বাড়ি, ফসল, রাস্তা, সেতু, যানবাহন ও গবাদি পশু ভেসে গিয়ে ৩০ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে হিসাব করা হয়েছে। কৃষকরা একদিন তাদের গবাদি পশুর রক্ষার চেষ্টা করে গেলেও এখন পশুখাদ্য শেষ হতে থাকায় নতুন এক হুমকির মধ্যে পড়েছে। বন্যার কারণে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় অর্ধেক কমে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ১৬ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, বাড়ছে খাদ্য ঘাটতি, আমদানি নির্ভরতা। কাঁচামাল সংকট তথা শিল্প কারখানায় নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনকে দিন। ভূমির আর্দ্রতা কমে যাচ্ছে, মাটি হয়ে পড়েছে শুকনো খটখটে অনুর্বর। যেসব উদ্ভিদের শিকড় মাটির বেশি নিচে যায় না, পানির অভাবে তারা মারা যাচ্ছে। পানির স্তর আরো নিচে চলে গেলে বড় বড় গাছও মারা যাবে পানির অভাবে। ফলে পৃথিবীর উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে ব্যাপক মরুকরণ শুরু হয়ে যাবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েও গেছে। এভাবে চলতে থাকেলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দুনিয়ার আবাদী জমি ও জঙ্গলের সিংহভাগ মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে। পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়শীল দেশগুলো যদি দ্রুত কার্বন-ডাইঅক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস না করে তাহলে আগামী ২০২৩ সালে মন্দাসহ চারটি বড় ঝুঁকির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। সিঙ্গাপুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান রবি মেনন বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি আজ এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। অবস্থায় আমাদের বলে দিচ্ছে সামনে অর্থনীতি কোন পথে হাঁটবে। তার মতে, চারটি ঝুঁকি হলো মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, ভূরাজনীতির প্রভাব এবং জলবায়ু বিপর্যয়। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিশ্ব অর্থনীতি। এর মাঝে গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, মস্কোর ঘাড়ে পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া চীনের জিরো কোভিড নীতি, মুদ্রাস্ফীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি। একই সময়ে খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুযোর্গ অর্থনীতিকে আরো বিপাকে ফেলেছে। লেখক: প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস, সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com