স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে আমাদের আশা দেখিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে তাদেরও বিচার এই দেশে হবে ইনশাআল্লাহ। এর জন্য একটা তদন্ত কমিটি হচ্ছে। এদের হত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। গতকাল সোমবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় শহীদ মিনারে ‘৭ নভেম্বর: মুক্তিযোদ্ধা-সৈনিক হত্যা দিবস’-এর ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর নিহতদের পরিবারবর্গ এই সভার আয়োজন করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বিচারে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর তাড়াতাড়ি লাশ কোথায় দাফন করা হয়েছে তাও তাদের পরিবার জানে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। বিচারের পর লাশ তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। এটিও তারা (সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার) পায়নি। এজন্যই আজ তারা হত্যার বিচার চাচ্ছে। আমরা আশা করছি তারা জীবিত অবস্থায় এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যাবে। কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরূপ পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার, রক্তের হোলি খেলা যারা করেছেন তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন, যখন তিনি ন্যায়বিচার-সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করছেন, তখনই তার বিরুদ্ধে আবারও ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের বিচারপতির গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের মানুষ কখনোই ভুল করে না। যারা ক্যু করেছে, যারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, শাহাদাতবরণ করতে বাধ্য করেছে, তাদেরও বিচার হবে ইনশাআল্লাহ।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা ঘোষণা করেন, তখন স্বাধীনতা বিরোধীরা অনুধাবন করেছিল এই দাবির মধ্যে স্বাধীনতার বীজ রয়েছে। আর তখন থেকেই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব নিয়ে অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কোনও বইয়ে জিয়াউর রহমানের যুদ্ধ নিয়ে, যুদ্ধ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কোনও তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেন পাওয়া যায় না? কারণ, তিনি যুদ্ধে যাননি। দেশে ফিরে এসে প্রথম দিন থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। সেজন্যই আমি বলি এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি, সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে, গণতন্ত্রের নামে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। এসবই একই সূত্রের কথা। এরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। তাহলে তারা বেছে বেছে কেন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করলো? জাতির পিতাকে কেন তারা হত্যা করলো? কেন জাতীয় চার নেতাকে তারা জেলের ভেতর হত্যা করলো? আজ ওই শক্তি আবারও ওই একই ধারাবাহিকতায় যাচ্ছে। যে দল একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, হত্যা-ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, তাদের স্বাধীন দেশে রাজনীতি করতে দেওয়ার কোনও সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এই শক্তিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান তিনি।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, যত গণহত্যা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে সংঘটিত এই গণহত্যা তার মধ্যে অন্যতম। সেগুলোর মধ্যেই নভেম্বরের এই গণহত্যার পার্থক্য হলো, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তাদের শেষ করে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি প্রভুদের নির্দেশনায় এই গণহত্যা চালানো হয়। এই ঘটনার খুনি জিয়া তার রাজত্ব শুরু করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। সেখানেও তার একই উদ্দেশ্য ছিল। এরপর সে আরেকটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল ৩ নভেম্বর জেলখানায়, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালে একটি জাপানি বিমান হাইজ্যাকের ঘটনায়, যার সঙ্গে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী বা বিমান বাহিনীর কোনও সম্পর্কই নেই, এর সূত্র ধরে পাকিস্তানি প্রভুদের নির্দেশনায় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে। সেখানে প্রায় ১৫শ’ মুক্তিযোদ্ধাকে বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। সেখানে বিচারের বিন্দুমাত্র উপাদানও ছিল না। এমনকি হত্যার পর লাশগুলো তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে দেওয়া হয়নি। এ সময় তিনি সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে দেওয়ার এবং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতির বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমের কন্যা মাহজাবিন খালেদ, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের কন্যা নাহিদ ইজাহার খান এমপিসহ সেদিনের ভুক্তভোগী পরিবারের অনেক সদস্য।