শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন

প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি জনগণের কাজে আসছে না-গোবিন্দগঞ্জে আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের ঘর ছাড়ছেন অনেকে

শাহিন খন্দকার গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কর্মসংস্থান না থাকায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ভূমিহীন পরিবারের বসবাসের লক্ষে করা আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের ঘর ছাড়ছেন অনেকে। দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম এ প্রকল্পের ঘরে অনেকে আশায় ঘর বাঁধলেও সেই দারিদ্রতাকে কাটাতে না পারায় গৃহহীন পরিবারগুলো আবারো পূর্বস্থানে ফিরে যাচ্ছেন। ব্যারাকে ভ‚মিহীন পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের লক্ষে সরকারের নেয়া প্রকল্পে, বসতি পরিবারের গুলোর জন্য বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থার লক্ষ্যে ঋণ প্রদান, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ব্যারাক পুনরায় মেরামত, বৃক্ষরোপণ ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কথা থাকলেও আজও সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই প্রকল্পের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগি ও কর্মসংস্থান না থাকায় ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বাসিন্দা রমজান আলী জানান, সেখানে জীবন-জীবিকার জন্য কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় অনেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফিরে যাচ্ছেন। দেখা গেছে ঘর বরাদ্দ পেলেও অনেক পরিবারই ভ‚মিহীন বা গৃহহীন নন। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকেই এসে তারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছেন। গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোতে বসবাসকারীদের পেশাভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। সঞ্চয়ের আগ্রহ সৃষ্টি করাতো দূরের কথা দক্ষ জনশক্তি ও সাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলে নেতৃত্ব, ক্ষমতায়ন, আত্মকর্মসংস্থান, সামাজিক ও শিশুদের প্রতিরোধযোগ্য রোগব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো সহযোগিতাও করা হয়নি। বর্ষা মৌসুমে ভেলায় চরে পারাপার হয়ে যেতে হয় হাট-বাজারে। এ কারণে দুবির্ষহ জীবন-যাপন করতে হচ্ছে প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের। এজন্য পরিবারগুলোর অর্ধেকের বেশি ঘরে শুধু তালাই ঝুলছে। প্রতিটি প্রকল্পে একটি করে কমিউনিটি সেন্টার থাকার কথা অথচ শিশু শিক্ষায় এখানে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রকল্পের আশে পাশে নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি খাস জায়গা থাকলেও মৎস্যচাষে উদ্বুদ্ধ করতে নেই কোন পুকুর, সবজি বাগান বা সামাজিক বনায়নের নেই কোন উদ্যোগ। জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ভূমিহীনদের মাথা গোঁজার ঠাই করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম নামে দু’টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কিন্তু কৌশলে প্রকল্প দু’টি এমন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে যে, সেখানে থাকার মত কোন পরিবেশ নেই। গোবিন্দগঞ্জের প্রায় ২০টি স্থানে নির্মিত প্রকল্প দু’টির সবগুলোই নদীর ধারে অবস্থিত। নির্মিত ঘরগুলো নিন্ম মানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করার কারণে ব্যবহারের আগেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের ঘরগুলো যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা সেখানে যেতে অনিচ্ছুক। ল্যাট্টিন সহ ঘর গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখানে খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নির্মিত প্রত্যেকটি প্রকল্পেরই একই হাল। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রামের প্রকল্পগুলো সবগুলোই অনুপযুক্ত জায়গায় নির্মিত হওয়ায় সরকারের শুধু অর্থ ব্যয়ই হচ্ছে। সাধারণ জনগণ এর কোন সুফল পাচ্ছে না। শুধু প্রকল্পের সাথে জড়িতরাই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১৯- ২০২০ অর্থ বছরে গত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মোঃ মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত ০৩.০২.০০০০.৭০১.০২.০৯৬.১৯-১৫১৩ এক পত্রে ফুলহার-১ প্রকল্পে ৬০টি পুনর্বাসিত পরিবারের মাঝে ২৯হাজার ৪’শ টাকার বিপরীতে ৬০টি নারিকেল, ১২০টি সুপারি ও ৭২০টি ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ, ফুলহার-২ প্রকল্পেও অনুরূপ বরাদ্দ দেয়া হয় এবং বোগদহ প্রকল্পে ৭০টি পুনর্বাসিত পরিবারের মাঝে ৩৪হাজার ৩’শ টাকার বিপরীতে প্রতিটি পরিবারের মাঝে ৭০টি নারিকেল, ১৪০টি সুপারি ও ৮৪০টি ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপণের বরাদ্দ থাকলেও এ তিনটি প্রকল্পে তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। উক্ত বরাদ্দ পত্রে যদিও বৃক্ষরোপণের সচিত্র তথ্যসহ বন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত বিস্তারিত ব্যয় বিবরণী গত ৩০ জুন ২০২০ এর পূর্বে প্রেরণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অপরদিকে, গত ১৮ মে ২০২০ তারিখে মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত ০৩.০২.০০০০.৭০১.০২.০৯৬.১৯-৪৩২ এক পত্রে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদিত “আশ্রয়ণ-২ (দারিদ্র বিমোচন ও পুনর্বাসন)” শীর্ষক প্রকল্প গ্রান্ট নং- ০২ কোড নং- ১০৩০১০২-২২৪০০০৬০০-৭২১৫২০৬ হতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে পুনর্বাসিতদের ঋণ প্রদানকল্পে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে ফুলহার-১ এ ১২টি ব্যারাকের ৬০টি পুনর্বাসিত পরিবারের মাঝে ঋণ বরাদ্দের উদ্দেশ্যে ১৮ লক্ষ টাকা, একই পত্রে ও উদ্দেশ্যে ফুলহার-২ এ অনুরূপ ১২ ব্যারাকে পুনর্বাসিত ৬০টি পরিবারের মাঝে ঋণ বরাদ্দের উদ্দেশ্যে ১৮ লক্ষ টাকা এবং বোগদহ প্রকল্পে (১৪টি ব্যারাকের ৭০টি পরিবারের মাঝে যা ০৪-০৭-২০১৯ তারিখে হস্তান্তরিত) পুনর্বাসিত ৭০টি পরিবারের মাঝে ঋণ বরাদ্দের উদ্দেশ্যে ২১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যা দ্রুত কার্যকর করবে উপজেলা কমিটির সমন্বয়ে বাস্তবায়িত কমিটি। তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রসঙ্গত, বোগদহ প্রকল্পে ১জুন ২০২০ মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত ০৩.০২.০০০০.৭০১.০২. ০৯৬৩১৯-৫১০ পত্রে একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ কাজের ব্যয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উক্ত প্রকল্প স্থান পরিদর্শন শেষে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করার কথা। এ প্রকল্পের কাজটি নির্মাণের শেষ তারিখ ছিল ৩০ জুন ২০২০। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনিয়ে আমার কিছু বলার নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভাল বলতে পারবেন। তার কাছে বিস্তারিত তথ্য আছে। জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, সমবায় অফিসে প্রায় কোটি টাকা একাউন্টে পড়ে আছে। তাদেরকে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কর্মসংস্থানের জন্য কিছু লোক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com