রাসায়নিক সার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা ক্রমশ কমতে থাকে। এ সার দিয়ে উৎপাদিত শাকসবজি , ফসল ও সবজি খেয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নানা কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জমিতে জৈব সার ব্যবহার করলে উৎপাদন ব্যয় কমের পাশাপাশি মাটি,পানি,বায়ুর থাকে শুদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত। তাছাড়াও অল্প খরচে বাড়িতে তৈরী করা যায়। ক্ষেতে ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফসলও পাওয়া যায়। সে কারনে কৃষকেরা দিনদিন জৈব সারের ওপর ঝুঁকে পড়ছে। কথাগুলো বললেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কাদিরডাঙ্গা গ্রামের জৈবচাষী মনি গোপাল সরকার। উপজেলার প্রত্যন্তাঞ্চালের এ কৃষক বাড়িতে কেঁচো বা জৈব সার উৎপাদন করে একদিকে ক্ষেতে ব্যবহার করছেন অন্যদিকে বিক্রির মাধ্যমে সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। সরেজমিনে উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কাদিরডাঙ্গা গ্রামের মনি সরকারের কেঁচো সার তৈরীর প্লান্টে গেলে দেখা যায়,বাড়ির একপাশের একটি টিনের চালার ভিতরে প্রায় ২ শতাধিক মাটির চাড়ি সারি সারি বসানো রয়েছে। চাড়ির উপরে দেয়া বস্তা সরিয়ে দেখা যায় চাড়ির ভিতরে ভরা রয়েছে গোবর লতাপাতা এবং এরমধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে লাল রঙের এক ধরনের কেঁচো। যে কেঁচোগুলো গোবর ও পঁচা লতাপাতা খেয়ে একদিকে মলত্যাগ করছে অন্যদিকে বংশ বিস্তার ঘটাচ্ছে। কেঁচোর এ মলই রোদে শুকালে উৎপাদন হচ্ছে অধিক উর্বরাক্ষম জৈব সার বা কেঁচো কম্পোস্ট সার। মনি সরকার জানান, আজ থেকে ১২ বছর আগে জাপানভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ড থেকে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরীর প্রশিক্ষন নিয়ে বাড়িতে ছোট পরিসরে কোঁচো সার তৈরী শুরু করি। উৎপাদিত সার নিজ জমিতে ব্যবহার করে বেশ ফলনও আসে। এরপরও থেকে বানিজ্যিকভাবে কেঁচো কম্পোস্ট উৎপাদন করে বাজারে প্রতিকেজি ১২ টাকায় বিক্রি করছি। এলাকার কৃষকেরা তাদের সবজি ও পান বরজে এ সার ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ সাফল্য পাওয়ায় এলাকায় আমার উৎপাদিত কেঁচো কম্পোস্টের ব্যাপক চাহিদা। প্রতি বছর কম্পোস্ট সার বিক্রি করে কমপক্ষে লক্ষাধিক টাকা আসে। আবার প্রতিকেজি কেঁচো দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি করেও টাকা পাই। মনি আরো জানান, মাঠে আমার মাত্র ২ বিঘার মত চাষযোগ্য জমি আছে। জমিগুলো জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে কিছু ফসল আসে। বাকিটা কম্পোস্ট থেকে বেশ টাকা আসে। এখন সংসারে বেশ স্বচ্ছলতা ফিরেছে। সাথে সাথে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছি। মনি সরকারের ছেলে প্রশান্ত সরকার জানান, আমরা ৩ ভাই বোন কলেজে লেখাপড়া করছি। বাবা খুব পরিশ্রমি বলেই সকলের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, মনি সরকারের কেঁচো কম্পোস্ট প্লান্টে তিনি নিজে গিয়েছেন। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও মাটি,পানি,বায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষায় তিনি যে জৈব যুদ্ধে নেমেছেন কৃষি অফিস তাকে সাহায্য করে যাচ্ছে।