ইউক্রেন যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন রাশিয়া প্রচার করে যে ৭০ হাজার চেচেন যোদ্ধা রাশিয়ার সেনাদের সমর্থন করার জন্য ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছে। রাশিয়ার প্রচার যন্ত্র কিয়েভ সেনাদের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর জন্য সম্ভবত এটি প্রচার করেছে বলে এখন ধারণা করা হচ্ছে। এতে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত হয়, তা হলো চেচেনদের ভয়ঙ্কর যোদ্ধা হিসেবে বিশ্বে যে খ্যাতি রয়েছে পুতিন তাতে সমর্থন দিলেন। প্রায় ১.২ মিলিয়ন জনসংখ্যার, চেচনিয়া পূর্ব ইউরোপের অস্থিতিশীল উত্তর ককেশাস অঞ্চলের এক রাশিয়ান প্রজাতন্ত্র। এটি দক্ষিণে জর্জিয়া, পশ্চিমে ইঙ্গুশেতিয়া প্রজাতন্ত্র, উত্তর-পূর্বে দাগেস্তান প্রজাতন্ত্র এবং উত্তরে স্ট্যাভ্রোপোল ক্রাই সীমান্ত।
১৯৯০-এর দশকে সেখানে জিহাদি গোষ্ঠীর উত্থান হয়। চেচেনরা প্রধানত মুসলমান। তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সুদীর্ঘকাল লৌহ যবনিকার মধ্যে কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে মুসলমানরা ধর্মকর্ম পালন করতে পারত না। গরবাচেভের খোলা নীতির পর মুসলমানরা ধর্মকর্ম পালন শুরু করে এবং সমাজতন্ত্রের যাঁতাকল থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তাভাবনা শুরু হয়। কঠিন শীত ও রুক্ষ ভূখ- চেচেনদের পরিশ্রমী হয়ে উঠতে সহায়তা করে। বিগত ২৫০ বছর ধরে চেচেনরা শক্তিশালী যোদ্ধায় পরিণত হয়ে ককেশাস অঞ্চলে কিংবদন্তি হয়ে ওঠে।
১৮২৯ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত চেচেনরা রুশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ১০০ বছরেরও বেশি সময় পর, চেচনিয়া ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত স্বাধীনতার লক্ষ্যে প্রথম রাশিয়ান-চেচনিয়া যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রাজধানী গ্রোজনি থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ১৮ মাস ধরে পাহাড়ে যুদ্ধ করে এবং এক আকস্মিক অভিযানে শহরটি পুনরায় দখল করে নেয়। ওই যুদ্ধে চেচেন নারী যোদ্ধারা অসীম বীরত্বের পরিচয় দেয়। মার্কিনিদের, বিশেষ করে যুদ্ধ পরিচালকদের কাছে চেচেন যোদ্ধা ভিন্ন অর্থ পরিগ্রহ করে। ক্রেমলিনপন্থী নেতার অনুগত নয় এমন চেচেনরা ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে শুরু করে এবং পশ্চিমা শক্তি আফগানিস্তান ও ইরাকে চেচেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কূলকিনারা করতে না পারায়, ক্রেমলিন আধুনিক অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে এমন পীড়াদায়ক সংবাদ মার্কিন সেনাপতিদের ভাবিয়ে তোলে। সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পাশাপাশি চেচেনরা লড়াই করছে এমন খবর আবারো হেড লাইন হতে শুরু করেছে। স্ট্যালিন চেচেন ও ইঙ্গুশ জনগোষ্ঠীকে নাৎসিদের সাথে কথিত সহযোগিতার অভিযোগে কাজাখস্তানের সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ পথেই মারা যায়। নিকিতা ক্রুশ্চেভ চেচেনদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিচ্ছিন্নতার পর, চেচেনরা রাশিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করায় রাশিয়া আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে রাশিয়ানদের অপমানজনক পরাজয় ঘটে। হাজার হাজার সেনা নিহত হওয়ার পর সেখান থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। চেচেনরা সীমান্ত অতিক্রম করলে ১৯৯৯ সালে দাগেস্তানে রুশ সেনাদের সাথে সংঘর্ষের পর দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ শুরু হয়। রুশরা ২০০০ সালে রাজধানী গ্রোজনি দখল করে রাশিয়ার সরাসরি শাসনের আওতায় আনে চেচেনিয়াকে। ২০০৩ সালে চেচেনিয়া রাশিয়ার একটি অংশ হয়ে ওঠে এবং আখমত কাদিরভ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে তার ছেলে রমজান কাদিরভ প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতি হন।
চেচেনিয়া মূলত মুসলিম অধ্যুষিত। বেশির ভাগ শাফি ও হানাফি মাজহাবের। সেখানে ইসলামী আইনশাস্ত্রের ফিকহ স্কুল রয়েছে। অনেকেই সুফিজম অনুসরণ করেন সুফি তরিকার ঐতিহ্য অনুসারে আধ্যাত্মিক নিয়মকানুন মানেন। উত্তর ককেশাসে ছড়িয়ে পড়া দু’টি সুফি তরিকার একটি নকশেবন্দিয়া, অন্যটি কাদিরিয়া। জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ খ্রিষ্টান ও নাস্তিক। ২০০০-এর দশকের শেষের দিকে চেচনিয়ায় দুটি নতুন প্রবণতা আবির্ভূত হয়। সশস্ত্র চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের একটি রেডিকালাইজড দল অবশিষ্টাংশ সালাফিজম প্রভাবিত সালাফি গোষ্ঠী। রাশিয়ায় সলাফিপন্থীদের ওয়াহাবি নামেও ডাকা হয়। সালাফি যোদ্ধাদের বেশির ভাগই প্যান ইসলামের পক্ষে জাতীয়তাবাদ ত্যাগ করে এবং ‘ককেশাস আমিরাত’ গঠনের জন্য অন্যান্য বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ইসলামী বিদ্রোহীর সাথে একীভূত হয়। একই সময়ে, রমজান কাদিরভের মস্কো-সমর্থিত কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের ইসলামীকরণের নিজস্ব প্রচারাভিযান চলতে থাকে। স্থানীয় সরকার সক্রিয়ভাবে ‘ঐতিহ্যবাহী ইসলাম’ এর নিজস্ব সংস্করণ প্রচার এবং প্রয়োগ করে, যার মধ্যে রয়েছে অনেক শরিয়াহর উপাদান প্রবর্তন করা। ফলে অনেক রাশিয়ান সরকারি আইন শরিয়াহ আইন কর্তৃক প্রতিস্থাপিত হয়ে অচল হয়ে পড়ে। ইসলাম গ্রহণের আগে, চেচেনরা ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসের একটি অনন্য মিশ্রণ অনুশীলন করেছিল। চেচেনরা অনেক গোষ্ঠী ও দলে বিভক্ত। বিভিন্ন সমমনার গোত্র নিয়ে টুকখুম বা গোত্র ইউনিয়ন গঠন করে। চেচেন সমাজে ১৩০ টুকখুম রয়েছে। তারা চেচেন ও রুশ ভাষায় কথা বলে, রুশ ভাষীর সংখ্যা বেশি, প্রায় ৭৩ শতাংশ।
চেচনিয়ার অবস্থানটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়াকে কাস্পিয়ান সাগরের তেল ক্ষেত্রের সাথে সংযুক্ত করেছে। চেচনিয়ায় অবস্থিত তেল উৎপাদন এবং শোধনাগারগুলোর কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণসাগর এবং কাস্পিয়ান সাগরের সান্নিধ্যও অত্যন্ত তাৎপর্যময়। তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত বসফরাস এবং দারদানেলিস প্রণালীর মধ্য দিয়ে কৃষ্ণসাগরের ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। কাস্পিয়ান সাগর স্থলভাগের চেয়ে মধ্য এশিয়ায় দ্রুত প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে। চেচনিয়াকে মুঠির মধ্যে রাখা রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে চেচনিয়ায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন চেচেন’ ও ‘ইসলামপন্থীদের’ মধ্যে সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দুর্যোগপূর্ণ সঙ্ঘাত চলছে। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ব এই বিভেদকে ব্যবহার করে সুযোগ নিচ্ছে এবং উভয়পক্ষই প্রচুর বৈদেশিক সহায়তা পাচ্ছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার সমর্থনে ‘কাদিরভটসি’ নামে একটি চেচেন অভিজাত সেনা ইউনিট পাঠায়। পশ্চিমা গণমাধ্যম তাদের শিকারি, হত্যাকারী এবং পুতিনের সৈনিক বলে প্রচার করে। এই সেনা ইউনিটে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ সেনা রয়েছে যাদের অনেকে জর্জিয়া ও সিরিয়ায় সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছিল। তারা উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র এবং ট্যাংক দিয়ে সজ্জিত দক্ষ যোদ্ধা। তাদের অন্যতম লক্ষ্য ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী আজভ ব্যাটালিয়ন, যারা নাৎসি মতাদর্শ অনুসরণ করে এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যে বিশ্বাস করে। প্রেসিডেন্ট পুতিন এরই মধ্যে বলেছেন, তিনি ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণ ও ‘লেজুড়’দের ক্ষমতাচ্যুত করতে বদ্ধপরিকর। এই সঙ্ঘাতে একটি নতুন কারণ যুক্ত হয়েছে, কারণ কিছু চেচেন ইউক্রেনে কাদিরোভিট এবং রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছে। এরকমই একটি দল হলো দজোখার দুদায়েভের চেচেন ব্যাটালিয়ন, যা প্রথম চেচেন প্রেসিডেন্টের নামানুসারে নামকরণ করা হয়। অন্য দলটি হলো শেখ মনসুর ব্যাটালিয়ন, যা এখন ইউক্রেনের মারিপোল শহরের কাছাকাছি কাজ করছে।
চেচেনের এক দল মনে করে, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে তারা ইউক্রেনে অবস্থান করছে। আফগানিস্তান ও ইরাক আগ্রাসনে ইউক্রেন ন্যাটোতে হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছিল। ইরাক আক্রমণ করার সময় ইউক্রেন দ্বিতীয় বৃহত্তম দল সরবরাহ করেছিল এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের পাইকারিভাবে হত্যার সাথে জড়িত ছিল। এখন ইউক্রেনীয়দের হত্যা নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমে শোরগোল পড়ে গেছে অথচ তারা কখনোই আফগানিস্তান, ইরাক, স্রেব্রেনিকা (বসনিয়া) ও সিরিয়ার আগ্রাসন নিয়ে মুসলমানদের হত্যা করার বিষয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।
চেচেন যোদ্ধারা টেকনোলজিকে পছন্দ করে। টিকটক ভিডিও তৈরিতে তারা অত্যন্ত ভালো। ওটা দিয়ে তার শত্রুকে বিভ্রান্ত করে। তারপরও অনেকে তাদের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে। ওয়াশিংটনের হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের থিংক ট্যাংকের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ লুক কফি মনে করেন, ‘যদি তারা দক্ষ হতো, তাহলে আমরা কিয়েভের চার পাশে ভিন্ন ফল দেখতে পেতাম এবং মারিওপোলের পতন দেখতে পেতাম, কারণ এই দু’টি এলাকায় চেচেনরা প্রধানত কাজ করছে।’ বর্তমানে ইউক্রেনে কাদিরভটসি হচ্ছে চেচেনদের কাছ থেকে অপসারিত একটি প্রজন্ম যারা ১৯৯০-এর দশকে এবং একবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে রাশিয়ানদের সাথে যুদ্ধ করেছিল। বর্তমান চেচেন যোদ্ধারা মাঝারি মানের থেকেও কম। সামগ্রিকভাবে, তারা গড় পেশাদার রাশিয়ান সেনাদের চেয়ে বেশি ভালো নয় এবং এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে কাদিরভ তার নিজের শাসন রক্ষা করার জন্য তার সবচেয়ে সক্ষম ইউনিটগুলো সরিয়ে রেখেছেন। চেচেন যোদ্ধারা ২০১৪ সালে দোনেস্ক বিমানবন্দরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সাথে লড়াই করার সময় পৌরাণিক যোদ্ধা হিসেবে তাদের খ্যাতি অর্জন করেছিল। এখন পর্যন্ত চেচেনরা প্রধানত দখলকৃত অঞ্চলে ফলো-অন স্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নতুবা রুশ সেনাদের পশ্চাৎপসারণ থেকে বিরত রাখতে পাঠানো হচ্ছে। চেচেনদের জন্য এটি বড় একটি বিষয়। চেচেন যোদ্ধারা মারিওপোলের দীর্ঘ অবরোধের অংশ ছিল, ইউক্রেনীয়রা আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত তারা আজোভস্টাল ইস্পাত প্লান্টটি দখলের চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি রাশিয়া ও চেচেনদের আক্রমণ তীব্রতর হওয়ায় কখন কি অবস্থা হয় তা বলা কঠিন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান বাহিনী উভয়ই আল-কায়েদার পক্ষে লড়াই করা কোনো রাশিয়ান-ভাষী ককেশীয়কে ‘চেচেন’ হিসেবে উল্লেখ করতে শুরু করে। অপারেশন অ্যানাকোন্ডায় আল-কায়েদা বাহিনীর একটি বড় অংশ মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তানে ইসলামী আন্দোলনের জন্য লড়াই করে। তোহির ইউলদাশেভ নামের একজন নেতার অধীনে ইসলামী আন্দোলনে শরিক হয়। মার্কিন সেনারা একটি বৃহৎ চেচেন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এই ধারণার পক্ষে বিপক্ষে জোরালো বক্তব্য রয়েছে।
আফগানিস্তান ও অন্যান্য জায়গায় চেচেনদের ছোট ছোট গ্রুপ ছিল এবং মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের যোদ্ধারাও ছিল। দ্য ইন্টারন্যাশনাল রিভিউর মতে, তিন হাজার চেচেন আইএসে যোগ দেয় এর মধ্যে মাত্র ৬০০ জন চেচনিয়ার অভ্যন্তর থেকে এসেছিল। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ইরাক থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত এই অঞ্চলে চেচেন যোদ্ধাদের তেমন বড় উপস্থিতি না থাকলেও চেচেন স্নাইপাররা দুর্র্ধষতার সাথে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। ‘চেচেন যোদ্ধারা তাদের নেতার কাছে, রমজান কাদিরভের কাছে রিপোর্ট করে, তিনি পুতিনকে রিপোর্ট করেন’, রাশিয়ার সামরিক কমান্ডের সাথে কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। জনগণকে আতঙ্কিত করার জন্য চেচেনরা নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে। এদের মধ্যে একজন ছিলেন জর্জিয়ার জাতিগত চেচেন ওমর আল শিশানি। তার সাহসিকতার কারণে তিনি আইএসের কমান্ডার হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের মার্চে মার্কিন সামরিক বাহিনী এই ওমরকে যিনি ‘ওমর দ্য চেচেন’ নামেও খ্যাত ছিলেন তাকে হত্যা করে। তার হত্যাকা- বিপুলসংখ্যক চেচেনকে মার্কিন বিরোধী করে তোলে এবং মার্কিনি স্বার্থের বিপরীতে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। ইউক্রেন যুদ্ধেও তাদের অংশগ্রহণ সেটি প্রমাণ করে।
আজকাল, চেচনিয়া ক্রেমলিনপন্থী শক্তিশালী রমজান কাদিরভ দ্বারা শাসিত, তার যোদ্ধারা ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় রাশিয়ান-চেচনিয়ান যুদ্ধে তার দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে সহায়তা করেছিল। ‘কাদিরভটসি’ নামে পরিচিত, কাদিরভের প্রতি অনুগত চেচেন যোদ্ধাদের নিষ্ঠুরতার জন্য বড় খ্যাতি রয়েছে। ২০০৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি দল দেখতে পায় যে, কাদিরভটসি পরিকল্পিতভাবে বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ কোনো চিহ্ন ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে যায়। এই অন্তর্ধানগুলো এতটাই ব্যাপক হয়ে উঠেছিল যে গ্রুপটি আওয়াজ তোলে, ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বাড়ছে।
ইউক্রেনে কাদিরভটসি মারিওপোল দখল করার জন্য রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর অভিযানে অংশ নিয়েছে এবং চেচেন ইউনিটগুলো বুচাশহরের কিয়েভ শহরতলির কাছে আক্রমণ চালাচ্ছে, সেখানে রাশিয়ানরা পিছু হটতে শুরু করেছিল। যদিও চেচেনরা ইউক্রেন আগ্রাসনে অংশ নিচ্ছে, তারা রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর চেইন অব কমান্ডের অধীনে পড়ে না, এভলিন ফারকাস, নির্বাহী পরিচালক, ম্যাককেইন ইনস্টিটিউট একটি গবেষণা নিবন্ধে এটি উল্লেখ করেন। ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে চেচনিয়াকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯১ সালে চেচনিয়া ইচকেরিয়া চেচেন প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ২০২২ সালের চলতি অক্টোবরে, ইউক্রেনের সংসদ ইচকেরিয়া চেচেন প্রজাতন্ত্রকে ‘অস্থায়ীভাবে দখলকৃত’ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রথম চেচেন যুদ্ধের পর, চেচনিয়া ইচকেরিয়া চেচেন প্রজাতন্ত্র হিসেবে কার্যত স্বাধীনতা অর্জন করে, যদিও এটি রাশিয়ার একটি অংশ ছিল। বেশ কয়েকটি কাদিরভবিরোধী চেচেন গোষ্ঠী ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাশাপাশি লড়াই করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হয়েছে। যেমন শেখ মনুসর ব্যাটালিয়ন ইউক্রেনে রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। চেচেনরা পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চেচেনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় অপর বড় দল রাশিয়ার পক্ষে কাজ করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার