সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ
প্রবাসীদের ইমো আইডি হ্যাক করে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। টাকার বিনিময়ে ইমো হ্যাকের প্রশিক্ষণ দিতো প্রতারকরা। রাজশাহী ও নাটোর জেলার কয়েকজন ইমো হ্যাকের প্রশিক্ষণ দিয়েছে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের বেশ কয়েকজনকে। গত রবিবার ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের মূল হোতাসহ ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল সোমবার (৭ নভেম্বর) সকাল ১২টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন আব্দুল মমিন (১৮), রবিউল ইসলাম রবি (১৮), শহিদুল ইসলাম শহিদ (১৯), সাব্বির (১৮), চান মোল্লা (৩৫) ও আরিফুল ইসলাম (২৬)। তাদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন, হ্যাকিং কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ১৯টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, চক্রের সদস্যরা প্রথমে টার্গেট করা প্রবাসীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়। চক্রটি গত দুই থেকে তিন মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। চক্রটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের টার্গেট করে।
তিনি আরও বলেন, গত ৯ অক্টোবর রাতে ভুক্তভোগী নুরুল ইসলামের বড় ভাই কাতার প্রবাসী কাশেমের ইমু আইডি থেকে একটি মেসেজ আসেÍ”আমার টাকার প্রয়োজন, আমি বিকাশ নাম্বার পাঠাইলে টাকা দিও”। পরের দিন দুপুরে ভুক্তভোগী নুরুল ইসলামের ইমু আইডিতে আরও একটি মেসেজ আসে ‘আজকে বিকাশের রেট কত’ জানতে চেয়ে। এরপর আরও কয়েকটি মেসেজ ও ভয়েজ মেসেজ আসে।
ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম সেই মেসেজের ওপর ভিত্তি করে হ্যাকারদের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে তিনবারে এক লাখ টাকা সেন্ড করে। পরে ভুক্তভোগী তার বড় ভাইয়ের ইমু আইডি বন্ধ পেলে তার ভাবির ইমু আইডি থেকে বড় ভাই আবুল কাশেমকে ৬৫ হাজার টাকা পাঠানোর কথা জানায়।
জবাবে তার বড় ভাই কাতার প্রবাসী কাশেম তার ইমু অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং সেই ইমুর আইডি থেকে বিভিন্ন ইমু আইডিতে মেসেজ দিয়ে টাকা চাওয়ার কথা জানায়। ভুক্তভোগী তার প্রবাসী বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়, তার টাকা হ্যাকাররা সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে। পরে ভুক্তভোগী নুরুল ইসলামের দেওয়া তথ্যমতে গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা পরস্পরের যোগসাজশে তথ্যপ্রযুক্তি অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ ইমু আইডি হ্যাকিং চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া তারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির ইমু আইডি হ্যাক করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করতো। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র ওয়ারী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ডিএমপি’র গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মাদ আশরাফ হোসেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তরিকুর রহমান ও ওয়ারী জোনাল টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আহসান খান উপস্থিত ছিলেন।